তেইশ কণ্ঠের এক সুর চব্বিশ ঘণ্টা পরেও স্বস্তিতে রাখেনি নরেন্দ্র মোদীকে।
ব্রিগেডে তেইশ দলের যৌথসভা দেখে কাল থেকেই মোদী এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে, বিরোধী জোট ভোটে কোনও আঁচড়ই কাটতে পারবে না। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেই জোটের চাপকে উপেক্ষা করতে পারছেন না তিনি। শুধু নিজে নয়, তোপ দাগার কাজে গোটা দলকেই নামিয়ে দিয়েছেন। যাঁর ডাকে ২৩ জন বিরোধী নেতা এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালই মোদীর উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘চোরের মায়ের বড় গলা!’’ মোদীকে জবাব দিতে আজ মাঠে নামলেন রাহুল গাঁধীও।
মোদী কাল বলেছিলেন, বিরোধীরা নিজেদের বাঁচাতে একজোট হচ্ছে আর ‘বাঁচাও’ বাঁচাও’ আর্তনাদ করছে। রাহুল আজ টুইট করে কটাক্ষ করলেন, ‘‘ইওর হাইনেস, সাহায্যের এই আর্তনাদ দেশের লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক, দুর্দশায় থাকা কৃষক, অবদমিত দলিত-আদিবাসী, নিগৃহীত সংখ্যালঘু, বিপর্যস্ত ছোট ব্যবসায়ীদের। তাঁরা আপনার স্বৈরতন্ত্র ও অযোগ্যতা থেকে মুক্তির ভিক্ষা চাইছেন। আর একশো দিনে তাঁরা মুক্ত হবেন।’’
মোদী আজ দিল্লি থেকে মহারাষ্ট্রের বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে ভিডিয়ো মারফত কথা বলছিলেন। সেখানেই এক কর্মীর হাতে ছিল বিরোধী জোট সংক্রান্ত প্রশ্ন। অবশ্য সেটাও সাজানোই। যথারীতি মোদীর জবাব তৈরিই ছিল। গড়গড় করে টেলিপ্রম্পটার দেখে মোদী শুনিয়ে গেলেন, ‘‘ওরা জোট বাঁধছে একে অন্যের সঙ্গে, আমরা জোট করছি দেশের ১২৫ কোটি মানুষের মন, আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে।’’
মোদীর চিত্রনাট্যে লেখা ছিল ব্রিগেডের কথা। টেনে আনলেন পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটও— ‘‘কলকাতার মঞ্চে বেশির ভাগ নেতা এমন ছিলেন, যাঁরা নিজেদের ছেলে বা মেয়েকে ‘সেট’ করার চেষ্টা করছেন। যাঁরা পঞ্চায়েত ভোটে কেউ দাঁড়ালে মারপিট করেন, তাঁরা গণতন্ত্র বাঁচানোর গান গাইছেন! মানুষকে কিছু দল বোকা ভাবে। তাই বারবার রং বদলায়। দেশের জন্য এটি বিপজ্জনক।’’
কাল ব্রিগেডের মঞ্চে শরদ যাদব রাফালের বদলে মুখ ফস্কে ‘বফর্স’ বলে ফেলেছিলেন। তা নিয়ে বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার চালাচ্ছে। আজ সেটিকেও পুঁজি করে মোদী বললেন, ‘‘যে মঞ্চ থেকে দেশ ও গণতন্ত্র বাঁচানোর কথা হচ্ছে, সেখানেই বফর্সের কথা স্মরণ করানো হচ্ছে! সত্য কত দিন লুকোবে? কখনও না কখনও বেরিয়েই পড়বে। এই মহাজোট নামদার, পরিবারতন্ত্র, দুর্নীতি, নেতিবাচক, অস্থিরতা, অসাম্যের অদ্ভূত সঙ্গম।’’ মোদীর এমন কথা শুনে শরদ যাদব একগাল হেসে বললেন, ‘‘মুখ ফস্কে বেরোনো শব্দকেও হাতিয়ার করতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে! এত অসহায় তিনি! এ তো হাস্যকর।’’
আরও পড়ুন: ব্রিগেড সমাবেশে কত খরচ হল? প্রশ্ন পৌঁছে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনে, ইঙ্গিত মুকুলের
কড়া জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূল নেত্রীর ডাকে ব্রিগেড সমাবেশে এক সঙ্গে সব দলকে দেখে প্রধানমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। তাই আতঙ্কে, হতাশায় নানা আক্রমণ করছেন।’’ পরিবারতন্ত্র নিয়ে মোদীর অভিযোগের জবাবে পার্থবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা কংগ্রেসকে বলেন, এক পরিবারের দল। কিন্তু বিজেপিতে তো সবই অমিত শাহ আর নরেন্দ্র মোদীর হাতে! আর কে কোথায় আছেন? এক পরিবারের এক জনের পরে আরও যদি কেউ রাজনীতিতে আসেন এবং মানুষ তাঁকে গণতান্ত্রিক ভাবে মেনে নেন, তা হলে অপরাধ কী?’’ একই সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মোদীর আক্রমণ উড়িয়ে পার্থবাবুর বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় তো বিজেপি পঞ্চায়েত উপনির্বাচনে ৯৬% আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে! সেখানে গণতন্ত্র আছে, আর এখানে নেই?’’
আর এক বিরোধী নেতা ওমর আবদুল্লা বললেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা পরেও প্রধানমন্ত্রী এখনও ব্রিগেডের ভারত-বন্ধনের কথা বলছেন! আমি তো বিস্মিত। আমি তো ভেবেছিলাম, মমতাদিদির উদ্যোগে শক্তিপ্রদর্শনকে তিনি ভুলিয়ে দিতে চাইবেন।’’ ঘরোয়া মহলে বিজেপি নেতারা স্বীকার করছেন, ব্রিগেডের সভাকে উপেক্ষা করা যেতেই পারত। কিন্তু যে ভাবে বিরোধীদের জোট দানা বাঁধছে, তাতে কর্মীদের মনেও ভয় ঢুকছে। ফলে নেতৃত্ব কী করে চুপ থাকতে পারেন? তাই শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, দলের সব নেতাকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জোটকে নিশানা করতে। আজ শিবরাজ সিংহ চৌহান, রাম মাধব, এমনকি সম্বিত পাত্রও দেশের নানা প্রান্তে নেমে পড়েছেন জোটকে তুলোধনা করতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy