দু’মাস। অর্থাৎ, ষাট দিন। পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের উপরে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসবাদীদের এখনও খোঁজ মিলল না।
গত ২২ এপ্রিল চার জন সন্ত্রাসবাদী কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপরে দিনের আলোয় হামলা চালিয়েছিল। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন। রবিবার, ২২ জুন ঘটনার পরে দু’মাস হয়ে যাচ্ছে। এই সময়কালে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ঘটনায় জড়িত চার জন সন্ত্রাসবাদী যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সন্ত্রাসের তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ এই ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েও দু’মাসে কোনও কূলকিনারা করতে পারেনি। তদন্তের অগ্রগতি কতখানি হয়েছে, তা নিয়ে এনআইএ কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও এ বিষয়ে নীরব। ওই সন্ত্রাসবাদীরা কি পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছে, না কি এ দেশেই গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে, সে উত্তরও মিলছে না। পহেলগামের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসবাদীদের পাকড়াও করা দূরের কথা, এনআইএ বা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি এই ঘটনায় জড়িত অন্য কাউকেও এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।
বিরোধীরা মোদী সরকার, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিকে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘পহেলগামে যারা সন্ত্রাস চালিয়েছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাদের ধরতে ব্যর্থ। অথচ এই সন্ত্রাসবাদীরাই ২০২৩-এর ডিসেম্বরে পুঞ্চে এবং ২০২৪-এর ডিসেম্বরে গুলমার্গ ও গগনগীরে হামলা চালিয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে।’’ তৃণমূলের কটাক্ষ, পহেলগামের রক্ত হাহাকার করছে। কিন্তু ‘বিশ্বগুরু’ নীরব হয়ে দেখছেন যে, পাকিস্তান আইএমএফ থেকে কোটি কোটি ডলার ঋণ পেয়ে যাচ্ছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নয়, সুকৌশলে মুখবুজে থাকা।
সরকারি সূত্রের দাবি, এনআইএ-র সেরা অফিসারদের তদন্তের কাজে লাগানো হয়েছে। একটি তদন্তকারী দল কাশ্মীরে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। এনআইএ-র প্রধান সদানন্দ দাতে নিজে পহেলগাম ঘুরে এসেছেন। এখনও পর্যন্ত এনআইএ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ প্রায় তিন হাজার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফেলেছে। সন্ত্রাসবাদীরা কোথায় গেল, তার দিশা মেলেনি। গত ২২ এপ্রিল কী ভাবে সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালিয়েছিল, সেই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। গোটা এলাকার ‘থ্রি-ডি ম্যাপিং’ করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা কোথা থেকে এসেছিল, কোন দিক থেকে পালায়, পালিয়ে কত দূরে যেতে পারে, সেই সমস্ত সম্ভাবনা ধরে নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
প্রাথমিক ভাবে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ চার জন সন্ত্রাসবাদী ঘটনায় জড়িত বলে জানিয়েছিল। তার মধ্যে আদিল হুসেন ঠোকার, হাসিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আদিল ভাই ওরফে তালহা ভাই নামে তিন জনের নাম আর স্কেচও প্রকাশ করা হয়। ২২ এপ্রিলের ঘটনার পরে ২৭ এপ্রিল এনআইএ তদন্তভার হাতে নিয়ে মামলা দায়ের করে। ৭ মে এনআইএ জঙ্গিদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে ২০ লক্ষ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করে। এনআইএ-র মতে, লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন টিআরএফ (দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট) পহেলগামের হামলা চালিয়েছে। এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান, বছর পঞ্চাশের শেখ সাজ্জাদ গুল পহেলগামের হামলার প্রধান ষড়যন্ত্রী বলে এনআইএ কর্তারা মনে করছেন। ঘটনার পরে কাশ্মীর জুড়ে সেনা অভিযানে বেশ কয়েক জন সন্ত্রাসবাদী মারাও গিয়েছে। কিন্তু পহেলগামের সন্ত্রাসবাদীদের টিকিরও সন্ধান মেলেনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)