Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Teesta Waters

রাজ্যে বিজেপি এলে কি তিস্তা চুক্তিতে সায়?

পশ্চিমবঙ্গে যখন নির্বাচন কড়া নাড়ছে, তখন ঢাকার সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে এই তিস্তা প্রসঙ্গ মমতার প্রতি মোদীর বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৫৩
Share: Save:

গত কাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের পর, ফের তিস্তার জলে ঢেউ উঠল। দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত কোনও বিকল্প প্রস্তাব নয়, ২০১১ সালে দু’দেশের সরকার তিস্তা জল বণ্টন সংক্রান্ত যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল, সেটিই দ্রুত সই করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে মোদী সরকার যে ধারাবাহিক ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটিও বলা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে যখন নির্বাচন কড়া নাড়ছে, তখন ঢাকার সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে এই তিস্তা প্রসঙ্গ মমতার প্রতি মোদীর বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে এই প্রশ্নও উঠে আসছে, আগামী বিধানসভা ভোটে জিতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কি উত্তরবঙ্গের নেতৃত্ব বা সাংসদেরা বাংলাদেশের সঙ্গে জল বণ্টনে রাজি হবেন? যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দু দেশের সরকার ২০১১ সালে তিস্তার জল বণ্টনের প্রশ্নে অন্তর্বর্তী চুক্তিতে রাজি হয়েছিল। সেটি এ বার দ্রুত সই করার দিকে জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের জানিয়েছেন, ভারত সরকারের ধারাবাহিক প্রয়াস চলছে এবং এ ব্যাপারে ভারতের প্রতিশ্রুতি অটুট।’

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, গত কাল যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশের প্রস্তাবকে মান্যতা দিয়ে ২০১১ সালের উল্লেখ রাখা হয়েছে ঠিকই, তবে এতে মোদী সরকারেরও সায় ছিল। তিন বছর আগে হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তার বদলে বিকল্প জল বণ্টন চুক্তির উল্লেখ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। মমতার প্রস্তাব ছিল, তোর্সা-জলঢাকা-রায়ডাক নিয়ে ফের নদী কমিশন গড়ে আলোচনা শুরু করা হোক। বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ হয় কেন্দ্র। হতাশ ঢাকারও বক্তব্য ছিল, তিস্তা ও তোর্সার অববাহিকা এক নয়। তিস্তার জল শুকিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে এই নদীর অববাহিকায় একটা বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া ভূপ্রকৃতিগত কারণে তোর্সার বাড়তি জল আনাটাও সম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল থেকে তোর্সা ছাড়া জলঢাকা ও রায়ডাক নদী বাংলাদেশে বয়ে এসেছে। কিন্তু খুব বেশি দূর না এসেই তারা বিভিন্ন নদীতে মিশে যাওয়ায় তিনটি নদীর অববাহিকা ছোট। এই কারণে এগুলি বাংলাদেশে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নদী হিসাবেই বিবেচিত হয় না। তোর্সা, জলঢাকা বা রায়ডাকে ভারত বাড়তি জল দিলেও তিস্তা অববাহিকার দুর্দশা ঘুচবে না।

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, ২০১৭ সালে মমতার বিকল্প জল বণ্টনের প্রস্তাব দেওয়াই একমাত্র নয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরে ভারত-বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি সই করার বিষয়টি যখন চূড়ান্ত হয়ে যায়, তখন থেকেই বিরোধিতা করছেন মমতা। মনমোহনের সঙ্গে তাঁর বাংলাদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও, তিনি যাননি। মনমোহনের বাংলাদেশ সফরের কয়েক দিন আগে বিদেশসচিব শিবশঙ্কর মেনন মমতার সঙ্গে দেখা করে খসড়া চুক্তিটি (যেটার উল্লেখ গত কাল করা হয়েছে যৌথ ঘোষণাপত্রে) সম্পর্কে জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে। সূত্রের খবর, ওই খসড়ায় রাজি ছিলেন না মমতা।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, অদূর ভবিষ্যতে অর্থাৎ বাংলায় ভোটের পর তিস্তার জল কোন দিকে গড়াবে সেটা ভবিষ্যৎই বলবে। কিন্তু বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যে কোনও ধরনের ছিদ্র দিয়ে ড্রাগনের ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। সূত্রের মতে, বাংলাদেশ চিনের সঙ্গে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে। চিনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবিত ঋণটি তিস্তা অববাহিকার সামগ্রিক পরিচালন ব্যবস্থা, এবং তিস্তা নদীর বিভিন্ন প্রকল্পকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সঙ্গে যুক্ত। নদী অববাহিকা ঠিক ভাবে ব্যবহার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, গ্রীষ্মে খরা মোকাবিলা করার জন্য এই পুঁজি কাজে লাগানো হবে। বাংলাদেশ এবং চিনের বাণিজ্য সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা বেশ কিছু বছর ধরেই সাউথ ব্লকের নজরের মধ্যে রয়েছে। ওয়াকিবহাল শিবিরের মতে, তিস্তার জন্য ঋণ দেওয়ার বিষয়টি নিছকই উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নয়। এর চরিত্র আলাদা। তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের আবেগ এবং গত এক দশক ধরে ভারতের সঙ্গে ঢাকার টানাপড়েনের বিষয়টিকে বেজিং কৌশলগত ভাবে কাজে লাগাতে চাইছে কি না, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE