অপেক্ষা সম্ভবত আর কয়েক ঘণ্টার। তামিলনাড়ুর তখ্তে শশিকলা বসতে পারবেন কি না— সেই অঙ্কের সমাধান সূত্র হয়তো বেরিয়ে আসতে চলেছে সুপ্রিম কোর্টেই। তা-ও আবার দুই বঙ্গসন্তানের হাত ধরে। আগামিকাল শশিকলার বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় রায় দিতে পারে বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি অমিতাভ রায়ের বেঞ্চ।
শীর্ষ আদালতের এই রায়ের উপরেই এখন নির্ভর করছে শশিকলার ভাগ্য। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলে বা ২ বছরের কম কারাদণ্ড হলে সরকার গড়ার দৌড়ে পনীরসেলভমকে কয়েক মাইল পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবেন তিনি। আর কারাদণ্ড হলে আপাতত ছিটকে যাবেন কুর্সির দৌড় থেকে। সঙ্কট গভীরতর হবে কারাদণ্ডের মেয়াদ দু’বছর বা তার বেশি হলে। সে ক্ষেত্রে আগামী বেশ কয়েক বছরের মতো ইতি পড়বে শশিকলার রাজনৈতিক জীবনে। কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, দু’বছর বা তার বেশি জেলে থাকার পরে আরও ছ’বছর তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। হতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রীও। সে ক্ষেত্রে সরকার গড়ার দৌড় থেকে সরে যেতে হতে পারে শশিকলাকে।
দুই বিচারপতির বেঞ্চে দু’টি ভিন্ন মত উঠে আসতে পারে। তখন কী হবে? আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে মামলাটি যাবে উচ্চতর বেঞ্চে। কর্নাটক হাইকোর্ট এই মামলায় প্রয়াত জয়ললিতা, শশিকলা-সহ সব অভিযুক্তকে অব্যাহতি দিয়েছিল। সেই রায় স্থগিত রাখা হয়নি। ফলে উচ্চতর বেঞ্চে শুনানি চলাকালীন শশিকলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া বা ভোটে লড়ার বাধা থাকবে না।
আরও পড়ুন: হিন্দু জনসংখ্যা কমছে ভারতে, টুইট রিজিজুর, তীব্র বিতর্ক দেশ জুড়ে
রায়ের অপেক্ষার মধ্যেই আজ দিনভর ঘুঁটি সাজাতে তৎপর ছিল দু’পক্ষ। গত ৫ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার পরে আজ প্রথম বার সচিবালয়ে যান পনীরসেলভম। সঙ্গে ছিলেন প্রভাবশালী মন্ত্রী কে পান্ডিয়ারাজন। সেখানে বিভিন্ন দফতরের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, পনীরসেলভম সচিবালয়ে থাকার সময়েই সেখানে যান ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন। সূত্রের খবর, দু’পক্ষের মধ্যে এক দফা বৈঠক হয়। ফলে ডিএমকে পনীরের পাশে দাঁড়াচ্ছে বলে ফের জল্পনা শুরু হয়। তবে পনীর শিবিরকে সাহায্য করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে স্ট্যালিন বলেন, ‘‘এডিএমকে আমাদের রাজনৈতিক শত্রু। তাদের কোনও গোষ্ঠীকেই দল সাহায্য করবে না।’’
ঘর বাঁচাতে মরিয়া শশিকলা আজ ফের মহাবলীপুরমের কাছে গোল্ডেন বে রিসর্টে গিয়ে বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করেন। গত ক’দিন ধরেই একটু একটু করে শশী শিবিরে ক্ষয় হচ্ছে। আজও শশী শিবির ছেড়ে বিরোধী শিবিরে যোগ দেন এক বিধায়ক ও এক সাংসদ। ঘর বাঁচাতে তাই একেবারে জামাকাপড় নিয়েই রিসর্টে পৌঁছে যান শশিকলা। রাতটা সেখানেই কাটাবেন বলে জানিয়েছেন শশী ঘনিষ্ঠরা। বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে কেঁদেও ফেলেন শশিকলা।
গত কাল পনীরসেলভম অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘বিধায়কদের আটকে রাখা হয়েছে। তা না হলে অধিকাংশ বিধায়ক শশী শিবির ছেড়ে চলে আসতেন। অনিচ্ছুক বিধায়কদের আটকাতে সংবাদমাধ্যমের রিসর্টে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।’’ আজ পনীর শিবিরে যোগ দেওয়া বিধায়ক সারাভাননও দাবি করেন, শশিকলা রিসর্টে আসার আগে কোনও মতে পালিয়ে এসেছেন তিনি।
মাদ্রাজ হাইকোর্টে বিধায়কদের আটকে রাখা নিয়ে মামলায় আজ তামিলনাড়ু সরকারের আইনজীবী একটি হলফনামা জমা দেন। তাতে অবশ্য শশীর পক্ষে থাকা ১১৯ জন বিধায়ক জানিয়েছেন যে, তাঁরা স্বেচ্ছায় ওই রিসর্টে রয়েছেন। আর পনীরসেলভমের অভিযোগের জবাব দিতে আজ ওই রিসর্টেই সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন শশী। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলীয় বিধায়করাও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পনীরসেলভম কখনওই বিশ্বস্ত নন। যখন আমি আম্মার শেষকৃত্যে ব্যস্ত, তখন অন্যেরা ক্ষমতা দখলের জন্য ষড়যন্ত্র করছে।’’
সংখ্যার পাশাপাশি জনমতও যে তাঁর পিছনে থাকাটা প্রয়োজন, শশিকলা তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন। সেই কারণে গত কালের পরে আজও ফের আম্মা তাস খেলেছেন শশী। এমনকী, জয়ললিতার সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে প্রবেশের পিছনে তিনিই ছিলেন বলে দাবি করেন শশিকলা। তাঁর কথায়, ‘‘এমজিআর-এর মৃত্যুর পরে আম্মা রাজনীতিতে যোগ দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু আমিই তাঁকে বুঝিয়ে রাজনীতি যোগ দিতে রাজি করাই। আমি ৩৩ বছর আম্মার সঙ্গে ছিলাম। কোনও ভাবেই তাঁর হাতে গড়া এই দল আমি ভাঙতে দেব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy