বছর পাঁচেক আগে শেখ হাসিনার নিজে হাতে বানানো পায়েস খেয়ে ঢাকা থেকে ফিরতি বিমানে উঠেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তখন তিনি বিদেশমন্ত্রী। প্রশ্ন করায় বলেছিলেন, ‘‘শুধু কি পায়েস? সামনে বসে পাঁচ রকম মাছ খাওয়ালো হাসিনা। না খেয়ে উঠতেই দিল না!’’ এই পাঁচটি পদ ছিল, রুই মাছের কালিয়া, তেল কই, চিতলের পেটি, সরষে দিয়ে চুনো মাছের ঝাল আর গলদা চিংড়ির মালাইকারি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ের সঙ্গে প্রণববাবুর সম্পর্ক ঠিক এতটাই মধুর ও আন্তরিক।
এর আগে বহু বার প্রণববাবুর সরকারি বাংলোয় এসে থাকলেও, এই প্রথম রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথ্য গ্রহণ করছেন শেখ হাসিনা। ভবনের ‘ফ্যামিলি কিচেন’-এ শুধু রাষ্ট্রপতি ও তাঁর নিকটাত্মীয়দের রান্না হয়। সেই রান্নাঘরে তোড়জোড় শুরু হয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। মোট ছ’টি ভাগ রাষ্ট্রপতির হেঁশেলে। ব্যাঙ্কোয়েট কিচেন, আ লা কার্তে, আভেন অ্যান্ড স্টিমার্স, স্টোর, ট্রেনিং এবং
আর অ্যান্ড ডি। হাসিনার বিমান দিল্লির টারম্যাক ছোঁয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে তুমুল ব্যস্ততা সব ক’টিতেই। রাষ্ট্রপতি ভবনের ৩২ জন প্রধান রাঁধুনি (চিফ শেফ) বারবার আলোচনা করছেন নিজেদের মধ্যে। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আগেই জেনে নেওয়া হয়েছে হাসিনার পছন্দ-অপছন্দ কী।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সস্ত্রীক বাংলাদেশে গিয়ে নড়াইলে শ্বশুরবাড়ির গ্রামে গিয়েছিলেন প্রণববাবু। সেই প্রথম শ্বশুরবাড়ি যাওয়া রাষ্ট্রপতির। সে বারেও শেখ হাসিনা নিজের বাড়িতে ডেকে সামনে বসে খাইয়েছিলেন প্রণববাবুকে। ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘‘আপনি তো বাংলাদেশের জামাই। জামাইষষ্ঠীর তত্ত্বও তো তা হলে পাঠাতে হয়!’’ ফিরতি বিমানে প্রণববাবু লাজুক হেসে নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদের। সে দিন কী খাইয়েছিলেন হাসিনা? অনেক ধরনের মাছ ছিল। আর ছিল পদ্মার ইলিশ।
এটা নিয়েই রাষ্ট্রপতির হেঁশেলের আফশোস যাচ্ছে না। এই শেষ চৈত্রে হাসিনার জন্য ভাল টাটকা ইলিশ আর মিলছে কই! বাজারে ইলিশের মন্দা, যা আছে তাও হয় হাত-কব্জি মাপের, না-হয় ফ্রিজারে রাখা বিস্বাদ মাছ। অগত্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বাঙালি রসনার ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর— ভেটকির পাতুরি, চিংড়ির মালাইকারি এবং চিতল পেটির মুইঠ্যা বানানো হচ্ছে। শেষ পাতে অবশ্যই রাজভোগ। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গের প্রথম সারির শেফ-দের সঙ্গেও প্রাথমিক আলোচনা সেরেছে ‘ফ্যামিলি কিচেন’।
মোট তিন দিন রাষ্ট্রপতির আতিথ্যে কাটাবেন শেখ হাসিনা। বাইরেও (হায়দরাবাদ হাউস, বাংলাদেশ হাই কমিশন ইত্যাদি) মধ্যাহ্নভোজ এবং নৈশাহার রয়েছে তাঁর। তাই বিভিন্ন পদ খাওয়ানোর সুযোগ কম। তবুও তার মধ্যেই চেষ্টার ত্রুটি হবে না বলেই জানাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ভবনের শেফরা।
রকমারি মাছের পাশাপাশি মুর্গ দরবারি, গোস্ত ইয়াখনি, রাইজিনা কোফতা, আলু বুখারার মতো উত্তর ভারতের বিশেষ আইটেমগুলিও থাকছে। সাধারণ ভাবে রাষ্ট্রপতি ভবনের হেঁশেলে বাইরের খাবার ঢোকা নিষিদ্ধ। যা রান্না হয় তার বেশির ভাগ কাঁচামালই উৎপন্ন হয় ভবনের সুবিস্তীর্ণ এস্টেটে। বজ্রকঠিন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে শুধু মাছ বা মাংস বাইরে থেকে আনা হয়। কর্মীরা জানাচ্ছেন, সে সব অর্ডার দেওয়ার কাজ আগেই সারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy