Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
United Nations

কোভিড-বৃদ্ধি! ভারতকে নিয়ে উদ্বিগ্ন রাষ্ট্রপুঞ্জ

ছবি পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২১ ০৬:৩৫
Share: Save:

দু’দিন আগে একটি মামলার সূত্রে আমেরিকায় পুলিশের হাতে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটির কথা তুলেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতিরা। বলেছিলেন, ‘‘দেশের মানুষের অবস্থা জর্জ ফ্লয়েডের মতো। তাঁরা শ্বাস নিতে পারছেন না।’’ আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের বিবৃতিতেও যেন একই সুর। ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের সমীক্ষা অনুয়ায়ী আমেরিকা ও ব্রাজিলের পরে তৃতীয় দেশ হিসেবে ভারতে আজ কোভিডে মৃতের সংখ্যা তিন লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। আর তার কিছু আগে উদ্বিগ্ন মহাসচিব বলেছেন, ‘‘ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা ও অন্যান্য এলাকায় কোভিডের সাম্প্রতিক বৃদ্ধির পরে দেখা যাচ্ছে, আমাদের চোখের সামনে খাবি খাচ্ছে মানুষ। অতিমারি পুরোমাত্রায় আমাদের সঙ্গে রয়েছে। তা বাড়ছে, নিজেকে পাল্টাচ্ছে।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য শীর্ষ সম্মেলনে এই বিবৃতি দিয়েছেন গুতেরেস। তাতে তিনি বলেছেন, প্রতিষেধক থেকে শুরু করে পরীক্ষা, চিকিৎসা, অক্সিজেন-সহ জরুরি সামগ্রীর সরবরাহে অসাম্য দেখা যাচ্ছে। এর ফলে গরিব দেশগুলি অতিমারির হাতের পুতুল হয়ে রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ লড়তে হলে যুদ্ধকালীন অর্থনীতির নিয়ম মেনে অস্ত্রের ব্যবস্থাও করতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘জি-২০ গোষ্ঠীর দেশগুলি দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসুক। দরাজহস্ত হোক তারা। একশো কোটি বিনিয়োগ করলে হাজার কোটি বাঁচবে, জীবনও বাঁচবে।’’ অতিমারির অবসানে টিকাকরণের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশিই তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বের টিকার ৮২ শতাংশের বেশি গিয়েছে ধনী দেশগুলির কাছে। নিম্ন আয়ের দেশগুলি পেয়েছে মাত্র ০.৩ শতাংশ টিকা। গুতেরেসের আবেদন, টিকা উৎপাদক দেশগুলি একজোট হয়ে টাস্ক ফোর্স তৈরি গড়ে তুলুক। ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগের সাহায্যে টিকার সুষম বণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক।

টিকার অভাবে গত কাল ১৮-৪৪ বছরের টিকাকরণ বন্ধ হয়েছে দিল্লিতে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরাসরি টিকা আমদানির চেষ্টায় নেমে পড়েছে। সেই রাস্তায় সামান্য হোঁচট খেয়েছে পঞ্জাব। আমেরিকান সংস্থা মডার্নার থেকে প্রতিষেধক কিনতে চেয়েছিল অমরেন্দ্র সিংহের সরকার। কিন্তু মডার্না সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দিয়েছে, নিজস্ব নীতি অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র ভারত সরকারের সঙ্গেই কথাবার্তা বলবে। তাতে হাল না-ছেড়ে রাজ্যের টিকাকরণ সংক্রান্ত নোডাল অফিসার বিকাশ গর্গ জানিয়েছেন, স্পুটনিক-ভি, ফাইজ়ার বা জনসন অ্যান্ড জনসনের মতো সংস্থার টিকা গ্লোবাল টেন্ডারের মাধ্যমে কেনার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা নেমে এসেছে ২.৪০ লক্ষে। দৈনিক মৃত্যুও কমে হয়েছে ৩৭৪১। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল জানিয়েছেন, রাজধানীতে লকডাউনের মেয়াদ ৩১ মে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। সংক্রমণ কমলে ধাপে ধাপে লকডাউন তোলা হবে। তিনি জানান, দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১৬০০ জনের। সংক্রমণের হার এপ্রিলে ৩৬ শতাংশ ছিল, যা এখন ২.৫ শতাংশে নেমেছে। আরও এক সপ্তাহ— এই নিয়ে চার বার লকডাউন বাড়িয়েছে হরিয়ানা।

কর্নাটকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমিত শিশুদের সংখ্যা প্রথম ঢেউয়ের সময়কার দ্বিগুণেরও বেশি। তৃতীয় ঢেউ থেকে তাদের বাঁচানোর লক্ষ্যে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠির নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। শিশুদের জন্য প্রচুর কোভিড কেয়ার সেন্টারও তৈরি হয়েছে। গত কাল কেন্দ্রের সাংবাদিক বৈঠকে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, স্তন্যদায়িনী মায়েরা টিকা নিতে পারবেন। টিকা নেওয়ার পরে শিশুকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখার কোনও দরকার নেই। গর্ভবতীদের টিকাকরণের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কেন্দ্রের উপদেষ্টা কমিটি। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একাংশ গর্ভবতীদের সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে তাঁদের টিকাকরণের পক্ষেই সওয়াল করছেন। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন যে, প্রসবের পরে যে কোনও সময়েই মায়েরা টিকা নিতে পারবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India United Nations coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE