দুই প্রতিপক্ষ শিবিরের হিসেব বলছে, বিজেপি পেয়েছে ৪৩% ভোট। আইপিএফটি-র প্রাপ্তি ৭.৩% ভোট। আর বামেদের ভোট গত বারের ৫২% থেকে কমে এখনও পর্যন্ত ৪২.৬%-এ দাঁড়়িয়েছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তির হার নেহাতই নগণ্য। বেশির ভাগ আসনে তাদের জামানত খোয়াতে হয়েছে। বাম-বিরোধী ভোটের প্রায় পুরোটাই নিজেদের দিকে টেনে অভাবনীয় সাফল্য ঘরে তুলেছে বিজেপি! গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে ধরলে তাদের অনুকূলে ‘স্যুইং’ হয়েছে ৪০%-এরও বেশি! ঠিক যেমন ইঙ্গিত দিয়েছিল সি ভোটার-এবিপি আনন্দের বুথফেরত সমীক্ষা!
আরও পড়ুন: হুমকি-কটূক্তির দিনে একলা লড়়াই মানিকের
কী ভাবে হল এমন বাজিমাত? বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি এবং মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার বিপ্লব দেবের মতে, ‘‘ত্রিপুরার মানুষ উন্নয়ন চেয়েছিলেন। তাঁদের মনে হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপিই স্থিতিশীল এবং উন্নয়নমুখী সরকার দিতে পারে। তাই তাঁরা ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন।’’ নতুন ত্রিপুরা গড়়তে বামেদেরও সাহায্য প্রার্থনা করেছেন বিপ্লব।
দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম শাসনে রাজ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মনোভাব যতটা ছিল, তার সঙ্গেই গত তিন বছরে নিবিড়় সাংগঠনিক পরিশ্রম যোগ করে হাওয়াকে ঝড়়ে পরিণত করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব! এর আগে কোনও ভোটে বামেদের ধাক্কা খাওয়ার ইঙ্গিত না থাকলেও বিধানসভায় এসে হঠাৎই বাম দুর্গ একেবারে ধরাশায়ী! বিজেপি নেতারা বলছেন, তরুণ ভোটারদের সঙ্গে যোগসূত্র গড়়তে পেরেছে তাঁদের সংগঠন। সেই সঙ্গে আইপিএফটি-র সঙ্গে জোট উপজাতিদের বড়় অংশের আবেগকে টানতে পেরেছে।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি অবশ্য ত্রিপুরার ফলকে অর্থ ও পেশিবলের জয় বলেই মনে করছেন। দলের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছেন, ‘‘অপ্রত্যাশিত এই বিপর্যয় মেনে নিয়েই আমরা কারণ পর্যালোচনা করব।’’
রাজ্যে ২৫ বছরের মহীরূহ পতনের অনিবার্য অভিঘাতে বিকেল থেকেই নানা প্রান্তে ভাঙা পড়়তে শুরু করেছে সিপিএমের কিছু কার্যালয়। সোনামুড়়ার গণনা-কেন্দ্রের মধ্যেই সরকারি আধিকারিকদের হুমকি দেওয়া হয়েছে ‘দেখে নেওয়া’র। শান্তি বজায় রাখার জন্য বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের প্রতি দলের সভাপতি বিপ্লবের আবেদন কতটা ফলপ্রসূ হয়, তার পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে রাত থেকেই!