ভারতে অ্যাপ্লের জিনিস তৈরি করা কি সত্যিই বন্ধ হয়ে যাবে? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের পর থেকে সেই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছিল। যদিও তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা নেই বলেই প্রাথমিক ভাবে আভাস মিলেছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, ভারতে বিনিয়োগের বিষয়ে অ্যাপ্লের আগে যা পরিকল্পনা ছিল, তা-ই রয়েছে। অ্যাপ্লের জিনিস তৈরির জন্য অন্যতম বড় উৎপাদনকেন্দ্র হিসাবে ভারতকেই পছন্দ করছে এই আমেরিকান বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা। যদিও অ্যাপ্ল-এর তরফে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি মেলেনি।
পিটিআই জানিয়েছে, ট্রাম্পের মন্তব্যের পরেই ক্যালিফর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালির কুপারটিনো অঞ্চলে অ্যাপ্ল-এর সদর দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকেরা। পিটিআই সূত্রে খবর, অ্যাপ্ল-এর আধিকারিকেরা তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন, ভারতে বিনিয়োগের বিষয়ে সংস্থার পরিকল্পনা অটুট রয়েছে। অ্যাপ্লের জিনিসের অন্যতম প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র হিসাবে ভারতকেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ বিষয়ে অ্যাপ্ল-এর প্রতিক্রিয়া জানতে ইমেল করেছিল পিটিআই, তবে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
বৃহস্পতিবার সকালেই (ভারতীয় সময় অনুসারে) ট্রাম্প জানান, ভারতে আর অ্যাপ্লের জিনিস তৈরি না-করার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন অ্যাপল কর্তা টিম কুককে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, বুধবারই কুকের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। সেই সময় ভারতে অ্যাপলের জিনিস তৈরি করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। ট্রাম্প নিজেই জানান বুধবার কুককে তিনি বলেছেন, “আমি শুনছি আপনি ভারতে জিনিস তৈরি করছেন। আমি চাই না আপনি ভারতে জিনিস তৈরি করুন… আমি টিমকে বলেছি, আমরা আপনাদের সঙ্গে ভালই ব্যবহার করছি। বছরের পর বছর ধরে আপনারা চিনে যে উৎপাদনকেন্দ্র তৈরি করেছেন, তা আমরা সহ্য করেছি। কিন্তু আপনারা ভারতে যে কারখানা তৈরি করছেন, তা আমাদের পছন্দ নয়। ভারত নিজেই নিজেদের খেয়াল রাখতে পারে এবং তারা বেশ ভাল ভাবেই চলছে।”
‘অ্যাপ্ল’ একটি আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থা হলেও তাদের বেশির ভাগ জিনিসই এত দিন ধরে আমেরিকার বাইরেই তৈরি হয়ে এসেছে। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুসারে, ‘অ্যাপ্ল’-এর ৮০ শতাংশেরও বেশি জিনিস চিনে তৈরি হয়। ওই মার্কিন বহুজাতিক সংস্থার প্রায় ৮০ শতাংশ আইপ্যাড তৈরি হয় চিনে। অ্যাপ্ল যত কম্পিউটার তৈরি করে, তার অর্ধেকেরও বেশি তৈরি হয় চিনে। অ্যাপ্ল-এর যত আইফোন রয়েছে, তার প্রায় ২০ শতাংশ বর্তমানে ভারতে তৈরি হয়। ভারতে তৈরি হওয়া আইফোন বেশির ভাগই বিক্রি হয় আমেরিকার বাজারে। তবে ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই চাইছেন, ভারত-সহ অন্য দেশে জিনিস তৈরি করা বন্ধ করুক অ্যাপ্ল। গত এপ্রিলে সে কথা স্পষ্ট করেছিল হোয়াইট হাউস।
আরও পড়ুন:
সম্প্রতি আমেরিকায় ৫০ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাপ্ল। আগামী চার বছর ধরে আমেরিকায় নিজেদের পরিকাঠামা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে এই বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থার। টেক্সাসে একটি নতুন উৎপাদনকেন্দ্র তৈরি করা থেকে শুরু করে মিশিগান, ক্যালিফর্নিয়া, অ্যারিজ়োনা, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলিনা-সহ বিভিন্ন জায়গায় সংস্থার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তবে ভারত, চিন বা অন্য দেশগুলিতে উৎপাদন বন্ধের কোনও ঘোষিত পরিকল্পনা নেই অ্যাপ্লের। বরং, ভারত প্রসঙ্গে কুকের সর্বশেষ ঘোষণায় এ দেশে অ্যাপ্লের বিনিয়োগে আরও গতি আসার আভাস রয়েছে। সম্প্রতি কুক জানিয়েছিলেন, জুন ত্রৈমাসিকে আমেরিকার বিক্রির জন্য বেশির ভাগ আইফোন তৈরি হবে এ দেশেই।
বস্তুত, ভারতে নিজেদের জিনিস তৈরি করলে তা অ্যাপ্লের জন্যও লাভজনক। ভারতে জিনিস তৈরি করা অ্যাপ্লের জন্য তুলনামূলক ভাবে কম খরচসাপেক্ষ। সেই কারণে অনেক দিন ধরেই উৎপাদনক্ষেত্রে ভারতমুখী হতে শুরু করেছে অ্যাপ্ল। বর্তমান ফক্সকন, টাটা ইলেকট্রনিক্স এবং পেগাট্রন ইন্ডিয়া— এই তিন সংস্থা ভারতে আইফোন উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি তেলঙ্গানায় এয়ারপড তৈরির জন্যও একটি উৎপাদনকেন্দ্র তৈরি করেছে ফক্সকন।