বিহারে নতুন শরিকে সমস্যা না হলেও, যত ভোট এগিয়ে আসছে, তত এনডিএ-তে মনোমালিন্য বাড়ছে পুরনো দুই শরিক-বিজেপি ও জেডিইউ-তে।
কারণ, মুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থী হিসাবে নীতীশ কুমারের নাম ঘোষণা এড়িয়ে যাওয়া। ফলে ক্ষুব্ধ জেডিইউ সমর্থকেরা আদৌও শরিক এনডিএ-র, বিশেষ করে বিজেপির প্রার্থীকে ভোট দেবেন কি না, তা নিয়ে বিজেপি শিবিরে সংশয় তৈরি হয়েছে। তেমনই জেডিইউয়ের আশঙ্কা, চলতি নির্বাচনে আসনপ্রাপ্তিতে বিজেপিকে বড় দল হিসাবে দেখতে চাওয়া আরএসএস নেতৃত্ব আদৌও নীতীশদের সমর্থনে ভোট ময়দানে সক্রিয় হবেন কি না, তা নিয়েও! সব মিলিয়ে ভোট যত এগোচ্ছে, তত আস্থার অভাব প্রকট হচ্ছে দুই শরিকে।
আজ বিরোধী মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসাবে বেছে নেওয়া আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বিষয়টি নতুন করে খুঁচিয়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মহাজোটের নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী মুখ চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এনডিএ বলুক, তাদের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী কে?’’ আরজেডির বক্তব্য, ভোটের পরেই নীতীশকে ছেঁটে ফেলার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি। তাই নীতীশকে জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। যদিও বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ জোট বিহারে লড়াইয়ে নেমেছে।’’ বিরোধীদের মতে, জিতলে নীতীশ যে মুখ্যমন্ত্রী হবেন— সেই কথা কেন বিজেপি নেতারা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না, তার ব্যাখ্যা চাইছেন বিহারবাসী।
এনডিএ-র মধ্যে বাড়তে থাকা এই সংশয়ের প্রভাব পড়ছে নিচুতলায়। নীতীশকে এ ভাবে কোণঠাসা করে দেওয়া জেডিইউ সমর্থকেরা আদৌও ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। বিশেষ করে বিজেপি ও এলজেপি নেতা চিরাগ পাসোয়ানের ঘনিষ্ঠতা, জোটের ছোট শরিক হওয়া সত্ত্বেও চিরাগকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ায় ক্ষুব্ধ কট্টর জেডিইউ নেতা-সমর্থকেরা। মনোমালিন্য এতটাই যে, বিহারে বিজেপির যে ১০১ জন প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের জেডিইউ সমর্থকেরা আদৌও ভোট দেবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। নীতীশের হেনস্থার জবাব দিতে জেডিইউ সমর্থকদের ভোট যদি বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে যায়, সে ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্টো দিকে, বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানেও সক্রিয় আরএসএস নেতৃত্ব। রাজনীতিকদের মতে, আরএসএস নেতৃত্ব কেবল বিজেপি প্রার্থীর জয় নিশ্চিতে পক্ষপাতী। শরিক জেডিইউ প্রার্থীদের জেতা বা হারার প্রশ্নে নৈতিক ভাবে কোনও দায় নেই সঙ্ঘের। ফলে আরএসএস যে তাঁদের প্রার্থীদের জেতার প্রশ্নে বিশেষ সক্রিয় হবে না, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন জেডিইউ নেতৃত্ব। কারণ দীর্ঘমেয়াদিভিত্তিতে তাতে আরএসএসের লাভ হওয়ার নেই। তা ছাড়া, এ যাত্রায় ক্রমাগত জোট পাল্টানো নীতীশ নির্ভরতাও কমানোর পক্ষে গেরুয়া শিবির। জেডিইউ শিবির বুঝতে পারছে, জোটে লড়লেও, অস্তিত্ব বাঁচানোর এই লড়াই একাই লড়তে হবে নীতীশদের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)