ঢাল-তলোয়ার নেই অথচ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসে আছে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক!
এত দিন পরিবেশ দিবসে প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, জল সংরক্ষণ কিংবা বায়ুদূষণ রোধের কথাই বলা হচ্ছিল। এ বার পরিবেশ দিবসের শপথে ঢুকে পড়ল বুনোরাও। রবিবার আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসে এ বার থিম বেছে নেওয়া হল, বন্যপ্রাণী বাঁচানো। আরও নির্দিষ্ট ভাবে ধরলে, চোরাশিকারি এবং চোরাকারবারিদের হাত থেকে বন্যপ্রাণীদের বাঁচানোই লক্ষ্য। কিন্তু পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে ভাবে দিনের পর দিন এই কারবার বাড়ছে, তাতে ‘থিম’-কে কার্যকর করা কিন্তু কঠিন ব্যাপার।
গোটা বিশ্বে মাদক পাচারের পরে আন্তর্জাতিক অপরাধজগতে বন্যপ্রাণী পাচারই বড় কারবার। এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে নানা মাফিয়া চক্রও। গত বছর থেকে দেশের অপরাধপঞ্জি (এনসিআরবি রিপোর্টেও বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধ নথিভুক্ত হচ্ছে)। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর সেই হিসেব-ই বলছে, বন্যপ্রাণী পাচার এবং ব্যবসার নিরিখে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। দেশের মধ্যে বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধের তালিকায় এ রাজ্যের স্থান ষষ্ঠ। এক বছরে ৪৫টি এমন ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। ২১৯টি মামলা নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে রাজস্থান।
বাস্তবে গত কয়েক বছরে সেই চিত্র দেখাও গিয়েছে। উত্তরবঙ্গে চোরাশিকারিদের হাতে অন্তত সাতটি গন্ডার মারা গিয়েছে। পাচার হওয়ার সময় উদ্ধার করা হয়েছে তক্ষক, পাখি, প্যাঙ্গোলিনের আঁশ, চিতাবাঘের চামড়া, বিরল প্রজাতির কচ্ছপ। বছর কয়েক আগে তো কলকাতা দিয়ে পাচার হওয়ার সময় শিম্পাঞ্জির ছানা ও মার্মোসেট বাঁদরও উদ্ধার করা হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে এ রাজ্যে বন্যপ্রাণকে কী ভাবে বাঁচানো সম্ভব, সেটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন।
বন দফতরের একাংশ বলছেন, এই ধরনের অপরাধের ঠেকানোর ক্ষেত্রে যত পরিমাণ বনরক্ষী এবং নিচু তলার অফিসার থাকা উচিত, তা নেই। ফলে বনের নিরাপত্তায় ফাঁক থেকে যাচ্ছে। সেটাই কাজে লাগাচ্ছে চোরাশিকারিরা। কিন্তু বারবার দরবার করেও সেই ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না। রাজ্যের এক মুখ্য বনপালের কথায়, ‘‘কর্মীর ঘাটতি রয়েছে আর চোরাকারবারিদের সক্রিয়তা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করার কাজটা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।’’ সমস্যার কথা মেনে নিয়েও রাজ্যের পদস্থ বনকর্তাদের দাবি, এত ঘাটতি নিয়েও কিন্তু বন্যপ্রাণ সুরক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। চোরাকারবারিদের পাকড়াও করার জন্য সক্রিয়তা বেড়েছে। বন্যপ্রাণীদের বাঁচাতে আম-জনতার মধ্যে সচেতনতারও প্রসার করা হচ্ছে। রাজ্য বন্যপ্রাণ দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘শহরের মধ্যেও যে বন্যপ্রাণী থাকতে পারে, সেই কথাটাও অনেকে জানেনই না। এ ব্যাপারে প্রচার চালাতে নানা পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলি কার্যকরও করা হচ্ছে।’’
যদিও এই সচেতনতা কতটা কাজে আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বন্যপ্রাণ প্রেমীদের অনেকেই। তাঁদেরই এক জন বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই শহরের মধ্যে থাকা ভাম বা সাপের মতো বন্যপ্রাণীকে মেরে ফেলা হচ্ছে। সব সময় যে চোরাশিকারের জন্য মারা হচ্ছে তা নয়। কিন্তু কারণটা যাই হোক না কেন, প্রাণীগুলি মরছেই। বন্যপ্রাণ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য মেঘনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, কোনও সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে থাকা বন্যপ্রাণীদের বাঁচানো তুলনায় সহজ। কিন্তু শহরে বা গ্রামের মধ্যে যে সব প্রাণীরা ঘুরে বেড়ায় তাঁদের বাঁচাতে হলে নজরদারি অনেক বেশি হওয়া প্রয়োজন। পরিবেশে এই সব প্রাণীদের গুরুত্বটাও আম-জনতার বোঝা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy