মণিপুরে হিংসা শুরুর ২৮ মাস পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রথম রাজ্যে গেলেও, এখনই মণিপুর থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের কোনও পরিকল্পনা মোদী সরকারের নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, ‘মণিপুরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তৎক্ষণাৎ রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নেওয়া হবে।’ সরকারি সূত্রের মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এখনও যথেষ্ট সময় লাগবে। মণিপুরে স্বাভাবিক নিয়মে ২০২৭-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আর বছর দেড়েক সময় বাকি। সে ক্ষেত্রে একেবারে বিধানসভা নির্বাচনের পরেই রাজ্যে নতুন সরকার গঠন হতে পারে।
মোদী সরকারের এই অবস্থানে বিপাকে পড়েছেন মণিপুরের বিজেপি নেতারা। মেইতেই এবং কুকিদের সংঘর্ষের জেরে মণিপুরে ২০২৩-এর মে মাস থেকে হিংসা শুরু হয়েছিল। তার ৮৬৪ দিন পরে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুরে গিয়েছেন। সেখানে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন। তবে তাঁর বক্তৃতায় কবে থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন উঠবে, তার কোনও দিশা মেলেনি।
মণিপুরে হিংসা শুরুর প্রায় ২১ মাস পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ ইস্তফা দিয়েছিলেন। তার পরেই কেন্দ্র মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে। গত অগস্ট মাসে সংসদে বিল এনে সেই রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। মণিপুরের বিজেপি নেতারা অবশ্য রাষ্ট্রপতি শাসন মেয়াদ বাড়ানোর বিপক্ষে ছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবস্থানে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ইতিমধ্যেই মণিপুরের বিজেপির একাধিক নেতা দল ছেড়েছেন।
তবে মণিপুরের বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়নি। তা ‘সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন’-এ রাখা হয়েছে। যার অর্থ প্রয়োজনে এই বিধানসভা জিইয়ে ফের সরকার গঠন করা যায়। কিন্তু তা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও সংশয়ে। ইম্ফল উপত্যকার এনডিএ বিধায়করা রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নির্বাচিত সরকার গঠনের দাবি তুলেছেন। কেন্দ্র মনে করছে, এখনও সেই সময় আসেনি। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, মণিপুর এখনও মেইতেই অধ্যুষিত ইম্ফল উপত্যকা এবং কুকি অধ্যুষিত পাহাড়ি এলাকায় বিভক্ত। দুই এলাকার সীমানায় কড়া নিরাপত্তা বসিয়ে ‘বাফার জ়োন’ তৈরি হয়েছে। মেইতেইরা ইম্ফল ছেড়ে কুকিদের এলাকায় যেতে পারেন না। কুকিরা ইম্ফলের বিমানবন্দরও ব্যবহার করতে পারেন না। কেন্দ্রীয় সরকার মেইতেই এবং কুকিদের সঙ্গে আলাদা ভাবে আলোচনা শুরু করলেও তাঁদের এখনও এক টেবিলে বসানো যায়নি। কুকিরা পৃথক বিধানসভা-সহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুলছেন।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর ইম্ফল ও চূড়াচাঁদপুরের লোক দেখানো রোড-শো আসলে মণিপুরের মানুষের সমস্যা থেকে পালানোর চেষ্টা। মোদী শেষ বার ২০২২-এর জানুয়ারিতে মণিপুর গিয়েছিলেন। নির্বাচনের প্রচারে। তারপরে ৪৬ বার বিদেশ সফরে গিয়েছেন। ৮৬৪ দিনে মণিপুর যাওয়ার সময় পাননি। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)