কোনও ভয়ঙ্কর অপরাধে দোষী সাব্যস্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বদলে নির্দিষ্ট সংখ্যক বছরের জন্য কারাদণ্ড দিতে পারে কি সাংবিধানিক আদালত (হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট)? তা বিবেচনা করে দেখবে শীর্ষ আদালত। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, প্রাথমিক ধারণা অনুসারে, মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে নির্দিষ্ট মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। তবে নিম্ন আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পরে সাংবিধানিক আদালত নির্দিষ্ট মেয়াদ বেঁধে দিতে পারে কি না, তা বিবেচনা করে দেখতে চায় সুপ্রিম কোর্ট।
কেরলে এক নাবালিকাকে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্তকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। ২০১৪-১৫ সালে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তিনি একাধিক বার যৌন নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত ছিলেন এক গির্জার যাজক। নিম্ন আদালত আমৃত্যু কারাদণ্ড দিলেও পরবর্তী সময়ে কেরল হাই কোর্ট সেই রায় পরিবর্তন করে। আসামিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয় হাই কোর্ট। সঙ্গে এ-ও জানিয়ে দেয়, সাজার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে কোনও ভাবেই ছাড়া পাবেন না তিনি। ওই রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি গবই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ হাই কোর্টের সাজা স্থগিত রেখেছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মামলাটি যতদিন বিচারাধীন রয়েছে, ততদিন হাই কোর্টের সাজা স্থগিত থাকবে। মামলাটি বিচারাধীন থাকাকালীন অভিযুক্তের জামিনের আর্জিও মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
সাধারণত, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে ১৫ বছর সাজা কাটানোর পরে সাজা মকুবের আবেদন করা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে নির্দিষ্ট করে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে হাই কোর্ট। ওই সাজার মেয়াদ কমানো হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। নিম্ন আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পরে সাংবিধানিক আদালত এ ভাবে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। দেশের প্রধান বিচারপতির প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের প্রশ্ন, “কোনও সাংবিধানিক আদালত কি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে নির্দিষ্ট মেয়াদের কারাদণ্ডে বদলে দিতে পারে?”
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কোনও সাংবিধানিক আদালত যদি মনে করে কেউ জঘন্য অপরাধে দোষী, কিন্তু সেই অপরাধ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতো ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়— প্রাথমিক ধারণা অনুসারে শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রেই মকুবহীন নির্দিষ্ট মেয়াদের সাজা দেওয়া যায়। অভিযুক্তকে কী সাজা দেওয়া হবে, তা স্থির করার সময় এই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
কেরলের এই ঘটনার ক্ষেত্রে কেন ২০ বছরের মকুবহীন কারাদণ্ড দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিযুক্তের আইনজীবী। সাধারণত মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে সাংবিধানিক আদালতগুলি ২০ বছর বা ৩০ বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদের জেল বা আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়ে থাকে। এ অবস্থায় হাই কোর্টের দেওয়া সাজাকে স্থগিত রেখে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যদি ওই সাজাকেই মান্যতা দেওয়া হয়, তার পরেও অভিযুক্ত ইতিমধ্যে ১০ বছর জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন। অর্থাৎ হাই কোর্টের দেওয়া সাজার অর্ধেক ইতিমধ্যে কাটিয়ে ফেলেছেন তিনি। সেই কারণেই তাঁর সাজা স্থগিত রেখে জামিনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।