Advertisement
E-Paper

পাক হামলায় মৃত্যু হয়েছে তিন শিশুর, চোখে জল নিয়েই আগের ছন্দে পঠনপাঠন শুরু জম্মুর স্কুলে

৭ মে যখন প্রথম ভারত-পাক গোলাগুলি শুরু হয়, সে দিনই স্কুলের সমস্ত শ্রেণিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ‘বাঙ্কার’-এর কায়দায় স্কুলের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিল আশপাশের পরিবারগুলি, সোমবার থেকে চেনা ছন্দে ফেরার প্রাণপণ চেষ্টা করছে যারা। তবে এখনও উদ্বেগের প্রহর শেষ হয়নি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৫ ১৫:০৪
পুঞ্চের স্কুলের ছবি।

পুঞ্চের স্কুলের ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

ভারত-পাক উত্তেজনার আবহ থিতিয়ে এসেছে। চলছে যুদ্ধবিরতি। সপ্তাহখানেক বন্ধ থাকার পর সোমবার খুলেছে স্কুল-কলেজ। আগের ছন্দে শুরু হয়েছে পঠনপাঠন। তবে বেশির ভাগ স্কুলেই অর্ধেকের বেশি পড়ুয়া অনুপস্থিত। কারণ, ‘যুদ্ধ’ থামলেও এখনও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে জম্মু-কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের! কবে শান্তি ফিরবে উপত্যকায়, জানেন না কেউই।

সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ্যে এসেছে জম্মুর এমনই এক স্কুলের ছবি। সীমান্তবর্তী পুঞ্চের ক্রাইস্ট স্কুল। সোমবার থেকে সেখানে শুরু হয়েছে পঠনপাঠন। তবে সকালের প্রার্থনা-সমাবেশে স্কুলের অধ্যক্ষ ফাদার শিজো কাঞ্জিরাথিঙ্গালকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আমাদের স্কুলের কাছে এটা শুভ সকাল নয়। পুঞ্চের জন্যও নয়।” কারণ, গত সপ্তাহে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে পুঞ্চে অন্তত ১৩ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে স্কুলের তিন খুদে পড়ুয়াও। পাক গোলাবর্ষণে প্রাণ গিয়েছে এই স্কুলেরই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী উরওয়া ফাতিমা (জ়োয়া) এবং তার যমজ ভাই জ়ায়ান আলির। পরিবারের সঙ্গে পুঞ্চ থেকে জম্মু যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে অষ্টম শ্রেণির বিহান ভার্গবেরও। ‘‘আজ এই মাঠে তাদেরও দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল!’’ ভাঙা গলায় বলে চলেন অধ্যক্ষ। পড়ুয়াদেরও চোখে জল, মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল তাদের।

‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ই জানিয়েছে, অন্যান্য দিনের চেয়ে সোমবার উপস্থিত পড়ুয়াদের সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক ভাবে কম। নিহত সহপাঠীদের স্মরণে মিনিটখানেকের নীরবতা পালনের পর কমে এল উপস্থিত পড়ুয়াদের ভিড়ও। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১,২০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ সোমবার এসেছে মাত্র ৩০০ জন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও এখনও ভয় কাটেনি শিশুদের। স্কুলের এক শিক্ষিকা অমৃত কৌরের কথায়, “ওরা বেশির ভাগই খুব ছোট। কী ঘটছে, তা বোঝার বয়স এখনও ওদের হয়নি। কিন্তু আমরা বলেছি, ওরা যদি কথা বলতে চায়, তা হলে আমরা আছি।’’ আর এক শিক্ষিকা রঞ্জিত কৌরের চোখে জল। ৭ মে পরিবারের সঙ্গে পুঞ্চ থেকে জম্মু যাওয়ার পথে পাক গোলার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর ছাত্র বিহানের। গাড়ির সামনের সিটে বাবা-মায়ের মাঝখানে বসেছিল বিহান। একই গাড়িতে ছিল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া তথা বিহানের খুড়তুতো ভাই রাজবংশ সিংহ, গুরুতর আহত হয়েছে সে-ও। রঞ্জিতের কথায়, ‘‘গত মাসেই বিহান আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। একেবারে সামনের সারিতে বসত ও। আজ আমার স্কুলে আসতে ভাল লাগছে না। ভাবতেই পারছি না, প্রতি দিন যে শিশুকে ক্লাসে দেখতে পাই, হঠাৎ করেই সে আর নেই!’’

পুঞ্চের স্কুলের চারপাশে এখনও পাক গোলাবর্ষণের দগদগে চিহ্ন স্পষ্ট। এখানে সেখানে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা কাচের টুকরো। ৭ মে যখন প্রথম ভারত-পাক গোলাগুলি শুরু হয়, সে দিনই স্কুলের সমস্ত শ্রেণিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ‘বাঙ্কার’-এর কায়দায় স্কুলের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিল আশপাশের পরিবারগুলি, সোমবার থেকে চেনা ছন্দে ফেরার প্রাণপণ চেষ্টা করছে যারা। তবে এখনও উদ্বেগের প্রহর শেষ হয়নি। পহেলগাঁও কাণ্ড এবং তার পরে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর থেকে ক্রমেই অবনতি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের। দু’দেশের মধ্যে চার দিন ধরে সামরিক সংঘাত চলেছে। আপাতত সংঘর্ষবিরতি চললেও ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা এখনও প্রশমিত হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারত-পাক আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় নজরদারি আরও বৃদ্ধি করেছে ভারতীয় সেনা।

India Pakistan Ceasefire India Pakistan Tension Jammu and Kashmir Poonch school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy