ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় তৃণমূলের রাজ্য কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে তাদের পাল্টা দাবি, কোনও হামলাই হয়নি। এই ঘটনায় রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। বুধবার ত্রিপুরায় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘বাংলায় ব্যালট বাক্সে তৃণমূলকে হারাতে পারেনি বিজেপি। যেখানে তারা ক্ষমতায়, সেখানে হিংসা ছড়াচ্ছে। ত্রিপুরা পুলিশের চোখের সামনে ত্রিপুরায় ওরা আমাদের দফতর ভাঙচুর করেছে। তাদের প্রতিশোধমূলক এবং আইন-শৃঙ্খলাবিহীন মানসিকতারই পরিচয় দিয়েছে।’’
সাংসদ, মন্ত্রী মিলিয়ে মোট ছ’জনের দল পাঠাচ্ছে তৃণমূল। সেই দলে থাকবেন জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, যাদবপুরের সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ, মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসগা, কুণাল ঘোষ এবং টিএমসিপি নেতা সুদীপ রাহা।
প্রসঙ্গত, মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার আগরতলার বনমালিপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূলের অভিযোগ, সেই বিক্ষোভ মিছিল থেকেই তাদের ত্রিপুরার রাজ্য কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। আরও অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বিজেপির লোকজনেরা তৃণমূলের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন।
তৃণমূলের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার সুর বেঁধে দিয়েছিলেন, আর সেই রেশ ধরেই ত্রিপুরায় হামলা চালিয়েছেন বিজেপির লোকেরা। তাদের ফেসবুক পোস্টে মঙ্গলবার এই হামলা প্রসঙ্গে তৃণমূল বলেছে, ‘‘ত্রিপুরার কার্যালয়ে বিজেপি-সমর্থিত দুষ্কৃতীদের হামলা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। এটি গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আঘাত। বিজেপি মুখে বলে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’, অথচ একের পর এক রাজ্যে তার ভিত্তিটাকেই জ্বালিয়ে দিচ্ছে।’’ পাল্টা ত্রিপুরা বিজেপির মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘কোনও হামলা হয়নি। বিক্ষোভ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে যে জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম করেছে তৃণমূল, তার প্রতিবাদে মানুষ ফুঁসছে।’’
এই বনমালিপুর বিধানসভা থেকেই ভোটে জিতে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হন বিপ্লব দেব। ঘটনাচক্রে, বর্তমান সাংসদ বিপ্লব বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের জন্য বিজেপির সহপর্যবেক্ষেক। সাংসদ খগেনকে দেখতে উত্তরবঙ্গেও গিয়েছিলেন বিপ্লব। তবে বিজেপির তরফে পাল্টা অভিযোগ উঠছে, তৃণমূল জনজাতির এক প্রতিনিধিকে মারধর করেছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার দুর্যোগ-বিপর্যস্ত জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপির দুই প্রতিনিধি। সবচেয়ে বেশি জখম হন খগেন। মারের চোটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে তাঁর মুখ থেকে। শঙ্করকেও ধাক্কা দিয়ে চড়-ঘুষি মারার চেষ্টা হয়। শঙ্করের অভিযোগ, কয়েক জন ‘দিদি-দিদি’ বলতে বলতে পিছন থেকে তাঁদের আক্রমণ করেন। বর্তমানে খগেন এবং শঙ্কর হাসপাতালে রয়েছেন। খগেনের বাঁ চোখের নীচের হাড়ে আঘাত লেগেছে বলে জানা যায়। স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর তুঙ্গে। নাগরাকাটায় ওই ঘটনার নিন্দা করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘যে ভাবে আমাদের দলের সহকর্মীরা— যাঁদের মধ্যে এক জন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন—পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।’’