Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাহুল, জিজ্ঞাসা করুন, মাম্মা কত পেয়েছিলে কুত্রোচ্চির কাছে: সুষমা

ললিত মোদী ইস্যুতে ফের নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এর পাশাপাশি, এত দিন তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব কংগ্রেসকে কার্যত তুলোধনা করলেন তিনি। এবং সেটা করতে গিয়ে গাঁধী পরিবারের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়লেন না বিজেপি-র প্রবীণ এই নেতা। ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা থেকে বফর্স কেলেঙ্কারি— বাদ দিলেন না কিছুই। রাহুল গাঁধীকে পরামর্শ দিলেন, ‘‘নিজের পরিবারের ইতিহাস পড়ে আসুন। তার পর জিজ্ঞেস করুন, ‘মাম্মা, কেন এমনটা হয়েছিল!’’ সুষমার ইস্তফার দাবিতে অচল সংসদ যে দিন সচল হল, সে দিন কংগ্রেসের তুমুল হইচই, সনিয়ার রাগে ফেটে পড়া এবং সুষমার ব্যক্তিগত আক্রমণ— সব মিলিয়ে বুধবারের লোকসভা ছিল আক্ষরিক অর্থেই উত্তাল।

লোকসভায় শাণিত সুষমা। ছবি: পিটিআই।

লোকসভায় শাণিত সুষমা। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ১২:৪৩
Share: Save:

সুষমার ইস্তফার দাবিতে অচল সংসদ যে দিন সচল হল, সে দিন কংগ্রেসের তুমুল হইচই, সনিয়ার রাগে ফেটে পড়া এবং সুষমার ব্যক্তিগত আক্রমণ— সব মিলিয়ে বুধবারের লোকসভা ছিল আক্ষরিক অর্থেই উত্তাল।

ললিত মোদী ইস্যুতে এ দিন ফের নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এর পাশাপাশি, এত দিন তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব কংগ্রেসকে কার্যত তুলোধনা করলেন তিনি। এবং সেটা করতে গিয়ে গাঁধী পরিবারের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়লেন না বিজেপি-র এই প্রবীণ নেতা। ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা থেকে বফর্স কেলেঙ্কারি— বাদ দিলেন না কিছুই। রাহুল গাঁধীকে পরামর্শ দিলেন, ‘‘নিজের পরিবারের ইতিহাস পড়ে আসুন। তার পর জিজ্ঞেস করুন, ‘মাম্মা, কেন এমনটা হয়েছিল!’’

এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাহুলও। তিনি জানান, গত কাল সুষমার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তিনি রাহুলের হাত ধরে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘বেটা, আমার উপর তোমার এত রাগ কেন?’’ জবাবে রাহুল বলেন, ‘‘আপনার উপর তো রাগ নেই।’’ এর পর রাহুল সুষমার উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম, আমি সত্য বলছি। আপনার চোখটা নীচে নেমে গিয়েছিল।’’ রাহুলের পাল্টা আবার বলেন অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী এমন এক জন বিশেষজ্ঞ, যাঁর কোনও বিষয়ে কোনও জ্ঞানই নেই।’’

এর আগে মানবিকতার কারণ দেখিয়ে নিজেকে ফের এক বার নির্দোষ বলে দাবি করেন সুষমা। স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের উদ্দেশে জানান, ললিত মোদীর অসুস্থ স্ত্রীকে তিনি সাহায্য করেছেন। অস্ত্রোপচারের জন্যই তাঁকে পর্তুগালে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। এর পরেই দিনের পর দিন তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন সুষমা। কংগ্রেস আমলের দু’টি সবচেয়ে স্পর্শকাতর ঘটনা, বফর্স কেলেঙ্কারি এবং ইউনিয়ন কার্বাইড কেলেঙ্কারির কথা উল্লেখ করেন তিনি। আর সেই প্রসঙ্গে তুলে আনেন কুত্রোচ্চি এবং অ্যান্ডারসনের নাম। প্রশ্ন তোলেন, কেন অ্যান্ডারসনকে বিদেশে পালাতে সাহায্য করেছিল কংগ্রেস? জবাবও তিনি দিয়েছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ অর্জুন সিংহের আত্মজীবনীকে উদ্ধৃত করে তিনি জানান, অ্যান্ডারসনকে বিদেশে যেতে দিয়ে তার বিনিময়ে রাজীবের এক বন্ধুর ছেলেকে বিদেশের জেল থেকে ছাড়ানো হয়েছিল।

ললিত বিতর্কে বারে বারেই উঠে এসেছে সুষমার মেয়ের কথা। অভিযোগ, তিনি ললিতের কোম্পানির আইনি পরামর্শদাতা ছিলেন। এ দিন সুষমা দাবি করেন, তাঁর মেয়ে ললিতের কাছ থেকে একটি পয়সাও নেয়নি। উল্টে বফর্স কেলেঙ্কারির কথা তুলে রাহুলের উদ্দেশে সুষমা বলেন, ‘‘বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন, মাম্মা কুত্রোচ্চির কাছ থেকে কত টাকা পেয়েছিলে?’’ একই সঙ্গে তিনি কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিদম্বরমের স্ত্রী বিরুদ্ধে সারদা মামলা লড়ার জন্য এক কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন।

বেশ কিছু দিন ধরে ললিত বিতর্কে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক বাক্য বাণ ছুড়েছেন সনিয়া-রাহুল-সহ কংগ্রেসের একাধিক নেতা। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সংসদে সরব হওয়ার পাশাপাশি অন্য বিরোধী দলগুলিকেও নিজেদের পাশে টেনে এনেছে কংগ্রেস। প্রথম দিকে নিজেরে নির্দোষ বলে দাবি করে লোকসভায় সুষমা দাবি করেছিলেন মানবিক কারণেই তিনি ললিতকে সাহায্য করেছেন। কংগ্রেস তাতে থামেনি। সংসদ অচল রেখে তারা দিনের পর দিন চাপ দিয়ে গিয়েছে সরকারের উপর। সঙ্গে রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর নামও পদত্যাগের তালিকায় জুড়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিতে আগাগোড়া চুপ ছিলেন। গত সপ্তাহে বিহারে গিয়ে তিনি এই তিন জনেরই প্রশংসা করেন। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, দলের ভিতরে তিন নেতাকে চাপে রেখে বাইরে মোদী বিজেপি-র অখণ্ড রূপটাকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন। তবে, এ দিন যে ভাবে সুষমাকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় নেমে খেলতে দেখা গিয়েছে, তাতে ওই অংশটি জানাচ্ছেন রীতিমতো হোমওয়ার্ক করেই আজ মাঠে নেমেছিলেন বিদেশমন্ত্রী।

এ দিন দুপুরে ললিত ইস্যুতে ১৫০ মিনিট আলোচনার অনুমতি দেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। শুরুতেই সুষমা স্বরাজের ইস্তফা দাবি করে সরকার পক্ষকে তুলোধনা করেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে। পাশাপাশি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করেন তিনি। দিনের শুরুতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ লোকসভায় বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বাহানা বানিয়ে পালিয়ে যাবেন না। আলোচনা করুন।’’ পাল্টা চ্যালেঞ্জের সুরে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে। খাড়্গে জানান, সুষমা তো সেই মায়াকান্না কেঁদে বলবেন তিনি নির্দোষ। মানবিক কারণেই সাহায্য করেছিলেন ললিতকে। তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘‘ললিত ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর কী বক্তব্য? তিনি কেন বিবৃতি দিচ্ছেন না?’’

রাহুলও এ দিন প্রধানমন্ত্রীকেও এক হাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘গাঁধীর তিনটি বাঁদরের কথা আমরা সুনেছি। তারা খারাপ বিষয় বলত না, দেখত না, শুনত না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তেমন। তিনি সত্য বলেন না, দেখেন না, শোনেনও না।’’

এ দিন সকালে অধিবেশনের শুরুতে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীরা ললিত বিতর্কে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের পদত্যাগ দাবি করতে থাকেন। এর পরই সুষমা জানান, আলোচনার জন্য তিনি প্রস্তুত। বিরোধীরা এই ইস্যুতে বেশ কয়েক দিন ধরেই সুষমার পদত্যাগ দাবি করে আসছে। যার জেরে সংসদের বাদল অধিবেশন কার্যত ধুয়েমুছে গিয়েছে। আগামিকালই সেই অধিবেশনের শেষ দিন। ললিত ইস্যুতে আলোচনা করতে গিয়ে খাড়্গে সংসদ অচলের দায় সরকারের উপর চাপিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকার অনমনীয় ভাব না নিলে সভার কাজ পণ্ড হত না। সভা পণ্ডের দায় সরকারের।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘বিদেশমন্ত্রী তো নিজেই মেনে নিয়েছেন, ললিতকে সাহায্য তিনি করেছেন। আর সেই জন্যই তো আমরা তাঁর পদত্যাগ চাইছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE