দু’টোই ছিল রেডারের আওতায়। তা সত্ত্বেও তারা প্রায় পরস্পরের ঘাড়ের উপরে এসে পড়েছিল! শেষমেশ অবশ্য বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে। বরাতজোরে এক চুলের জন্য ভয়ানক দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো-র দুই বিমান।
গত ১১ জুলাই বিহারের কাটিহারের আকাশে ঘটে যাওয়া এ হেন কাণ্ডের তদন্তে নেমে দেশের বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ (ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন)-র অফিসারেরা দেখেছেন, সেই সময়ে দু’টি বিমানের সঙ্গেই বাগডোগরা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর যোগাযোগ ছিল। তা সত্ত্বেও কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তদন্তকারীদের তা মাথায় ঢুকছে না। প্রাথমিক ভাবে আঙুল উঠেছে সংশ্লিষ্ট এটিসি অফিসারের দিকে। ডিজিসিএ-কর্তাদের অনুমান, সে দিন দুই বিমানের তিন শতাধিক যাত্রীর প্রাণরক্ষার পিছনে দুই বিমানের পাইলটদের তৎপরতারও ভূমিকা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাগডোগরা বিমানবন্দরের এটিসি বায়ুসেনার অধীনে। বায়ুসেনার অফিসারেরাই সেখান থেকে বিমানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই বায়ুসেনাও পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নেমেছে। বায়ুসেনার মুখপাত্র গ্রুপ ক্যাপ্টেন জেরাল্ড গলভে শুক্রবার বলেন, “আর ক’দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ হয়ে যাবে। আমাদের কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঠিক কী হয়েছিল সে দিন?
বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: ২৪ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে বাগডোগরা থেকে দিল্লি যাচ্ছিল ইন্ডিগো-র বিমান। উল্টো পথে দিল্লি থেকে বাগডোগরা আসছিল এয়ার ইন্ডিয়া, যে ছিল কিনা ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায়। আচমকা ইন্ডিগো আরও উপরে উঠতে শুরু করে। বায়ুসেনা-সূত্রের খবর: তাকে ৩০ হাজার ফুট উঁচুতে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এটিসি-র অনুমতি পেয়ে বিমানটি ডান দিকে বেঁকে উঠতে শুরু করে। এবং উঠতে-উঠতে এয়ার ইন্ডিয়া-র ৭০০ ফুটের মধ্যে চলে আসে!
নিয়ম হল, এক আকাশে দুই বিমানের মধ্যে উচ্চতার ফারাক থাকতে হবে অন্তত এক হাজার ফুট। এই অবস্থায় দুই বিমানের ককপিটেই বিপদ সঙ্কেত যায়। ইন্ডিগো-র পাইলট তড়িঘড়ি মুখ ঘুরিয়ে ২৪ হাজার ফুটের নীচে নেমে আসেন। কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার থাবা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বাগডোগরা এটিসি অফিসারের মনিটরে যখন দুই বিমানেরই গতিবিধি ফুটে উঠছিল, তখন তিনি ইন্ডিগো’কে উপরে ওঠার অনুমতি দিলেন কোন যুক্তিতে? এরই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। বিমানবন্দর-কর্তারা জানাচ্ছেন, কিষাণগঞ্জের উত্তরের আকাশে ২৪ হাজার ফুট পর্যন্ত উঁচু দিয়ে যত বিমান উড়ে যায়, সকলে বাগডোগরা এটিসি-র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। তবে তাদের ২৪ হাজার ফুটের উপরে ওঠার অনুমতি বাগডোগরা একতরফা দিতে পারে না, সে ক্ষেত্রে কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসি-র সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলতে হয়। বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: ১১ জুলাইও বাগডোগরার এটিসি অফিসার ফোনে কথা বলেছিলেন কলকাতা এটিসি-র সঙ্গে। সে তল্লাটের আকাশে তখন আর কোনও বিমান আছে কি না জানার জন্য কাঠমান্ডুু বিমানবন্দরের এটিসি-র সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। কাঠমান্ডুু জানায়, ওই রুটে অন্য বিমান নেই। এ দিকে কলকাতা বিমানবন্দর-সূত্রের দাবি: ২৫ হাজার ফুট দিয়ে একই রুটে উল্টো পথে এয়ার ইন্ডিয়া-র বিমান ওড়ার কথা জানতে পেরেই বাগডোগরা এটিসি-কে বলা হয়েছিল, এয়ার ইন্ডিয়া পেরিয়ে যাওয়ার পরে ইন্ডিগো’কে উচ্চতাবৃদ্ধির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
আর এখানেই বাগডোগরা এটিসি ভুল করে বসে বলে প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়েছে। তদন্তকারী-সূত্রের দাবি: এয়ার ইন্ডিয়া-র বিমান পেরিয়ে যাওয়ার আগেই তারা ইন্ডিগো’কে উপরে ওঠার অনুমতি দিয়ে দেয়। কী ভাবে দিল, অভিজ্ঞ এটিসি-কর্তারাও তা ভেবে পাচ্ছেন না। “বায়ুসেনার এটিসি অফিসার দুই বিমানের অবস্থান নিজের মনিটরে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলেন! তাঁর তো বোঝার কথা যে, ইন্ডিগো’কে উপরে উঠতে বললে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে!” মন্তব্য ওঁদের এক জনের। দুর্ঘটনার মুখ থেকে ফিরে ইন্ডিগো’র পাইলট সে দিন দিল্লি পৌঁছেই ব্যাপারটা ডিজিসিএ-র গোচরে আনেন। ডিজিসিএ তদন্তে নেমে দুই বিমানের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ও ককপিট ডেটা রেকর্ডারের সব তথ্য বাজেয়াপ্ত করে। কলকাতা ও বাগডোগরা এটিসি-র তথ্য সংবলিত ‘টেপ-ট্রান্সস্ক্রিপ্ট’ও ডিজিসিএ-র হাতে এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy