ফাইল চিত্র।
মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে গত কালই সুর চড়িয়েছিলেন তেলুগু কবি-অধ্যাপক ভারাভারা রাও। আজ খোলা চিঠি লিখে মুখ খুললেন ফরিদাবাদে গৃহবন্দি সুধা ভরদ্বাজও। মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁর মাওবাদী-যোগ প্রমাণে কাল যে চিঠির কথা উল্লেখ করেছে, তা ভিত্তিহীন এবং বানানো বলে দাবি করলেন সমাজকর্মী সুধা। দেশ জুড়ে সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের ধরপাকড়ের আজ ক়ড়া নিন্দা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষায় কেন্দ্রের সরকার আদৌ দায়বদ্ধ কি না, সে প্রশ্নও তুলে দিয়েছে তারা।
পুণের পুলিশ ২৮ অগস্ট দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভারাভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেরা, গৌতম নওলাখা ও ভের্নন গঞ্জালভেসের মতো অধ্যাপক ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। এর আগে গত জুনে গ্রেফতার করা হয়েছিল অধ্যাপক সোমা সেন, সমাজকর্মী রোনা উইলসন, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, সুধীর ধাওয়ালে ও মহেশ রাউতকে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার কথা। এঁদের সঙ্গে মাওবাদী সংযোগের মামলায় নতুন গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করে পুণে পুলিশ চার্জশিট পেশ করতে আরও ৯০ দিন সময় চেয়েছে।
ধরপাকড়ের ব্যাখ্যা দিতে গিয়েই কাল সাংবাদিক বৈঠকে মহারাষ্ট্র পুলিশের এডিজি পরমবীর সিংহ। জানান, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এঁরা যে ‘ষড়যন্ত্র’ করছিলেন, তার জোরালো প্রমাণ আছে। সেই সূত্রেই কমরেড প্রকাশ নামে এক মাওবাদী নেতাকে লেখা সুধার একটি চিঠির উল্লেখ করেন তিনি। সুধা জানাচ্ছেন, ওই চিঠি আদৌ তাঁর লেখা নয়। হাতে লেখা খোলা চিঠিতে সুধার দাবি, ‘‘এ সবই সাজানো। আমার মতো মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের ফাঁসিয়ে মাওবাদী তকমা দেওয়ার জন্যই এই চিঠি বানানো হয়েছে।’’ এই ‘ভুয়ো’ চিঠি পুণের আদালত কিংবা ফরিদাবাদের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পেশ করা হয়নি বলেও অভিযোগ তাঁর। জুলাইয়ে সুধার লেখা এমন একটি চিঠির উল্লেখ করেছিল একটি টিভি চ্যানেল। সে বারও অভিযোগ উড়িয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস দেন সুধা।
আজ খোলা চিঠিতে, মাওবাদীদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন সুধা। ‘‘মোগায় কোনও কর্মসূচির জন্য আমি কখনও কাউকে ৫০ হাজার টাকা দিইনি। কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, এমন কোনও কমরেড অঙ্কিতকেও চিনি না,’’ লিখেছেন সুধা। তাঁর দাবি, মাওবাদী তকমা দিয়ে গণতান্ত্রিক সভা-সেমিনার, প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে বেআইনি ঘোষণা করাই নরেন্দ্র মোদী সরকারের আসল লক্ষ্য। সাজানো মামলার অভিযোগ তুলেছেন ভের্নন গঞ্জালভেসের পরিবারও। সমাজকর্মী ও আইনজীবী সুসান আব্রাহামের পরিবার বলছে, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় আসল অপরাধীদের আড়াল করতে পুলিশ ভুয়ো চিঠি তুলে ধরছে। হায়দরাবাদ থেকে ভারাভারা রাওয়ের ভাইপো বেণুগোপাল পুলিশের সাংবাদিক বৈঠককেই আদালত অবমাননা বলে দাবি করেছেন।
এই ধরপাকড়ের সমালোচনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাধারণ সম্পাদক কুমি নায়ডু বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের তরফে যাঁরা জবাবদিহি চাইছেন, ভারত ক্রমেই তাঁদের কাছে বিপজ্জনক এক দেশ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা বহু লড়াই করে পাওয়া স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার যখন দুর্বল হয়ে যায়, তার ফল ভোগ করতে হয় সকলকেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy