Advertisement
E-Paper

‘ঘুষ’ কি ‘বন্ধু’ মোদীকে, ট্রাম্প-মন্তব্যে চাপে বিজেপি

ভারতে ইউএসএড-এর অর্থ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই বিজেপি এত দিন রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ চাওয়ার অভিযোগ তুলছিল।

মার্কিন সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৪০
Share
Save

শুক্রবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আমেরিকার সরকারের ইউএসএড ভারতে যে ২১ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছিল, তা ‘ঘুষ’ ছিল। শনিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, “আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ২১ মিলিয়ন ডলার যাচ্ছিল। আমরা ভারতে ভোটের হার বাড়ানোর জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছিলাম।”

ভারতে ইউএসএড-এর অর্থ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই বিজেপি এত দিন রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ চাওয়ার অভিযোগ তুলছিল। আজ ট্রাম্পের মন্তব্যে খোদ মোদী সরকার তথা বিজেপিই অস্বস্তিতে পড়েছে। কংগ্রেস কটাক্ষ করেছে, ট্রাম্প তা হলে মোদীকেই ‘ঘুষ’ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন!

কংগ্রেসের জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান পবন খেরা আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি তুলেছেন, “আমেরিকা যে নরেন্দ্র মোদীকে ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার ঘুষ দিচ্ছিল বলে অভিযোগ করছে, তার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উচিত তাঁর বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলে এই অভিযোগ খারিজ করা।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ক্ষমতায় এসে ইলন মাস্কের নেতৃত্বে যে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ তৈরি করেছেন, তারা ভারতে ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলারের অার্থিক অনুদান বন্ধ করেছে। ট্রাম্পের দাবি, ভারতে ভোটের হার বাড়ানোর জন্য এই অর্থ দেওয়া হচ্ছিল। দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের তদন্ত রিপোর্ট অবশ্য ইতিমধ্যেই দাবি করেছে, এই অর্থ ভারত নয়, বাংলাদেশে ভোটের হার বাড়াতে বরাদ্দ হয়েছিল। অন্য দিকে, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ সংবাদপত্রের দাবি, আমেরিকান সরকারের টাকায় চলা ইউএসএড-এর

তরফে ভারতে এই অর্থ বরাদ্দ হওয়ার কোনও নথিই নেই।

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় পাল্টা বলেন, ‘‘পরপর তিন দিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বললেন যে, ইউএসএড ভারতে ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার দিচ্ছিল ভোটের হার বাড়াতে। তিনি কি নিজের দেশের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছিল, জানেন না?’’ কিন্তু ট্রাম্প যে তাঁর ‘বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে’ ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার গিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন, সে প্রসঙ্গ মালবীয় এড়িয়ে গিয়েছেন।

কংগ্রেস নেতা পবন খেরার প্রশ্ন, ভারতে ইউএসএড-এর টাকা দেওয়ার কোনও নথি নেই। বাংলাদেশে টাকা যাওয়ার নথি রয়েছে। মোদী সরকার কেন ভারতের প্রতিবেশী দেশে আমেরিকার টাকা ঢালার খবর পেল না? ‘ছোটদের জেমস বন্ড’ অজিত ডোভাল কী করছিলেন? পবনের যুক্তি, বিজেপি তো দাবি করছে, ২০১২-য় ভারতে ভোটের হার বাড়াতে ইউএসএড-এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চুক্তি হয়। কংগ্রেসের জন্য সেই টাকা ঢালা হলে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে কংগ্রেস মাত্র ৪৪টি আসন পেল, বিজেপি ২৮২টি আসন পেল কী ভাবে? সেই চুক্তি কেন ২০২০-তে নতুন করে করা হল? ২০০১ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ভারতে ইউএসএড-এর ২৯০ কোটি ডলার এসেছে। মোদী থেকে ‘আধুনিক চাণক্য’ অমিত শাহ এত দিন এর খোঁজ পাননি? ‘‘এই টাকায় কি বিরোধী দল, নাগরিক সংগঠন, সংবাদমাধ্যমকে দুর্বল করার কাজ চলছিল? বিদেশি তহবিলের টাকা ভারতে ঢোকার ক্ষেত্রে এত কঠোর আইন। তা সত্ত্বেও সরকার কোনও খোঁজ রাখে না? এ কেমন সরকার চলছে?’’ বিরোধী শিবির আজ ফের এ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছে।

ঢাকঢোল পিটিয়ে মোদী সদ্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার শব্দের যৌথ বিবৃতি সই করে ওয়াশিংটন সফর সেরে ফিরেছেন। ফিরেই ‘পরম বন্ধু’ ট্রাম্পের কথায় অস্বস্তিতে পড়েছেন। বিদেশ মন্ত্রক এখন বলছে, এই অনুদান-বিতর্ক ট্রাম্পের তৈরি করা। তিনি এবং তাঁর দল তাঁর পূর্বসূরি বাইডেন প্রশাসনের বৈদেশিক অর্থ অনুদানের নীতিতে অবিশ্বাসী। ইউএসএড-এর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক নেই। তাই ধারাবাহিক ভাবে জলঘোলা করছেন। ঘরোয়া রাজনীতিতে লাভের অঙ্ক কষেই ট্রাম্প এগোচ্ছেন, মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক।

এই আঁচ যাতে এ দেশের রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করাও সাউথ ব্লকের দায়। এ কাজে বরাবরের মতোই ভাষ্য তৈরির কাজে লাগানো হয়েছে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। আজ এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘ট্রাম্প দ্বিতীয় দফার গোড়াতেই যে রাষ্ট্রনেতাদের ডেকেছিলেন, তার একজন নরেন্দ্র মোদী। মোদী একজন সুদৃঢ় জাতীয়তাবাদী নেতা এবং সেটা ফুটেও ওঠে। ট্রাম্পও আমেরিকান জাতীয়তাবাদী। আমার ধারণা জাতীয়তাবাদীরা একে অন্যকে সম্মান করেন। মোদী ভারতের জন্য যা করেন, ট্রাম্প মেনে নিয়েছেন। মোদীও মেনে নিয়েছেন আমেরিকার জন্য ট্রাম্পের ভূমিকা। দু’জনের মধ্যে রসায়ন ভাল। আমরা জানি ট্রাম্প কিছুটা চিরাচরিত ছকের বাইরে হাঁটেন। বিশ্বের বহু রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ইতিহাস নেতিবাচক। মোদীর ক্ষেত্রে তা নয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump Narendra Modi India Election BJP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}