Advertisement
E-Paper

ভোটমুখী গুজরাতেও তাস অভিন্ন দেওয়ানি বিধি-কমিটি

বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, দত্তক, উত্তরাধিকার নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশে নানা ধর্ম ও জনজাতির নিজস্ব আইন আছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে, দেশের সব নাগরিককে একই ধাঁচের পারিবারিক আইন মেনে চলতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২২ ০৬:০৩
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল।

গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। ছবি: সংগৃহীত।

উত্তরাখণ্ডে ‘ফল পেয়ে’ এ বার গুজরাত। বিধানসভা ভোটের আগে নিজেদের শাসিত আর এক রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিল ওই রাজ্যের বিজেপি সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের রাজ্যে যে কোনও মূল্যে ব্যালট-যুদ্ধে জয়ের লক্ষ্যেই হিন্দু-ভোট মেরুকরণের উদ্দেশে এই উদ্যোগ।

শনিবার ছিল গুজরাত সরকারের শেষ মন্ত্রিসভার বৈঠক। সেই বৈঠকের শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সংঘাভি জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অনুপ্রেরণায় আজ রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল। গুজরাতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ ওই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন গুজরাত হাই কোর্টের এক প্রাক্তন বিচারপতি। কমিটিতে থাকবেন তিন থেকে চার জন সদস্য।

এ বছরের গোড়ার দিকে উত্তরাখণ্ডে ভোটের ঠিক আগেও সেখানে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে রাজ্যের সরকার। যার সুফল মিলেছিল ভোটের বাক্সে। এ বার সেই অস্ত্রই গুজরাতে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এর ফলে রাজ্যে যে সরকারবিরোধী ক্ষোভ জমাট বেঁধেছে, যে চিড় ধরেছে বিজেপির হিন্দু ভোট-ব্যাঙ্কে, তা কিছুটা হলেও মেরামত হবে বলে মনে করছেন মোদী-শাহেরা। আগামী দিনে ভোটের প্রচারে বিষয়টি বিজেপির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

কংগ্রেস শিবিরের অভিযোগ, গুজরাতে ভোট জিততে এ হল বিজেপির মরিয়া চেষ্টা। তাদের দাবি, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন যে, গুজরাতে দলের পরিস্থিতি আদৌও আশাব্যঞ্জক নয়। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন আমজনতা। এই পরিস্থিতিতে ‘নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে’ নির্বাচনের ঠিক আগে একের পর এক প্রকল্পের ঘোষণা, শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ঘোষণা করছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলকে ওই ঘোষণার সুযোগ করে দিতেই হিমাচল প্রদেশের সঙ্গে গুজরাতের ভোটের দিন ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন।

গুজরাত কংগ্রেসের নেতা অর্জুন মোধওয়াদিয়া বলেন, ‘‘জনগণকে বুঝতে হবে যে, রাজ্য বিধানসভার হাতে এ ধরনের আইন পাশের কোনও ক্ষমতা নেই। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন পাশ করানোর ক্ষমতা একমাত্র সংসদের রয়েছে। কিন্তু ভোটের আগে বেকারত্ব, অর্থনীতির বেহাল দশা, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি থেকে নজর ঘোরাতেই হিন্দুত্বের এই তাস খেলা হয়েছে। মানুষকে বুঝতে হবে যে, হিন্দুত্বের এই তাসে পেটের ভাত জোগাড় হয় না।’’

বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, দত্তক, উত্তরাধিকার নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশে নানা ধর্ম ও জনজাতির নিজস্ব আইন আছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে, দেশের সব নাগরিককে একই ধাঁচের পারিবারিক আইন মেনে চলতে হবে। সে ক্ষেত্রে শরিয়ত আইন গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। বিজেপির দাবি, এতে সমাজে অসাম্য ঘুচবে। মহিলাদের অধিকার বাড়বে। এ ছাড়া, সংবিধানে দেশের নাগরিকদের জন্য যে সাম্যের কথা বলা আছে, তার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্য দিকে, সরকারের এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক ও সংখ্যালঘু-বিরোধী মনোভাবের পরিচায়ক হিসাবে ব্যাখা করে মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড জানিয়েছে, মুল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই আইন প্রণয়নের মাধম্যে মুসলিম সমাজের অধিকার হরণের চেষ্টায় নেমেছে বিজেপি সরকার।

সুর চড়িয়েছে আম আদমি পার্টিও। তাদের প্রশ্ন, ‘‘গুজরাতে ২৭ বছরের শাসন, কেন্দ্রে আট বছর ক্ষমতায় থেকে এখন শেষ বেলায় কেন শাসকদলকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা বলতে হচ্ছে!’’

BJP Gujarat Uniform Civil Code
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy