Advertisement
E-Paper

শিশু সুরক্ষায় নজরদারি চায় শীর্ষ আদালত

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নির্দেশ, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সব রাজ্যেই কী ভাবে অনাথ আশ্রম বা হোম চালানো হচ্ছে, সেখানে শিশুদের কোন পদ্ধতিতে দত্তক দেওয়া হচ্ছে, শিশুদের কী অবস্থায় রাখা হচ্ছে, সব দেখা দরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জলপাইগুড়ির হোম থেকে শিশু পাচারের ঘটনায় দেশের সব হোম বা অনাথ আশ্রমের কাজকর্মই সুপ্রিম কোর্টের আতসকাচের তলায় চলে এল।

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নির্দেশ, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সব রাজ্যেই কী ভাবে অনাথ আশ্রম বা হোম চালানো হচ্ছে, সেখানে শিশুদের কোন পদ্ধতিতে দত্তক দেওয়া হচ্ছে, শিশুদের কী অবস্থায় রাখা হচ্ছে, সব দেখা দরকার। এ বিষয়ে রাজ্যগুলিকে দু’সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘শিশু বিক্রির থেকে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। দেশের ভবিষ্যৎ শিশুর চরিত্রের উপরেই নির্ভর করে। তার সুরক্ষা সরকারেরই দায়িত্ব।’’

জলপাইগুড়ির একটি হোম থেকে দত্তক দেওয়ার নাম করে ১৭টি শিশু পাচারের অভিযোগে নাম জড়ায় বিজেপির একাংশের। বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার নেত্রী জুহি চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি একটি হোমের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তীকে কেন্দ্রীয় সরকারের লাইসেন্স পেতে সাহায্য করেছিলেন। দু’জনেই গ্রেফতার হন।

এ নিয়ে সিআইডি তদন্তের মধ্যেই জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন আসরে নামে। তারা অভিযোগ তোলে, শিশু পাচার চক্রের বাড়বাড়ন্তের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতাই দায়ী। জাতীয় কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে আপত্তি তুলে রাজ্য হাইকোর্টে মামলা করে। গত অগস্টে কলকাতা হাইকোর্ট জাতীয় কমিশনের কাজে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জানায়, বিষয়টি রাজ্য কমিশনের বিচারাধীন। কাজেই তাদের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।

এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় জাতীয় শিশু কমিশন। তাদের অভিযোগ, অনাথ শিশু দত্তক দেওয়ার জন্য রাজ্য বেআইনি ভাবে অ্যাড-হক কমিটি গড়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাতেই তাদের কাজে বাধা দিয়েছে রাজ্য। কমিশনের অভিযোগ, ২০১৩-র জুলাই থেকে ২০১৫-র অগস্ট পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে শিশুদের দত্তকের কোনও রেকর্ডই নেই। কারণ সে সময় রাজ্যের কোনও শিশু কল্যাণ সমিতি ছিল না। ফলে ওই সময়ে কত শিশু পাচার হয়েছে, তা-ও জানা যাচ্ছে না। জাতীয় কমিশনের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা বলেন, শিশুদের অধিকারে আঘাত এলে তার বিচার করতে পারে রাজ্য ও জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন। কিন্তু আইন অনুযায়ী, তদন্তের অধিকার শুধু জাতীয় কমিশনেরই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজ্য কমিশন জলপাইগুড়ির ঘটনায় পদক্ষেপ করেছিল, এমন তথ্য নেই। সর্বোপরি, ২ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের পাচারের ঘটনা যথেষ্ট গুরুতর। ফলে শুধু রাজ্য কমিশন কিছু করতে পারবে না।

শিশু পাচারকে জাতীয় সমস্যা মেনে নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টছে। প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত, গোটা দেশেই এই ধরনের হোম, অনাথ আশ্রমগুলি কীভাবে চলছে, তা দেখা দরকার। এর সঙ্গে মানবাধিকারের প্রশ্নও জড়িত।

মেটা জানান, কোনও রাজ্যই মানবাধিকার আদালত তৈরি করেনি। শুনে প্রধান বিচারপতি জাতীয় শিশু কমিশনকে নির্দেশ দেন, মামলায় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অন্য রাজ্যেরও নাম জুড়তে হবে। ই-মেলে সব রাজ্যকে নোটিস পাঠিয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে জবাব চাওয়া হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার কোর্ট নিয়েও রাজ্যগুলিকে জবাব দিতে হবে। ২২ জানুয়ারি এই মামলার ফের শুনানি হবে।

রায় প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান জানিয়েই বলছি, আইন অনুযায়ী রাজ্য কমিশন কোনও ঘটনার তদন্ত শুরু করলে সেখানে জাতীয় কমিশন ঢুকতে পারে না। এ ক্ষেত্রে রাজ্য কমিশন অনেক আগে বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছিল। তার সব তথ্যপ্রমাণও রয়েছে।’’

Child Trafficking Supreme Court সুপ্রিম কোর্ট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy