Advertisement
E-Paper

স্কুলে গরহাজির, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন শিক্ষক!

শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দিয়ে স্কুলে গরহাজির থেকে, না পড়িয়েই নিয়মিত বেতন তুলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলেন সাবির আহমেদ বড়ভুইয়া। অভিভাবকদের অভিযোগে শেষ পর্যন্ত কেঁচো নয়, বেরিয়ে পড়ল সাপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৪

শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দিয়ে স্কুলে গরহাজির থেকে, না পড়িয়েই নিয়মিত বেতন তুলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলেন সাবির আহমেদ বড়ভুইয়া। অভিভাবকদের অভিযোগে শেষ পর্যন্ত কেঁচো নয়, বেরিয়ে পড়ল সাপ। আপাতত বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর। শুরু হয়েছে বিশদ তদন্ত। তার ফলাফলের উপরেই নির্ভর করছে সাবিরের ভাগ্য।

কাছাড় জেলার বিদ্রোহীপারের মানুষ অনেকদিন ধরে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে উৎকণ্ঠায়। মাত্র একজন শিক্ষক ছিলেন ১৪৪ নং বিদ্রোহীপার নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেই জন্মেজয় শর্মা প্রধানশিক্ষক হলেও ঠিক মতো নাকি কানে শোনেন না। গত বছর সেই স্কুলেই নিয়োগ করা হয় ধনেহরির সাব্বির আহমদ বড়ভুইয়াকে। টেট পাশ করা শিক্ষক। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর নিয়োগে এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তা ঘোচেনি। কারণ সাব্বির আহমেদ স্কুলে যান না বললেই চলে। যেদিন যেতেন, একবারে হাজিরা খাতায় সই করে দিয়ে বেতন তুলে চলে আসতেন। শিক্ষা বিভাগে অভিযোগ জানান অভিভাবকরা। নালিশ যায় জেলাশাসকের কাছে। জেলাশাসকের নির্দেশেই তদন্তে নামেন সোনাই ব্লক প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লিপিকা সিংহ।

তদন্তে নেমে তিন দিন স্কুল পরিদর্শনে যান লিপিকাদেবী। সাবিরকে একদিনও সেখানে পাননি। এলাকাবাসীরাই জানান, তিন দিন কেন, ৩০ দিন এলেও লিপিকাদেবী এই শিক্ষকের দেখা পাবেন না। কারণ তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং (এনআইটি)-তে পড়েন। এনআইটি-তে চিঠি লিখে সাবিরের ব্যাপারে তথ্য চায় শিক্ষাবিভাগ। লিপিকাদেবী জানান, রেজিস্ট্রার লিখিত ভাবেই জানিয়েছেন, সাবির আহমেদ বড়ভুইয়া তাঁদের প্রতিষ্ঠানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। এ বার পঞ্চম সেমিস্টার। এর পরই কারণ দর্শানোর নোটিশ ধরানো হয় তাঁকে। কিন্তু সন্তোষজনক জবাব মেলেনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হরেন্দ্রকুমার হাজরিকা বলেন, ‘‘টেট পরীক্ষায় পাশ করে যখন অস্থায়ী শিক্ষক পদে চাকরির নিযুক্তিপত্র গ্রহণ করেছিল, তখনই এনআইটি-তে পড়ার কথা লিখিতভাবে জানানো সাবির আহমেদের উচিত ছিল। চাকরির পর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি বাধ্যতামূলক। বড়ভুইয়া কোনওটাই করেননি। এর উপর স্কুলে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত হাজিরা খাতায় সই করে বেতনও তুলছিলেন!’’

সাবির আহমেদের যুক্তি, প্রধানশিক্ষক জন্মেজয় শর্মাকেই নাকি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলে মনে করেন। তাঁকে তিনি এনআইটি-তে পড়ার কথা জানিয়েছিলেন। অনুপস্থিত থেকে বেতন তোলার কথা তিনি অবশ্য মানতে চাননি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া এবং স্কুলে পড়ানো হাজরিকাবাবুর কথায়, এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি বেতন গ্রহণ করেছেন। তা নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে মার্চ থেকে তাঁর বেতন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনুমান, প্রধানশিক্ষকের যোগসাজস ছাড়া এই কাণ্ড ঘটতে পারে না। তাই তাঁকেও তদন্তে ডাকা হচ্ছে। জন্মেজয়বাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি কানে শুনতে পাই না। সাবির কখন কী বলেছেন, না বলেছেন, আমি বুঝতে পারিনি।’’ এ ছাড়া, অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় সই করার জন্য সাবির নাকি তাঁকে ভয় দেখাতেন। এ সব কথা বিশ্বাস করতে চান না লিপিকা দেবী, হরেন্দ্রকুমার হাজরিকারা।

engineering Teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy