Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সন্দেহে আইএস
NIA

দিল্লিতে ভিআইপি খুনের ছক! ১৭ জায়গায় হানা, দুই ছাত্র-সহ ধৃত ১০

গোপনসূত্রে খবর পেয়ে বুধবার সকালে দুই রাজ্যের ১৭টি জায়গায় যৌথভাবে হানা দেয় এনআইএ, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা এবং দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল।

জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৪১
Share: Save:

বর্ষবরণে বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। তার আগে বড় ধরনের ফিদায়েঁ হামলাছক বানচাল করল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছেন গোয়েন্দারা। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র বিস্ফোরক। মূলত রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরাই তাদের নিশানায় ছিল। দেশের নিরাপত্তা কেন্দ্র এবং জনবহুল জায়গাতে হামলার ছক ছিল তাদের। পশ্চিম এশিয়ার জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-হার্ব-ই-ইসলাম-এর হদিশ মিলেছে রাজধানী দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশে।দিনভর তল্লাশি চালিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে এমনটাই জানাল এনআইএ।

গোপনসূত্রে খবর পেয়ে বুধবার সকালে দুই রাজ্যের ১৭টি জায়গায় যৌথভাবে হানা দেয় এনআইএ, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা এবং দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল। ১৬ জন সন্দেহভাজনকে জেরা করে, তাদের মধ্যে থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করে তারা। এদের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয় আমরোহা থেকে। বাকি ৫ জনকে উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। তল্লাশি অভিযান শেষ করে এ দিন বিকেলে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেন এনআইএ-র আইজি (সদর) অলোক মিত্তল।

তিনি জানান, দেশে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল হরকত-উল-হার্ব-ই-ইসলাম-এর। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে দিল্লির সিলামপুর, উত্তরপ্রদেশের আমরোহা, হাপুর, মেরঠ এবং লখনউ সহ মোট ১৭টি জায়গায় হানা দেওয়া হয়। তাতে সন্দেহভআজন ১৬ জনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জেরার পর তাদের মধ্যে থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২৫ কোজি বিস্ফোরক সহ পটাশিয়াম নাইট্রেট, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো প্রচুর রাসায়নিক। আইইডি তৈরির জন্য এ গুলি মজুত করা হয়েছিল বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। কারণ ধৃতদের একজনের মোবাইল থেকে আইইডি তৈরির ভিডিয়োও পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন: আইএস মাথাচাড়া দিচ্ছে ভারতে! দিল্লি- উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক তল্লশি এনআইএ-র

এ ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে ১২টি পিস্তল, ১১২টি অ্যালার্ম ঘড়ি এবং প্রায় ১৫০ রাউন্ড বুলেট উদ্ধার হয়েছে। এমনকি দেশীয় প্রযুক্তিততে তৈরি একটি রকেট লঞ্চারও মিলেছে। এ ছাড়াও উদ্ধার হয়েছে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা, ৯১টি মোবাইল ফোন, ১৩৫টি সিম কার্ড, একাধিক ল্যাপটপ এবং অজস্র মেমরি কার্ড। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দাদের ধারণা, খেলনা গাড়ির রিমোট কন্ট্রোল, কলিং বেলের সুইচ এই ধরনের জিনিস দিয়ে দূরনিয়ন্ত্রিত আইইডি তৈরির পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা।

পাশাপাশি এদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে ৫১ টি লোহার পাইপ। জেরা করে জানা গিয়েছে, শক্তিশালী পাইপ বোমাও বানানোর পরিকল্পনা করেছিল তারা। গোয়েন্দাদের দাবি, অতি সম্প্রতি তৈরি হওয়া এই সংগঠনের মাথা আমরোহার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ২৯ বছরের মহম্মদ সোহেল। আমরোহাতে তার আসল বাড়ি হলেও, উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদে ডেরা বেঁধেছিল সে। সেখানেই নিজের দলে টেনেছিল নয়ডা ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র আনস ইউনিসকে। তার মাধ্যমেই আইইডি তৈরির সমস্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি জোগাড় করেছিল সোহেল। আমরোহার বাসিন্দা দুই ভাই সঈদ এবং রইস আহমেদের মাধ্যমে জোগাড় করা হয়েছিল বিস্ফোরক। সঈদের রয়েছে ঝালাই কারখানা। সেখানেই তৈরি করা হয়েছিল রকেট লঞ্চার।এই গোটা চক্রে সামিল ছিল জাফরাবাদের বাসিন্দা, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ছাত্র জুবের মালিকও। তাদের মাধ্যমেই ভুয়ো সিম কার্ড এবং গোটা অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পয়সার লেনদেন করেছিল সোহেল।

এনআইএ সূত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশের একটি মসজিদের ইমাম সাকিম ইফতেকারের মাধ্যমে আনা হয়েছিল ১২টি পিস্তল। দলে সামিল হয়েছিল মহম্মদ আজান এবং ইরশাদ, এদের একজন অটো চালক, অন্যজনের রয়েছে ওষুধের দোকান। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দাদের অনুমান, দিল্লি এবং তার আশেপাশে জনবহুল জায়গায় ফিদায়েঁ হামলা চালানোই ছিল এদের উদ্দেশ্য।

উদ্ধার হওয়া দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি রকেট লঞ্চার।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: একমাত্র বাংলাতেই গণতন্ত্র নেই, মমতা এখন কিম জঙ-উন, তোপ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এত বড় আয়োজন কীভাবে হল? জবাবে এনআইএ জানায়, আইএস-এর দ্বারা অনুপ্রাণিত সংগঠনটি। আইএস-এর হ্যান্ডলারদের সঙ্গে হোয়্যাটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল তাদের। সেখান থেকে যে নির্দেশ আসে, সেই অনুয়ায়ী এগনো হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে ইউপিএ আইনে রাষ্ট্রদোহিতা এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানোর মামলা দায়ের হয়েছে। এই চক্রে আরও কারা জড়িত আছে তা জানার চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE