নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
কথা বলো না। টুঁ শব্দ করো না। না, কেউ নিদ্রা যাননি। বরং দিনরাত এক করে পরিশ্রম করছেন নরেন্দ্র মোদী!
‘প্রধানমন্ত্রী কঠোর পরিশ্রম করছেন। বিরোধীদের (অভিযোগের) তিরের ফাঁদে পড়ে যাবেন না’। নিবন্ধের শিরোনাম এমনই। যে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, তার নামের সঙ্গে একটি বিখ্যাত ব্রিটিশ সংবাদপত্রের নামের বেশ মিল। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর মাঝে শুধু যোগ হয়েছে ‘ডেলি’। মঙ্গলবার বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা এককাট্টা হয়ে ফেসবুক-টুইটারে এই নিবন্ধ ছড়িয়ে দিলেন।
বিদেশের প্রায় সমস্ত প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি ভারতে কোভিড বিপর্যয়ের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করছে। তাই এ দিন এই নিবন্ধ সমাজমাধ্যমে ছড়াতে শুরু করার পরে প্রথমে অনেকেই বিভ্রান্ত হলেন। কোন জাদুবলে হঠাৎ বিদেশের সংবাদমাধ্যম প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা শুরু করে দিল!
ক্ষণিকের বিভ্রান্তি। তারপরে দেখা গেল, কোনও বিদেশি সংবাদপত্র নয়। এ দেশেরই সংবাদপত্র। নিবন্ধের লেখক কোনও সাংবাদিক নন। বিজেপির নেতা সুদেশ বর্মা। যিনি নিজের পরিচয় দিয়েছেন বিজেপির মিডিয়া সম্পর্ক বিভাগের আহ্বায়ক হিসেবে। পুরো নিবন্ধ জুড়ে প্রধানমন্ত্রীর কাজের প্রশংসা। সেই নিবন্ধই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ থেকে শুরু করে অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, অমিত মালবীয়, প্রহ্লাদ জোশী, কিরেন রিজিজু, জি কিসান রেড্ডিরা ফেসবুক-টুইটারে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
অবস্থা দেখে কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের কটাক্ষ, “আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সত্যটা দেখাচ্ছে। তাই বেচারা বিজেপি নেতারা ভেবেছেন, একই রকম নামের কাগজে কিছু ছাপানো যাক। কিন্তু নকল করতেও আক্কেল দরকার। এ সবের বদলে বরং মোদীজি নিজের কাজে মন দিন।”
কোভিড মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকায় বিজেপি, আরএসএস, এমনকি মন্ত্রীদেরও একাংশ অখুশি বলে বিজেপির অন্দরমহলের খবর। মোদী সরকারের কোনও প্রবীণ মন্ত্রী এই নিবন্ধ ফেসবুক-টুইটারে শেয়ার করেননি। তাতে জল্পনা আরও তুঙ্গে উঠেছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষায় বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের এই মরিয়া চেষ্টা দেখে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি নরেন্দ্র মোদী প্রবল চাপের মুখে? নাহলে তিনি যে কঠোর পরিশ্রম করছেন, তা জানাতে বিজেপির ‘দ্বিতীয় সারির’ নেতাদের মাঠে নামতে হচ্ছে কেন? প্রধানমন্ত্রী নিজে কেন মুখ খুলছেন না?
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজও বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী চোখ থেকে গোলাপি চশমাটা নামান। ওতে সেন্ট্রাল ভিস্টা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। নদীতে অগুনতি শব বয়ে চলেছে। হাসপাতালে লম্বা লাইন। জীবনের সুরক্ষার অধিকারই সরকার কেড়ে নিয়েছে।
সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর কথায় ইঙ্গিত, কোভিড পরিস্থিতি কিছুটা শোধরালে প্রধানমন্ত্রী ফের মুখ খুলতে পারেন। জোশী ওই নিবন্ধ থেকেই উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘সঙ্কট এলে প্রধানমন্ত্রী নীরবে কাজ করেন। রাজনৈতিক মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানান না। এখন তার সময়ও নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy