তাকে মৃত বলেই জানতেন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা। গত ১২ এপ্রিল কাশ্মীরের কিশতোয়ারের ছত্রুতে দু’জন পাকিস্তানি জঙ্গি ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হওয়ার পরে জানানো হয়েছিল, নিহতদের মধ্যে রয়েছে জইশ-ই-মহম্মদের পাকিস্তানি কমান্ডার সইফুল্লা। কিন্তু এখন গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, সইফুল্লা হয়তো মারা যায়নি গত মাসে। গত কাল থেকে সেই ছত্রুতেই বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষ চলছে। সেনার এক জওয়ানও মারা গিয়েছেন সংঘর্ষে। জঙ্গিদের কথোপকথনে আড়ি পেতে এবং গোয়েন্দা-তথ্যের ভিত্তিতে এখন বাহিনীর কর্তারা সন্দেহ করছেন, সইফুল্লা হয়তো শুধু জীবিতই নয়, গত কাল থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে সম্ভবত সে-ও লড়ছে ভারতীয়বাহিনীর বিরুদ্ধে!
মনে করা হচ্ছে, সইফুল্লা ছাড়াও জইশের আরও অন্তত তিন জন জঙ্গি ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে ছত্রুতে। একে-৪৭, এম-৪ কার্বাইনের মতো আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালাচ্ছে তারা। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে তাদের কাছে। গত কাল ভোর থেকে ছত্রুর সিংপোরা গ্রামের কাছে শুরু হয়েছিল এই সংঘর্ষ। জঙ্গি-ঘাঁটির খবর পেয়ে এলাকা ঘিরে তল্লাশি শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। সংঘর্ষে আহত হন সেনার তিন জন জওয়ান। তাঁদের অন্যতম, মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের বাসিন্দা গায়কর সন্দীপ পান্ডুরঙ্গ (৩২) মারা যান। বাহিনীর কর্তাদের সন্দেহ, সীমান্ত পেরিয়ে সন্দেহভাজন পাকিস্তানি জইশ জঙ্গিরা দু’টি দলে ভাগ হয়ে সিংপোরা এবং তার কয়েক কিলোমিটার দূরে বেগপোরাতে ঘাঁটি গেড়েছে। গোটা এলাকা আপাতত সিল করে দিয়েছে সেনা, সিআরপি ও পুলিশের স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ (এসওজি)-এর যৌথ বাহিনী। অভিযানে তাদের সাহায্য করতে উড়িয়ে আনা হয়েছে প্যারা কমান্ডোদের একটি বাহিনীকে।
তবে সবচেয়ে বড় চমক হল ‘মৃত’ সইফুল্লার বেঁচে থাকার ইঙ্গিত। চেনাব উপত্যকায় জইশের কার্যকলাপের দায়িত্বে থাকা সইফুল্লা অনেক দিন ধরেই বাহিনীর নিশানায় ছিল। বাহিনীর এক কর্তা বলেন, ‘‘গত বার যথেষ্ট পোক্ত প্রমাণ হাতে নিয়েই বলা হয়েছিল যে, ওই জঙ্গি নেতা মারা পড়েছে। কিন্তু গোয়েন্দা-তথ্য ও আড়ি পেতে শোনা কথোপকথনের ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে, সে হয়তো বেঁচে গিয়েছে এবং আবার দলবল জুটিয়ে হাজির হয়েছে।’’
পহেলগামে হামলা চালানো জঙ্গিরা পির পঞ্জালের পাহাড়ি জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়ে এখনও নিরাপত্তা বাহিনীর হাত এড়িয়ে চলেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। গত কাল থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষটি যেখানে চলছে, ছত্রুর সেই এলাকাটিও বিপদসঙ্কুল পাহাড় আর তুষারের কারণে অত্যন্ত দুর্গম। অভিযানে তাই ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন। ভূপ্রকৃতি ও প্রতিকূল আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে আরও বেশ কিছু জঙ্গি এখানে লুকিয়ে থাকতে পারে বলে শঙ্কা বাহিনীর কর্তাদের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)