Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Silchar

লন্ঠনের আঁচে ডিমে তা, ২২ দিনে চিঁ-চিঁ

হ্যাচারিতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে ডিম ফোটানো হয়। কিন্তু যেখানে বিদ্যুৎ নেই বা লোডশেডিং বেশি, সেখানে বেশি কাজে আসবে বাপনের উদ্ভাবন।

কম্বলে ঢাকা সেই মেশিন। (ইনসেটে) বাপন দাস। —নিজস্ব চিত্র

কম্বলে ঢাকা সেই মেশিন। (ইনসেটে) বাপন দাস। —নিজস্ব চিত্র

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৩৬
Share: Save:

মুরগির তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। লাগে না বিদ্যুৎও। নির্দিষ্ট সময় পরে ডিম থেকে উঁকি দেবে হাঁস বা মুরগির ছানা। এমনই ‘ইনকিউবেটর’ বানিয়েছেন কাছাড় জেলার দিলখুশ গ্রামের বাপন দাস।

হ্যাচারিতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে ডিম ফোটানো হয়। কিন্তু যেখানে বিদ্যুৎ নেই বা লোডশেডিং বেশি, সেখানে বেশি কাজে আসবে বাপনের উদ্ভাবন। ফলে ন্যাশনাল ইনোভেশন ফাউন্ডেশনের কর্তারাও তাঁর কাজ নিয়ে উৎসাহী। ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ইনোভেশন অফিসার রাকেশ মাহেশ্বরী ফোন করে তাঁর ‘মেশিন’ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন৷ পরে চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে দ্বাদশ দ্বিবার্ষিক বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন৷ আগামী মার্চে ওই প্রতিযোগিতায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাপন৷

ভাবনার শুরু লকডাউনের প্রথম থেকে। আইনের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষা। কোভিড বিধির দরুন বাড়ি থেকে বেরনো বারণ। তখনই চলল ডিম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। জুনেই মিলল সাফল্য। প্রথম ব্যাচে ৫০০ ডিম থেকে ৩২৮টি হাঁস-মুরগির জন্ম হয়। বাপন জানান, এ কোনও মেশিন নয়। বিশেষ কারিগরিও কিছু নেই। প্রয়োজন শুধু দর্মা (ধাড়িয়া) দিয়ে মোড়া দু’টি ড্রাম ও দু’টি লন্ঠন। আর কিছু ধানের তুষ, কম্বল, থার্মোকল।

বাপন জানান, টিন তাপ ধরে রাখে বলে ড্রামকে বেছে নিয়েছেন। ডিমগুলিকে ভাল করে ধুয়ে এর মধ্যে তারিখ লিখে নেন প্রথমে। পরে দু’টি ড্রামে তুষ, থার্মোকল দিয়ে ডিম আর জ্বলন্ত লণ্ঠন বসানোর ব্যবস্থা করলেই হল। প্রথম ড্রামে ছ’দিন রাখার পরে এক-একটি ডিম তুলে পরীক্ষা করতে হবে। যেগুলিতে ভ্রূণ টের পাওয়া যায়, সেগুলিকে দ্বিতীয় ড্রামে রাখতে হয়। বাকিগুলি প্রথম ড্রামে আরও কিছু দিন রাখা যেতে পারে, বা বের করে খেয়ে নেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় ড্রামে ভ্রূণযুক্ত ডিমগুলি আর নাড়াচাড়া করা যাবে না। ২০ থেকে ২২ দিন পরে চিঁ-চিঁ শুরু হবে।

বাপন গত ছ’মাসে কয়েক হাজার বাচ্চা ফুটিয়েছেন। দশ শতাংশের বেশি ডিম নষ্ট হয় না। হাঁস-মুরগি নিয়ে দিনরাত লেগে থেকে বাপন আরও একটি সমস্যাকে সাশ্রয়ের পথে পরিণত করেছেন। হাঁস-মুরগির মলে খুব দুর্গন্ধ হয়। কিন্তু ওই মলের সঙ্গে আনাজের খোসা ও বিভিন্ন জৈব বর্জ্য পরিমাণ মতো মেশালে, তা থেকে নির্দিষ্ট সময় পরে লার্ভার জন্ম হয়। ওই লার্ভা হাঁস-মুরগির উপাদেয় খাদ্য।

বাপন আর কালো কোট পরে এজলাশে দাঁড়াতে চান না। হাঁস-মুরগি পালন করার পাশাপাশি কম পুঁজিতে নিয়মিত কর্মসংস্থান সৃষ্টিই তাঁর লক্ষ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Silchar Incubator Eggs Chicken Electricity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE