Advertisement
E-Paper

এক আইডি, একাধিক ভোটার! ‘ফাঁস’ হতেই কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি লোকসভায়, তৃণমূলের সঙ্গে সরব কংগ্রেসও

ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এ বার লোকসভাতেও সুর চড়াল তৃণমূল। গত কয়েক বছরে কোনও নির্বাচনই স্বচ্ছ ভাবে হয়নি বলে লোকসভায় দাবি করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ১৮:০৯
লোকসভায় ভোটার তালিকা নিয়ে সুর চড়ালেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

লোকসভায় ভোটার তালিকা নিয়ে সুর চড়ালেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটার থাকার অভিযোগে এ বার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে লোকসভায় সুর চড়াল তৃণমূল। সোমবার লোকসভায় বক্তৃতায় ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ভোটার তালিকার অভিযোগ তোলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, নির্বাচন কমিশন যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে, তা নির্বাচনী আচরণবিধিরই ২০ নম্বর ধারার পরিপন্থী। কমিশন ঠিকমতো কাজ করছে না বলে অভিযোগ কল্যাণের। এর জন্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর অভিযোগ, গত কয়েক বছরে কোনও নির্বাচন স্বচ্ছ ভাবে হয়নি। কমিশন ঠিকমতো কাজ করেনি বলে অভিযোগ তৃণমূল সাংসদের। এই ধরনের ঘটনা দেশের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মনে করছেন তিনি।

একই এপিক (সচিত্র পরিচয়পত্র) নম্বরে একাধিক নাম থাকার অভিযোগে গত কয়েক দিন ধরেই সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকশিবির। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এই বিষয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সজাগ করে দিয়েছেন। লোকসভায় কল্যাণ বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রথম এই বিষয়টি তুলে ধরেন। ‘ডুপ্লিকেট’ ভোটার কার্ডের অনেকগুলি তথ্য পাওয়া গিয়েছে।” তাঁর দাবি, গুজরাত এবং হরিয়ানার ‘ভোটার’দেরও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে বাংলায়। কল্যাণের বক্তব্য, আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটত না। গত কয়েক বছর ধরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই ভোটারেরা বাংলায় কোথা থেকে এলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূল সাংসদের। তাঁর অভিযোগ, কমিশন বিভিন্ন নির্বাচনের সময়ে স্বচ্ছ ভোটের কথা বললেও আসলে গত কয়েক বছরে কোনও নির্বাচনই স্বচ্ছ ভাবে হয়নি।

কল্যাণ বলেন, “নির্বাচন কমিশন যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা স্পষ্টতই নির্বাচনী আচরণবিধির ২০ নম্বর নিয়মকে লঙ্ঘন করছে… নির্বাচন কমিশন সবসময় বলে আসছে যে তারা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করছে। তবে এটা স্পষ্ট যে গত কয়েক বছর ধরে কোনও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়নি, কোনও সুষ্ঠু নির্বাচনও হয়নি। নির্বাচন কমিশন সঠিক ভাবে কাজ করেনি। এই কারণে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

নির্বাচনীবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ পরে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ওই নিয়মে বলা রয়েছে, এক জন ভোটারকে কার্ড দেওয়া হবে। তাতে একটি নম্বর থাকবে। তা হলে কী করে একই নম্বরে একাধিক ভোটার কার্ড দেওয়া হয়? এখানেই ওই নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে।”

একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটার কার্ড ঘিরে বিতর্কের মাঝে ব্যাখ্যাও দিয়েছিল কমিশন। কমিশন জানিয়েছিল, একই এপিক নম্বরে একাধিক নাম থাকা মানেই ভুয়ো ভোটার নয়। এপিক নম্বর এক হলেও ভোটকেন্দ্র এবং বিধানসভা কেন্দ্র আলাদা হয়। তারা জানিয়েছিল, এপিক কার্ডে যে কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে সেখানেই ভোট দেওয়া যাবে। অন্য কোথাও না। কিন্তু তা নিয়ে বিতর্ক থামেনি। কমিশনের রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে স্মারকলিপি জমা দেয় তৃণমূল। আধার কার্ড বা পাসপোর্টের মতো ভোটার কার্ডেও ইউনিক আইডি চালু করার দাবি তোলে তৃণমূল। তার পরে কমিশনের তরফে জানানো হয়, ভবিষ্যতে একই এপিক নম্বর আর থাকবে না। তার পরিবর্তে চালু করা হবে ইউনিক এপিক নম্বর। আগামী তিন মাসের মধ্যেই প্রাথমিক কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

শুধু কল্যাণই নন, ভোটার তালিকা বিতর্কে সোমবার লোকসভায় প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও। তিনি বলেন, “গোটা দেশে ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রতিটি বিরোধী দল এই নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।” ভোটার তালিকা বিতর্কে সংসদে আলোচনার দাবি তোলেন রাহুল।

সোমবার থেকে সংসদে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই এপিক নম্বর বিতর্কে কেন্দ্রের উপর চাপ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করলেন বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে বিরোধী জোটের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা নিতে দেখা গেল বাংলার শাসকদল তৃণমূলকে। আগামী মঙ্গলবার তৃণমূলের লোকসভার মুখ্য আহ্বায়ক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বে ১০ জনের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ভোটার তালিকার বিতর্ক ছাড়াও সোমবার জাতীয় শিক্ষানীতিকে ঘিরেও কেন্দ্রকে চাপে রাখার চেষ্টা করলেন বিরোধীরা। তামিলনাড়ুতে জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকরের বিরোধিতা করেন ডিএমকে সাংসদেরা। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান পাল্টা জবাব দিতেই হট্টগোল শুরু হয়ে যায় লোকসভায়। ধর্মেন্দ্রের অভিযোগ, ডিএমকে সাংসদেরা পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনীতি করছেন। হট্টগোলের জেরে কিছু ক্ষণের জন্য মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। পরে আবার অধিবেশন শুরু হলে ভোটার তালিকা বিতর্কে আলোচনার দাবিতে সরব হন রাহুল।

বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনে রাজ্যসভাতেও কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরির চেষ্টা করে বিরোধী দলগুলি। বিরোধী দলগুলি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার দাবি তুলতে থাকায় সমালোচনা করেন জেপি নড্ডা। এর পরেই বেশ কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাংসদেরা রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করেন।

Voter List Kalyan Banerjee TMC parliament
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy