মায়ের হাত ধরে পাহাড় থেকে নেমে আসছিল ন’বছরের তনুজ। কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়েছিলেন তার বাবা। কিন্তু সেখানে পৌঁছোনোর আগেই চোখের সামনে বাবাকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছিল সে। দেখেছিল বাবার কপালে গুলির আঘাত, রক্তের ধারা। মৃত্যুর আগে বাবার মুখে জল দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। সেই তনুজ বুধবার সকালের খবরে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা শুনেছে। আর ঠিক করে নিয়েছে, বড় হয়ে সে-ও ভারতীয় সেনায় যোগ দেবে। হয়ে উঠবে বীর সৈনিক। জঙ্গিদের নিকেশ করাই হবে তাঁর জীবনের লক্ষ্য।
পহেলগাঁওয়ে গত ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলায় যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তনুজের বাবা প্রশান্ত সতপথী। ওড়িশার বালেশ্বর থেকে তাঁরা কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়েছিলেন। পহেলগাঁওয়ের সেই ঘটনার জবাবেই মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত করেছে ভারত। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই অভিযানে খুশি ছোট্ট তনুজ। সাংবাদিকদের সে বলেছে, ‘‘বুধবার সকাল থেকে আমরা খবর দেখছিলাম। আমি আর আমার মা খুব শান্তি পেয়েছি। ভারতীয় সেনার জন্য আমরা গর্বিত।’’ এর পরেই তনুজ বলে, ‘‘আমি ঠিক করেছি, সেনাবাহিনীতে যোগ দেব। সেনাবাহিনী আমার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছে। আমি এখন থেকে পরিশ্রম করব, ভাল করে পড়াশোনা করব, যাতে সেনায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পাই। আমি পাকিস্তানি জঙ্গিদের শাস্তি দিতে চাই।’’
আরও পড়ুন:
মা প্রিয়দর্শিনী আচার্যের পাশে দাঁড়িয়ে তনুজ আরও বলেছে, ‘‘আমি যদি কখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই, ওঁকে বলব, আমার মতো আর কাউকে যেন বাবাকে হারাতে না-হয়। বাবা কী জিনিস, আমি এখন বুঝতে পারছি। পহেলগাঁওয়ের মতো জায়গায় নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি করতেও বলব আমি, যাতে জঙ্গিরা ভারতে ঢুকতেই না-পারে।’’
ছেলের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য যা করতে হয় করবেন, জানিয়েছেন তাঁর মা। প্রিয়দর্শিনী বলেন, ‘‘ও যদি সেনায় যোগ দিতে চায়, আমি ওকে সে ভাবেই তৈরি করব। দেশবাসী ওকে আশীর্বাদ করবে। সে দিনের ঘটনার পর থেকে আচমকা যেন ও অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। যেন ওর বয়স বেড়ে গিয়েছে।’’
পহেলগাঁওয়ের সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে তনুজের চোখেমুখে আতঙ্ক স্পষ্ট। সে বলে, ‘‘আমি আর মা যাচ্ছিলাম, বাবা হঠাৎ পড়ে গেল। ছুটে গিয়ে দেখলাম, কপাল থেকে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। মা জিজ্ঞেস করল বাবা জল খাবে কি না। বাবা বলল, হ্যাঁ। আমি তখন বাবাকে জল খাইয়ে দিলাম।’’