রাজা রঘুবংশীকে কখন, কী ভাবে এবং কোথায় খুন করা হয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য প্রকাশ্যে এল। তদন্তকারীরা ধৃতদের জেরা করে সেই তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় রাজার স্ত্রী সোনম-সহ পাঁচ জন গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু কী ভাবে, কখন এবং কী পরিকল্পনায় রাজাকে খুন করা হয়েছে, সেই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।
২৩ মে, ভোর সাড়ে ৫টা।
মেঘালয়ের নোংরিয়াটে শিপারা হোমস্টে ছেড়ে দেন রাজা রঘুবংশী এবং তাঁর স্ত্রী সোনম।
সকাল ৬টা।
নোংরিয়াট থেকে ট্রেকিং করতে বেরিয়ে পড়েন রাজা-সোনম।
পুলিশ সূত্রে খবর, শিপারা হোমস্টে থেকে কিছুটা দূরে আরও একটি হোমস্টেতে ছিলেন সোনমের ‘প্রেমিক’ রাজ কুশওয়াহার তিন বন্ধু আকাশ, বিশাল এবং আনন্দ। ঘটনাচক্রে, এই তিন জনকেই রাজাকে খুনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সোনম। সোনমরা যখন হোমস্টে ছেড়ে ট্রেকিংয়ে বার হন, ঠিক ওই সময়েই পাশের হোমস্টে থেকে ট্রেকিংয়ে যান আকাশরা।
সকাল ১০টা।
সোনম এবং রাজা নোংরিয়াটে ২০০০ সিঁড়ি ট্রেক করে নীচে নামেন। তখন সেখানে দেখা হয়ে যায় সোনমের তিন সঙ্গী তথা ‘ভাড়াটে খুনি’ আকাশ, আনন্দ এবং বিশালের সঙ্গে। রাজার সঙ্গে ওই তিন জন পরিচয় করেন। তার পর তাঁরা একসঙ্গে আগে আগে হাঁটছিলেন। পিছনে হাঁটছিলেন সোনম। পুলিশ সূত্রে খবর, পাঁচ জনকে একসঙ্গে দেখতে পেয়েছিলেন স্থানীয় গাইড অ্যালবার্ট পেড। যাঁর বয়ান এবং তথ্যের ভিত্তিতেই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
দুপুর সাড়ে ১২টা।
শাশুড়ি উমা রঘুবংশীকে ফোন করেন সোনম। তাঁদের কথোপকথনের সময় উমাকে সোনম জানান, অনেকটা হেঁটে ক্লান্ত লাগছে তাঁর। ছেলে রাজার সঙ্গেও কথা বলেন উমা। আর সেটাই ছিল রাজার সঙ্গে তাঁর মায়ের শেষ কথা।
দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০।
পাঁচ জন মিলে মাওলাখিয়াত থেকে ওয়েই সডং জলপ্রপাত দেখতে যান। সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় পৌঁছোতেই সোনমের ইঙ্গিত পেয়েই কাটারি নিয়ে পিছন থেকে রাজার মাথায় আঘাত করেন বিশাল। লুটিয়ে পড়েন রাজা। কিছু পরেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় রাজার।
দুপুর সওয়া ২টো।
রাজার ফোন নেন সোনম। তার পর তাঁর সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেন, ‘‘সাত জন্মের সাথী আমরা।’’
দুপুর ২টো ৩০।
সোনম এবং তাঁর তিন সঙ্গী রাজার দেহ খাদে ছুড়ে ফেলে দেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২৩ মে থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান রাজা। স্বামীকে খুন করানোর পর নিজেও ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান সোনম। ২৪ মে থেকে দু’জনের খোঁজ চলতে থাকে। অবশেষে ২ জুন ওয়েই সডং জলপ্রপাতের কিছুটা দূরে রাজার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু সোনমের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে স্থানীয় গাইডের এক তথ্যই পুরো ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।