Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Women's empowerment

Women's Empowerment: সামাজিক যোগাযোগই মহিলাদের ক্ষমতায়নের চাবিকাঠি: সমীক্ষা

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতে ৬০ শতাংশ মহিলা একা বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা গ্রামের বাইরে যাওয়ার সুযোগটুকুও পান না।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২৪
Share: Save:

সামাজিক যোগাযোগের পরিধি শক্তিশালী করার মাধ্যমে কী ভাবে মহিলাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব, তা এক সমীক্ষার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ এস অনুকৃতি ও তাঁর সহযোগী।

আমেরিকায় এক জন মহিলার গড়ে আট জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে ছবিটা একেবারে আলাদা। বিশেষত, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরাখণ্ডে গ্রাম্য মহিলাদের মধ্যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অনেকটাই বেশি। তাঁদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকেন এক থেকে তিন জন। পরিসংখ্যানের এই ফারাকেই লুকিয়ে রয়েছে দু’দেশের মহিলাদের ক্ষমতায়নের পার্থক্যের রহস্য!

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতে ৬০ শতাংশ মহিলা একা বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা গ্রামের বাইরে যাওয়ার সুযোগটুকুও পান না। প্রায় এক চতুর্থাংশ মহিলাদের তো মহিলা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা কিংবা আড্ডা দেওয়ার সুযোগটুকুও মেলে না। এক চতুর্থাংশ মহিলার স্বামীই স্ত্রীর উপরে নজরদারি চালান।

উন্নয়নশীল দেশে যেখানে বাজার এবং প্রতিষ্ঠানগুলি কার্যত দুর্বল, সেখানে সামাজিক মাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক ও মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে জানিয়েছেন অনুকৃতি। তাঁর বক্তব্য, এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিমা, চাকরি, অধিকার, স্বাস্থ্য পরিষেবা, প্রযুক্তির মতো বিষয়ে তথ্য পেতে সাহায্য করে। যা মহিলাদের সন্তান ধারণ এবং পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক একটি অনুষ্ঠানে ভারতীয় মহিলাদের সামাজিক জীবন নিয়ে যে গবেষণা চালিয়েছেন, তা তুলে ধরেছেন অনুকৃতি। উত্তরপ্রদেশের ৬৭১ জন মহিলার সঙ্গে কথা বলেছেন গবেষকেরা। তাঁদের জীবনে সামাজিক যোগাযোগের বিষয়ে জানতে প্রত্যেককেই প্রশ্ন করা হয়েছিল, স্বামী ও শাশুড়ি বাদে পাঁচ জনের নাম জানাতে। যাঁদের সঙ্গে তাঁরা স্বচ্ছন্দে ব্যক্তিগত বিষয় ও পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। দেখা গিয়েছে, পাঁচ জন তো দূর অস্ত্‌, গড়ে এক জনের নামই বলতে পেরেছেন ওই মহিলারা।

গবেষক দলটির মতে, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মহিলাদের জীবনের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলছে। বিশেষত পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে। যে মহিলাদের উপরে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, তাঁদের অর্ধেকই জানিয়েছেন, তাঁরা একটির বেশি সন্তান চান না। কিন্তু আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অনুসরণ করেন মাত্র ১৯ শতাংশ মহিলা। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগের পরিধি যত সংকীর্ণ হবে, আধুনিক তথ্য, নিয়ম ততই অধরা থাকবে মহিলাদের কাছে। তারই প্রভাব পড়বে ব্যক্তিগত জীবনে।

শুধু অল্পবয়সি গৃহবধূদের ক্ষেত্রে নয়, তাঁদের শাশুড়িরাও এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। সেই পরম্পরাই চলছে সমানে!

৮২% ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কোনও মহিলা নিজে নন, তাঁর শাশুড়ি চাইছেন পুত্রবধূর যেন একাধিক সন্তান থাকে। এ ক্ষেত্রে পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষাই প্রবল। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিশেষত শাশুড়িরাই পুত্রবধূদের বাড়ির বাইরে যাওয়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনে বড় বাধা। পুত্রবধূর গতিবিধির উপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপেই অভ্যস্ত তাঁরা। এর ফলেই সামাজিক বিচ্ছিন্নতার শিকার হচ্ছেন মহিলারা। তারই মাসুল গুনতে হচ্ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে, বিশেষত পরিবার পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে।

অনুকৃতি ও তাঁর সহযোগী উত্তরপ্রদেশের একটি পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত ক্লিনিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে একটি পরীক্ষা চালান। মহিলাদের তিনটি দলে ভাগ করেছেন তাঁরা। প্রথম দলের মহিলাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য একটি ‘ভাউচার’ দেওয়া হয়। এই ভাউচারের মাধ্যমে বিনামূল্যে পরিবার পরিকল্পনা পরিষেবা পাবেন তাঁরা। যার মধ্যে রয়েছে বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণের সুযোগ, সঙ্গে ক্লিনিকে সর্বোচ্চ তিন বার যাতায়াতের খরচ।

দ্বিতীয় দলে ভাউচার যাঁরা পাবেন, তাঁরা প্রথম দলের মতো সুযোগ তো পাবেনই উপরন্তু প্রতি বার তাঁদের সঙ্গে যাওয়া সর্বোচ্চ দু’জন বন্ধুও (মহিলা) একই সুবিধা পাবেন।

তৃতীয় দলকে কোনও ভাউচার দেওয়া হয়নি। তবে তিনটি দলের মহিলাদেরই আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং পরিবার পরিকল্পনার সুবিধা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়।

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তৃতীয় দলের তুলনায় প্রথম দু’দলের যে সমস্ত মহিলারা ভাউচার পেয়েছিলেন, তাঁরা পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে বেশি বার গিয়েছেন। সঙ্গে আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন।

দ্বিতীয় দলর মহিলারা পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে গিয়েছেন প্রথম ও তৃতীয় দলের তুলনায় অনেক বেশি।

এর ফলে গরিব পরিবারের মহিলা, যাঁরা সার্বিক ভাবে দুর্বল এবং যাঁদের পরিবার পরিকল্পনার নিয়ে আলোচনা করার মতো কোনও ‘বন্ধু বা সঙ্গী’ ছিল না, তাঁদের মধ্যেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগও।

গরিব পরিবারের মহিলা, যাঁরা কোনও সঙ্গী বা বন্ধুর মাধ্যমে ভাউচার পেয়েছিলেন তাঁদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর সংখ্যা ১৩ শতাংশ বিন্দু বেড়েছে প্রথম দলের মহিলাদের তুলনায়।

এই সমীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এক জন মহিলার পছন্দ নির্ধারণে বাড়ির বাইরের অন্য মহিলা বা প্রতিবেশীরও যে বিরাট ভূমিকা রয়েছে, তা স্পষ্ট উঠে এসেছে। যা মহিলাদের ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করে। ভারতের মাত্র একটি জেলায় এই পরীক্ষা করা হলেও বৃহত্তর ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ বদলে দিতে পারে ভারতীয় মহিলাদের অভিমুখ। গতানুগতিক বৃত্তের বাইরে হেঁটে মহিলাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দিশা দেখাতে পারে নতুন পথের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women's empowerment Social Communication
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE