Advertisement
E-Paper

হুমকি, অপহরণ অব্যাহত, চলছে রাজনীতি

যৌনপল্লি থেকে সোজা অমিতাভ বচ্চনের সামনের ‘হট সিট’-এ বসে রীতিমতো নিজের কাজের তারিফ কুড়িয়েছেন তিনি। তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন ‘মর্দানি’ রানি মুখার্জিও। বিয়ের নাম করে নারী পাচারের বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে সচেতনতা অভিযান চালিয়েছেন তিনি।

দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৯

যৌনপল্লি থেকে সোজা অমিতাভ বচ্চনের সামনের ‘হট সিট’-এ বসে রীতিমতো নিজের কাজের তারিফ কুড়িয়েছেন তিনি। তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন ‘মর্দানি’ রানি মুখার্জিও। বিয়ের নাম করে নারী পাচারের বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে সচেতনতা অভিযান চালিয়েছেন তিনি। সেই ফতিমা খাতুনকে এ বার খুনের হুমকি দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। ফরবেশগঞ্জ থানায় আজ এফআইআর দায়ের করেছেন ফতিমা।

ফতিমার অভিযোগ, ‘‘গত সাত-আট দিন ধরে তিনটি নির্দিষ্ঠ ফোন নম্বর থেকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে গুরুত্ব দিতে চাইনি। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে থানায় অভিযোগ না করে পারলাম না।’’ নারী পাচারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনে ফতিমার খ্যাতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ছড়িয়েছে। বিহারের বিভিন্ন যৌনপল্লি থেকে হাজার খানেক মেয়েকে উদ্ধার করতে সাহায্য করেছেন তিনি। এর আগেও তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতদিন ভয় না পেলেও এ বারে তিনি ভীত। পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন। পুলিশের ধারণা, এর পিছনে নারী পাচারকারী চক্র জড়িত রয়েছে। যদিও পুলিশ এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু করে উঠতে পারেনি।

এরই পাশাপাশি, পটনার ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত এক ছাত্র অপহরণের ঘটনা গত ২৪ ঘণ্টায় সামনে এসেছে। পটনার বাহাদুরপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন পরিবারের লোকেরা। গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে ছাত্রটি নিখোঁজ। ওই ছাত্রের বাবা দুবাইয়ে কর্মরত। নিজের ছেলের মোবাইল থেকে তাঁর কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। পুলিশ অপহরণের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। এ ছাড়াও, গতকাল সন্ধ্যায় প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা ধর্মেন্দ্রপ্রসাদ যাদব ও তাঁর গাড়ির চালককে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। গাড়িটিও ছিনতাই করা হয়। পরে পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করে।

পর পর খুন, অপহরণ ও নানা অপরাধে জেরবার নীতীশ প্রশাসন। বিহার পুলিশ বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। পুলিশ কর্তাদের দাবি, শীঘ্রই সাফল্য মিলবে। অন্য দিকে, অপরাধের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে রাজনীতির আখড়ায় নেমেছে শাসক-বিরোধী উভয়েই। পরস্পরের বিরুদ্ধে বিবৃতির লড়াই শুরু হয়েছে। গত কাল তলচি পরিস্থিতি নিয়ে লালুপ্রসাদের একটি মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছে বিজেপি। লাগাতার অপরাধ-বৃদ্ধির পিছনে লালু যেমন পরোক্ষে বিজেপি-র যোগসাজশের অভিযোগ করেন তেমনই তাঁর বক্তব্য ছিল, বিগত সরকারের (পড়ুন, নীতীশ সরকারের) নীতির জন্যই অপরাধ বেড়েছে। নীতীশের আমলে রাজ্য পুলিশের ডিজি ছিলেন অভয়ানন্দ। লালু অভিযোগ করেন, অভয়ানন্দই পুলিশের মনোবল ভেঙে দিয়েছেন। সেই মন্তব্যের সরলীকরণ করেছেন বিজেপি নেতা নন্দকিশোর যাদব। তিনি বলেন, ‘‘নীতীশ-সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সামনে এসে পড়েছে। লালুপ্রসাদ অপরাধ বাড়ার জন্য নীতীশ কুমারকেই আসলে দায়ী করছেন।’’

এই রাজনৈতিক চাপান-উতোরের মাঝখানেই পুলিশ অবশ্য প্রতিটি ঘটনার জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে তদন্তে নেমেছে। দ্বারভাঙা, হাজিপুর ও মুজফ্ফরপুরের খুনের তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক ভাবে ২৬ জন বন্দুকবাজের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকার তিন জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এসটিএফের সুপার শিবদীপ লান্ডে বলেন, ‘‘অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে। খুব শীঘ্রই বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।’’

মূলত উত্তর বিহারের ন’টি জেলায় অপরাধীরা সক্রিয়। সীতামঢ়ী, শিওহর, মুজফ্ফরপুর, মোতিহারি, বেতিয়া, গোপালগঞ্জ, মধুবনী, দ্বারভাঙা এবং সমস্তিপুর জেলায় এই অপরাধীদের নেটওয়ার্ক জোরালো। মূলত দুই মাপিয়া ডন, সন্তোষ ঝা এবং মুকেশ পাঠকের দলবলই এই সমস্ত অপরাধের পাণ্ডা বলেই পুলিশের দাবি। সন্তোষ গয়া জেলে বন্দি থেকেই তার কাজকর্ম চালাচ্ছে। অন্য দিকে, মুকেশ জেল থেকে পালিয়েছে। মুকেশের দলে বেশ কিছু প্রাক্তন মাওবাদীও রয়েছে বলে পুলিশের খবর। এসটিএফের দাবি, ধৃত বন্দুকবাজদের লাগাতার জেরা করে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। তার ভিত্তিতেই রাজ্যের সীমান্ত বন্ধ করে অভিযান চালানো হচ্ছে।

bihar abduction threat engineers murder dibakar roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy