Advertisement
০২ মে ২০২৪
Eknath Shinde

বিজেপির চাপে শিন্ডেসেনা পিছু হটল! বিতর্কিত সেই বিজ্ঞাপন রাতারাতি বদলে গেল মহারাষ্ট্রে

বিতর্কিত বিজ্ঞাপনে প্রকাশিত সমীক্ষায় বলা হয়, মহারাষ্ট্রের ২৬.১ শতাংশ নাগরিক মুখ্যমন্ত্রী পদে একনাথ শিন্ডেকে পছন্দ করছেন। ২৬.১ শতাংশের পছন্দের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস।

Shiv Sena corrects the controversial AD in Maharashtra which projects Eknath Shinde more popular than Devendra Fadnavis

মহারাষ্ট্রে নয়া সরকারি বিজ্ঞাপনে মোদী, শাহ, প্রয়াত বালাসাহেবের সঙ্গে শিন্ডে এবং ফডণবীস। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ ১৫:৩৯
Share: Save:

শেষ পর্যন্ত সহযোগী বিজেপির চাপে পিছু হটল শিন্ডেসেনা। বুধবার সংশোধন করা হল মহারাষ্ট্র সরকারের সেই বিতর্কিত বিজ্ঞাপন। নতুন বিজ্ঞাপনে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের পাশাপাশি, শিবসেনার প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের রাজনৈতিক ‘গুরু’, ঠাণের প্রয়াত শিবসেনা নেতা আনন্দ গীতের ছবি রয়েছে। তাঁদের নীচে রয়েছেন শিন্ডে এবং তাঁর মন্ত্রিসভার উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের ছবি। রয়েছে শিবসেনা এবং বিজেপির নির্বাচনী প্রতীকও।

মহারাষ্ট্র সরকারের একটি বিজ্ঞাপন ঘিরে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার সঙ্গে সহযোগী বিজেপির মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ছিল, ‘ভারতের জন্য মোদী, মহারাষ্ট্রের জন্য শিন্ডে’। সেখানে বর্তমান মরাঠা রাজনীতির ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা’ বলা হয়েছিল শিন্ডেকে। আর সেখানেই আপত্তি জানায় বিজেপি। পদ্মশিবিরের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে নন সে রাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা জোট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস।

প্রসঙ্গত, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্রকে সামনে রেখেই ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটে লড়েছিল বিজেপি। সেই ভোটে মরাঠি ভাষায় স্লোগান তুলেছিল, ‘দেশত নরেন্দ্র, রাজ্য দেবেন্দ্র’ (দেশের জন্য নরেন্দ্র, রাজ্যের জন্য দেবেন্দ্র)। সেই স্লোগানকে অনুকরণ করে শিন্ডের নামে বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই বিজ্ঞাপনে প্রকাশিত সমীক্ষায় বলা হয়, মহারাষ্ট্রের ২৬.১ শতাংশ নাগরিক মুখ্যমন্ত্রী পদে শিন্ডেকে পছন্দ করছেন। ২৬.১ শতাংশের পছন্দের মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস।

ওই বিজ্ঞাপনে ক্ষুব্ধ মহারাষ্ট্র বিজেপির সভাপতি চন্দ্রশেখর বাওনকুলে মঙ্গলবার সরকারি বিজ্ঞাপনের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘কে বেশি জনপ্রিয় তা ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বোঝা যাবে।’’ এর পরেই বুধবার দেখা গেল নতুন বিজ্ঞাপন। বিরোধী দল এনসিপির কার্যকরী সভানেত্রী সুপ্রিয়া সুলে বিষয়টি নিয়ে বিজেপি-শিন্ডেসেনা জোটকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে নতুন বিজ্ঞাপনের নকশা দিল্লি থেকে পাঠানো হয়েছে। করদাতাদের কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেন এমন বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, তা জানতে ইচ্ছে হয়।’’

ঘটনাচক্রে, কিছু দিন ধরেই শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির টানাপড়েন চলছে। সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে শিবসেনার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক করেন শিন্ডে। তাঁর ছেলে তথা শিবসেনার সাংসদ শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এ বার উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও দলকে সম্প্রসারিত করব এবং আমরা ওই রাজ্যগুলিতে নির্বাচনে লড়াই করব।’’ শিন্ডেসেনার এই ঘোষণা বিজেপিকে অসুবিধায় ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, শিন্ডেসেনা আলাদা ভাবে ভোটে লড়লে বিরোধীরা সুবিধা পেতে পারে।

সম্প্রতি শিন্ডে শিবিরের সাংসদ গজানন কীর্তিকরও তাঁদের সঙ্গে বিজেপির টানাপড়েনের কথা জানিয়েছিলেন। বিজেপির কারণে তাঁদের সাংসদ-বিধায়কেরা কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন বলে ইতিমধ্যেই শিন্ডেসেনার অন্দরে অভিযোগ উঠেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালের জুন মাসে শিবসেনা বিধায়ক দলে ভাঙন ধরিয়ে উদ্ধব ঠাকরেকে সরিয়ে বিজেপির সাহায্যে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রিত্ব দখল করেছিলেন শিন্ডে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের পুত্রকে সরিয়ে তাঁর হাতে গড়া দলের দখলও পেয়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। কিন্তু বছর ঘোরার আগেই দু’দলের মধ্যে মতপার্থক্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে।

শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হলেও ফডণবীস পিছন থেকে সরকার পরিচালনা করেন, এই অভিযোগ গোড়া থেকেই। সম্প্রতি একটি যৌন নিগ্রহের অভিযোগকে ঘিরে দু’পক্ষের বিরোধ চরমে ওঠে। কল্যাণ-ডোমবিভলি লোকসভার কেন্দ্রে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি নন্দু জোশীর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় একটি যৌন নিগ্রহের অভিযোগ জমা পড়ে। ওই কেন্দ্রেরই সাংসদ হলেন মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে শ্রীকান্ত। বিজেপির অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিতেই শিন্ডেসেনা ওই অভিযোগ দায়ের করেছে।

শিন্ডে সরকারের মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রবীন্দ্র চহ্বাণ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে কোনও ভাবেই শ্রীকান্ত কিংবা তাঁর পরিবর্তে দাঁড়ানো শিন্ডে গোষ্ঠীর কোনও নেতাকে সমর্থন করবে না বিজেপি। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই শ্রীকান্ত ওই লোকসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। উদ্ধব গোষ্ঠীও ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে শিন্ডেসেনাকে খোঁচা দিয়েছে। গত ১১ মাস ধরে শিন্দে গোষ্ঠীর বিধায়ক-সাংসদদের প্রতি বিজেপি বিমাতৃসুলভ মনোভাব দেখিয়ে চলছে বলে তাদের অভিযোগ। শিন্ডে গোষ্ঠীর সাংসদদের যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়নি, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন সঞ্জয় রাউতেরা। শিন্ডে সরকার পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE