—ফাইল চিত্র।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করা দুই খানকে একই দিনে অপদস্থ হতে হল পশ্চিমী বিশ্বের হাতে।
প্রথম জন উস্তাদ আমজাদ আলি খান। দ্বিতীয় জন শাহরুখ খান।
প্রথম জনের লন্ডনে অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার জন্য আবেদন করা ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে এসেছে। আর দ্বিতীয় জনকে লস অ্যাঞ্জেলেসের বিমানবন্দরে আটক করে রাখা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। শাহরুখ তবুও ছাড়া পেয়েছেন, ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন মার্কিন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমজাদের ভিসা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় অনুষ্ঠানটিই বাতিল হয়ে গেল। তাঁর দীর্ঘ সঙ্গীতজীবনে এমন ঘটনা এই প্রথম।
ক্ষুব্ধ আমজাদ টুইট করে বলেছেন, ‘‘সেপ্টেম্বরে রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হলে আমার অনুষ্ঠানের কথা ছিল। আমার ব্রিটেনের ভিসা খারিজ হয়ে গিয়েছে। এক জন শিল্পী, যিনি প্রেম ও শান্তির বার্তা প্রসার করেন, তাঁর পক্ষে এটি খুবই বিষাদের। স্তম্ভিত ও বিষণ্ণ।’’ পরে তাঁর স্ত্রী শুভলক্ষ্মী টেলিফোনে বলেন, ‘‘আমরা এই নিয়ে বেশি কথা বলতে চাইছি না। যা ঘটেছে সবাই জানেন। আমরা এটি দেশবাসীর বিবেচনার উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি। তবে এমন ঘটনা ওঁর জীবনে আগে কখনও ঘটেনি।’’ দিল্লিতে ব্রিটেনের হাই কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তির ভিসার আবেদনপত্র নিয়ে মন্তব্য করা হবে না।
গোটা ঘটনায় নিঃসন্দেহে ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নৈকট্য বাড়ানোর জন্য মনমোহন সরকারের সময়েই ‘পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি’ নামে একটি নতুন শাখা খোলা হয়। দেশের ‘সফট পাওয়ার’ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়াটাই যার প্রধান কাজ। এ ক্ষেত্রে এই দুই খান আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বেই ভারতীয় সংস্কৃতি এবং বিনোদনের প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়েছেন। তাঁদের এই হেনস্থার ঘটনা ভারতের কূটনীতি তথা ভাবমূর্তির পক্ষেও যথেষ্ট হানিকর বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভিসা দিল না ব্রিটেন, মর্মাহত আমজাদ
আমজাদের জীবনে ঘটনাটি প্রথম। কিন্তু শাহরুখের নয়। এর আগে নিউ জার্সি এবং নিউ ইয়র্কের পর আজ লস অ্যাঞ্জেলেস বিমানবন্দরে তাঁকে আটকে ছিলেন মার্কিন অভিবাসন দফতরের কর্তারা। আজ শাহরুখ বিষয়টি টুইট করার পর তোলপাড় পড়ে যায় বিভিন্ন মহলে। পরে মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়। হেনস্থার জন্য টুইট করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মা। মার্কিন অভিবাসন দফতরের ব্যাখ্যা, নো ফ্লাই তালিকায় থাকা অন্য এক শাহরুখ খানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলাতেই নাকি এই কাণ্ড ঘটেছে!
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, গোটা কাণ্ডের জন্য মার্কিন পরিষেবা সংস্থার চূড়ান্ত অপদার্থতাকেই ঘরোয়া ভাবে দায়ী করা হচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইয়াসিন ভটকল এবং রিয়াজ ভটকলের মধ্যে যে কোনও এক জন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য শাহরুখ খানের ছদ্মনাম ব্যবহার করত আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে। এমনকী, শাহরুখ খান নামে একটি জাল পাসপোর্টও সে সময়ে বানানো হয়েছিল। সেই নামটি মার্কিন নিরাপত্তা ব্যবস্থার সিস্টেমে আপলোড করা হয়েছিল কিছু সন্দেহজনক ঘটনার পর।
কিন্তু ঘটনা হল, মাঝে এতগুলি বছর কেটে যাওয়ার পরেও সেই ভ্রান্তিমুক্তি ঘটেনি মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগের। ২০০৯-এর অগস্টে নিউ ইয়র্কের নিউ জার্সির নেওয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এবং ২০১২ সালের এপ্রিলে নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে শাহরুখের সঙ্গে এই একই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার চার বছর পরেও দেখা গেল ‘শাহরুখ খান’ নামটিকে নিয়ে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।
বার বার এই ঘটনায় নিজের বিরক্তি চেপে রাখেননি শাহরুখ। টুইটে লিখেছেন, ‘আমি নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন বুঝি এবং সম্মান করি। তবে মার্কিন অভিবাসন দফতরের প্রত্যেক বার এ ভাবে আটকানোটা সত্যিই জঘন্য।’’ এর পর আমেরিকার সহকারী বিদেশসচিব নিশা দেশাই বিসওয়াল দুঃখপ্রকাশ করে লেখেন, ‘বিমানবন্দরে ভোগান্তির জন্য দুঃখিত। এমনকী, মার্কিন কূটনীতিকদেরও এমন ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়।’ পরে রিচার্ড ভার্মা বলেন, ‘সমস্যার জন্য দুঃখিত। এটা যাতে আর ভবিষ্যতে না ঘটে সেটা আমরা দেখছি। তোমার কাজ লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এবং সেটা আমেরিকাতেও।’’ রাষ্ট্রদূতের এই টুইটের পর শাহরুখ অবশ্য তাঁকে ধন্যবাদই দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy