পরিবর্তন আসবে না প্রত্যাবর্তন হবে, সেই তর্ক আছেই। তবে তার মীমাংসা হওয়ার আগে, প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটের মাঝে বিহার জুড়ে এখন চর্চায় একটাই কথা। ‘বাম্পার ভোটিং’!
বিধানসভা নির্বাচনে এ বারে প্রথম দফার ভোট অতীতের নজির ছাপিয়ে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে শনিবার যে চূড়ান্ত হিসেব দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রথম দফায় প্রদত্ত ভোটের হার আরও খানিকটা বেড়েছে। এই বিপুল ভোট কিসের ইঙ্গিত, সেই প্রশ্নে শাসক ও বিরোধী শিবিরের দাবি ও পাল্টা দাবি আছে। তবে রাজ্যের নানা প্রান্তে রাস্তায় নামলে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) সঙ্গে এই ভোটের যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে।
বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ৬ নভেম্বর রাজ্যে ১৮টি জেলার ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটদানের হার ৬৫.০৮%। জেলার সব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরে পাওয়া হিসেবের ভিত্তিতে চূড়ান্ত পরিসংখ্যান এমনই দাঁড়িয়েছে। এই ভোটদানের হার এখনও পর্যন্ত বিহারে রেকর্ড। ভোটের দিন কমিশন ৬৪.৬৬% ভোট পড়ার কথা জানিয়েছিল। দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার যাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছিলেন। সিইও দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বিহারে ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৭.২৯% এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৫৬.২৮%।
বিহার পশু বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট-কেন্দ্র। এখানেই ভোট দেন লালুপ্রসাদ, রাবড়ী দেবী ও তেজস্বী যাদবেরা। —নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা ভোটের ঠিক আগেই জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিহারে হয়ে গিয়েছে এসআইআর-এর কাজ। সেই প্রক্রিয়ায় বাদ গিয়েছে ৪৭ লক্ষের বেশি নাম। রাজ্যে গত বছর লোকসভা নির্বাচনের সময়ে যেখানে প্রায় ৭ কোটি ৯০ লক্ষ ভোটার ছিলেন, এই বিধানসভা নির্বাচনে সেখানে তালিকায় আছেন ৭ কোটি ৪২ লক্ষ। ভোটদাতার মূল ভিত্তি নেমে আসায় ভোট দানের শতাংশ হিসেব তুলনামূলক ভাবে বাড়ছে, এমন একটা ব্যাখ্যা রাজনেতিক শিবিরের অন্দরে আছে।
তারই পাশাপাশি স্পষ্ট কথা বলে দিচ্ছেন ভোটদাতাদের একাংশ। এসআইআর-এ বহু মহিলা ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। আবার প্রথম দফার ভোটের দিন বুথে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বহুসংখ্যক মহিলা। দানাপুরের অনিতা সিন্হার কথায়, ‘‘ভোটার তালিকায় নাম থাকবে কি না, তা-ই নিয়েই তো এত দৌড়োদৌড়ি, কাগজ খুঁজে আনা। তার পরে ভোটটা তো দিতেই হবে! নইলে আর এত কিছুর মানে কী!’’ অরওয়লের সুনীল সিংহ বলছিলেন, ‘‘কর্নাটকে কাজ করি। ছটের পরে এ বার ফিরিনি, একেবারে ভোট দিয়ে যাব বলে। থাকে না, ভোট তো দিতে আসে না বলে নালিশ করে তালিকা থেকে আবার যদি নাম কেটে দেয়!’’ অর্থাৎ সদ্য হয়ে যাওয়া এসআইআর ভোটদাতাদের একাংশকে বাড়তি তাগিদ দিয়েছে। রাজ্যের সিইও বিনোদ কুমার গুঞ্জিয়ালের মতে, ‘‘ভোটার তালিকা পরিমার্জনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ কমিশন করেছে। কোনও বৈধ ভোটদাতা যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ না থেকে যান, সেটাই কমিশনের মূল মন্ত্র। মানুষ যে ভাবে সাড়া দিয়েছেন, সেটা খুবই ইতিবাচক।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এই ভোটদানের হারকে তাঁদের পক্ষে ‘ইতিবাচক’ দেখছেন। সীতামঢ়ী ও চম্পারনের বেতিয়ায় প্রচারে এসে মোদীর দাবি, এনডিএ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরছে, সেটাই জনতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। আবার জেডিইউ-এর দাবি, নীতীশের ‘সুশাসনে’র জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভোট বিহারে হয়েই থাকে। আরজেডি-র মনোজ কুমার ঝা’দের পাল্টা প্রশ্ন, কমিশনকে সামনে রেখে যারা এসআইআর -এর নামে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখাল, দলে দলে তাদেরই কেন ভোট দেবেন মানুষ?
এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে সমস্তিপুরের সরায়রঞ্জন কেন্দ্রে একটি কলেজের বাইরে ভি ভি প্যাটের কিছু স্লিপ রাস্তায় পড়ে থাকার অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক বেধেছে। জেলা নির্বাচনী আধিকারিক (অর্থাৎ জেলাশাসক) অবশ্য সরেজমিনে দেখে এসে জানিয়েছেন, ওগুলো ‘মক পোলিং’-এর সময়ের স্লিপ। তবে সে সব রাস্তায় পড়ে থাকায় কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে এআরও -কে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছে কমিশন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)