অভিনন্দন। শনিবার বিজেপির সদর দফতরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। ছবি: পিটিআই।
আভাস দিয়েছিলেন গত মাসেই। ‘অ্যাডভান্টেজ অসম’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকেই ‘পাখির চোখ’ করে আগামী লোকসভা নির্বাচনে নামতে চলেছে দল। আর শনিবার ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে ভোটের ফল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গেল গোটা দেশকেই, দেশের সব এলাকাকেই উন্নয়ন মানচিত্রের মধ্যে নিয়ে আসার কথা।
বাস্তুশাস্ত্রের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘কোনও বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিক ঠিক থাকলে বলা হয় বাড়িটি দোষমুক্ত। আমি খুশি দেশের উত্তর-পূর্ব দিকটা এত দিনে ঠিক হল। এ বার সে দিকের রাজ্যগুলিকেও উন্নয়নে সামিল করা যাবে।’’
ওই তিন রাজ্যের সাফল্যকে হাতিয়ার করে বিজেপি যে আসন্ন কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনেও ঝাঁপাচ্ছে, তা স্পষ্ট করে দিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
এ বছরেই কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে সরকার গড়ার ব্যাপারে তাঁরা যে নিশ্চিত, তা-ও এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন আত্মবিশ্বাসী শাহ।
আগামী দিনে ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরল জয়ই যে তাঁর এক ও একমাত্র লক্ষ্য, সে কথাও জানাতে ভুললেন না বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।
আরও পড়ুন: উত্তর-পূর্বে সাতে পাঁচ বিজেপি, হতে পারে ছয়ও
আরও পড়ুন: উত্তর-পূর্বে সাতে পাঁচ বিজেপি, হতে পারে ছয়ও
এ দিন ত্রিপুরার ফল নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উৎসাহিত হওয়ার কোনও কারণ আছে বলে মনে করি না। সিপিএম ওখানে ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। খুব একটা কম নয়। বিজেপি ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে যেটা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে ওই রাজ্যগুলি দখল করে। ওরা হোস পাইপ দিয়ে টাকা খরচ করেছে।’’ এ বারের নির্বাচনে ইভিএম মেশিন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘ইভিএম মেশিন দিয়ে অনেক কীর্তি হয়েছে। বাইরের হাজার হাজার লোক নিয়ে এসেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েও অনেক কিছু করেছে। সিপিএম বিজেপির কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পন করেছে।’’
ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে গেরুয়া ঝড়ে উড়ে গিয়েছে বামেদের সব প্রতিরোধ। ২৫ বছরের বাম রাজত্বের অবসানে এই প্রথম সেখানে সরকার গড়ছে বিজেপি। অন্য দিকে নাগাল্যান্ডে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি-এনডিপিপি জোট। মেঘালয়েও ক্ষমতায় আসার জোরালো সম্ভাবনা বিজেপি-র। এই নিয়ে দেশের মোট ২১টি রাজ্যে বিজেপি বা বিজেপির জোট সরকার ক্ষমতায় আসছে।
আরও পড়ুন: গেরুয়া ঝড়, মানিক বদলে ‘হিরা’কেই বাছল ত্রিপুরা
তা সত্ত্বেও এখনই এটাকে বিজেপির ‘গোন্ডেন যুগ’ মানতে রাজি নন শাহ। এই তকমা পাওয়ার জন্য ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলকে ‘পাখির চোখ’ করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কর্নাটকে বিজেপি সরকার গড়ছেই। তার পর আমাদের লক্ষ্য ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরল। তার পরই বিজেপির গোল্ডেন যুগ আসবে।’’
কী ভাবে এ বার ত্রিপুরায় ‘পদ্ম’ ফোটালেন মোদী-শাহরা?
দিল্লিতে দলের সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে সেই রহস্যও ফাঁস করলেন শাহ। তিন রাজ্যের ভোটের ফলাফলের জন্য প্রধান কৃতিত্বটা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকে। বললেন, ‘‘এত দিন উত্তর-পূর্বের জন্য টাকা বরাদ্দ হলেও উন্নয়নের কোনও কাজ হয়নি। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে।’’
ত্রিপুরায় জয়ের জন্য বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সেখানকার সাধারণ মানুষকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন শাহ। বলেছেন, ‘‘যে ভাবে বামেদের ভয়কে উপেক্ষা করে ত্রিপুরার মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত দু’ বছরে ত্রিপুরায় সিপিএম কর্মীদের হাতে কুড়ি জনেরও বেশি বিজেপি কর্মী-সমর্থক প্রাণ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আগরতলায় গেরুয়া আবির ১০০ টাকা, লাল ৪০
দেশের রাজনীতিতে বামেদের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও এ দিন কটাক্ষ শোনা গিয়েছে মোদী-শাহের মুখে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সূর্য যখন অস্ত যায়, তখন তার রঙ লাল হয়। আর উদয়ের সময় গেরুয়া। এখন গোটা দেশের রঙ গেরুয়া হয়ে গিয়েছে।’’ আর শাহ বললেন, ‘‘বামেরা যে ক্রমাগত সমর্থন হারাচ্ছেন, তা আরও এক বার প্রমাণিত হল।’’
কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মোদী-শাহরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy