Advertisement
E-Paper

শনিবার বাজেট পেশ, শ্লথ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ‘সমাজতান্ত্রিক’ মডেল কি ছাড়তে পারবেন মোদী?

তৃতীয় বার দিল্লি দখলের পর সংসদে দ্বিতীয় বাজেট পেশ করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। অনেকের আশা, চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে কিছু দাওয়াই রাখবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩০
Union budget 2025: Finance Minister Nirmala Sitharaman will present the Budget on Saturday

(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

অর্থমন্ত্রী হিসাবে মনমোহনি সিংহ-সাহস কি দেখাতে পারবেন নির্মলা সীতারমন? না কি জনতার মনমোহিনী হতে চেয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির ‘কঠোর’ সোপান থেকে যথারীতি এ বারও মুখ ফিরিয়ে থাকবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার?

উত্তর মিলবে শনিবার। তৃতীয় বার দিল্লি দখলের পর সংসদে দ্বিতীয় বাজেট পেশ করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। অনেকের আশা, চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে কিছু দাওয়াই রাখবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অন্য দিকে, লগ্নিকারীরা। তাঁদের প্রশ্ন, ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে, দীর্ঘমেয়াদি সুফলের জন্য এ বার কি খানিক ঝুঁকি নিয়ে ‘সমাজতান্ত্রিক’ বা ‘জনদরদি’ মডেল থেকে বেরোতে পারবে মোদী সরকার? সব পক্ষই আপাতত শনিবারের বাজেটের দিকে তাকিয়ে।

দেশের অর্থনীতি যে থমকে রয়েছে, সে ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করছে না কোনও মহলই। একাধিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন পণ্যের চাহিদায় ভাটা পড়েছে। ধারাবাহিক ভাবে বিক্রি কমায় নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য (চা, কফি, কেক, বিস্কুট, তেল, সাবান, শ্যাম্পু) তৈরির সংস্থাগুলিও বেশ কিছু দিন ধরে বিপাকে। ফলে মাথা নামিয়েছে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার। কারণ মূলত মূল্যবৃদ্ধি। বেড়ে যাওয়া খরচের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না বহু মানুষের আয়। ফলে কেনাকাটায় কাটছাঁট। চাহিদায় খরা। তা দেখে ভারতের শেয়ার বাজার ছাড়ছে বিদেশি লগ্নিকারীরা। পড়ছে সূচক। হু হু করে ডলার বেরিয়ে যাওয়ায় পতনের নজির গড়েছে টাকার দাম। আমদানি খরচ বাড়ায় প্রতি সপ্তাহেই কমছে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার।

অর্থনীতি যে শ্লথ, তার ইঙ্গিত মিলেছে কেন্দ্রের আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্টেও। শুক্রবার প্রকাশিত হওয়া সেই রিপোর্টে ২০২৫-’২৬ আর্থিক বছরে জিডিপির হার নিম্নমুখী হওয়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। অনুমান, জিডিপির হার থাকতে পারে ৬.৩ থেকে ৬.৮ শতাংশের মধ্যে।

এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এ বার অন্তত খানিক ঝুঁকি নিয়ে ঝোড়ো ব্যাটিং করা জরুরি মোদী সরকারের। বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া জরুরি শিল্পে। সেটা করতে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু উন্নতি চাইলে সেটুকু ঝুঁকি নিয়েই এগোতে হবে সরকারকে। আখেরে, দীর্ঘমেয়াদি পথে সেটাই দেখাতে পারে চাঙ্গা অর্থনীতির পথ।

অনেকেই মনে করেন, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত বড় কোনও সংস্কারের পথে হাঁটতে দেখা যায়নি মোদী সরকারকে। বাজেটে বরাবরই ভারসাম্যের দিকে বেশি নজর দিয়েছে তারা। বরাবরই জনমুখী মডেল মেনে তাদের বাজেট তৈরি হয়েছে। স্বাধীনতার পর দু’বার ব্যতিক্রমী বাজেট দেখা গিয়েছে। এক বার প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাওয়ের সরকারের আমলে। সেই সময় দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিংহ। ১৯৯১ সালে তাঁর পেশ করা বাজেটে অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে হাঁটতে শুরু করে ভারত। বেশ কিছু সংস্কারের পথে হেঁটেছিলেন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মনমোহন বা তার পরে মোদীর সরকারকে কখনওই সে রকম ঝুঁকি নিতে যায়নি বলেই মত শিল্পমহলের।

সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, অর্থনীতির চাকার গতি যে ভাবে কমতে শুরু করেছে, তাতে শিল্পমহলকে বিশেষ 'সুবিধা' দেওয়াটা অবশ্যই জরুরি। বিশেষ করে বেসরকারি শিল্পসংস্থাগুলিকে। কারণ, তেল ছাড়া অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে সরকার যে লগ্নি করে, সেখান থেকে মুনাফা কম। এলআইসি (জীবনবিমা), এসবিআই (স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া) এবং স্টিল অথরিটি— সব সংস্থার ক্ষেত্রেই সে কথা প্রযোজ্য। সরকারি সংস্থায় দক্ষতা এবং কর্মতৎপরতার অভাবই এর প্রধান কারণ। প্রতিযোগিতার মুখে পড়লে এলআইসির মতো সরকারি সংস্থাও বিপাকে পড়ে। তাই এ বার বাজেটে বেসরকারি শিল্পমহলের উন্নতিতে জোর দিয়ে দেখা যেতে পারে বলেই তাঁদের পরামর্শ।

অনেকের মত, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর শক্তিকান্ত দাস দ্রুত রান তোলায় নয়, বরাবর উইকেট বাঁচিয়ে খেলতেই পছন্দ করতেন। মূল্যবৃদ্ধি সামলানোই তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রের নজর আর্থিক বৃদ্ধিতেই। এখন দেখার, অর্থমন্ত্রী সীতারামন কোন পথে হাঁটেন? মূল্যবৃদ্ধি সামাল দেবেন, না কি অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে শিল্পের পক্ষে বিশেষ কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন?

বিষয়টি নিয়ে সরকারও যে খানিক দোটানায় রয়েছে, তা অস্বীকার করছেন না কেউই। অনেকের বক্তব্য, এ বারও ভারসাম্য বজায় রেখেই বাজেট তৈরি করতে পারে কেন্দ্র। কারণ, তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরলেও বিজেপি এ বার একার জোরে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। মোদী সরকার এই প্রথম শরিক-নির্ভর। তার ফলে কোনও সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দু’বার তারা ভাববে। এ ক্ষেত্রে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করার বিষয়ও থাকে। এত সব সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে এ বারের বাজেট বানাতে হবে সীতারামনকে।

শিল্প-বাণিজ্য মহলের অনেকের পরামর্শ, কর্মসংস্থান বাড়াতে ও নিচুতলার মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে ব্যয় বৃদ্ধি জরুরি। প্রয়োজন পরিকাঠামো শিল্পে মূলধনী খাতে অনেক বেশি টাকা ঢালা। এতে সিমেন্ট, ইস্পাত শিল্প চাঙ্গা হবে। অনেকেই কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছেন যে, এ বছর যেন অবশ্যই সাধারণ মানুষকে আয়করে একটু বেশি ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়। করমুক্ত আয় ৩ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ পর্যন্ত করা হোক। ১৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে কমানো হোক করের হার। ব্যাঙ্ক শিল্পের দাবি, মেয়াদি আমানতে কর ছাড় দেওয়ার কথা ভাবুক কেন্দ্র। পুরনো ব্যবস্থায় জীবনবিমা বা আবাসন ঋণে যে করছাড় মেলে, তা আসুক নতুন নিয়মেও। পাশাপাশি, শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করতেও কেন্দ্র কিছু পদক্ষেপ করবে বলে আশা লগ্নিকারীদের।

অনেকেরই মত, সারা পৃথিবীতেই এখন আমলাতান্ত্রিকতা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণের বেড়াজাল থেকে বেরোনোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমেরিকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে সেই যাত্রারই ইঙ্গিত। ভারত কি পারবে সেই পথে হাঁটতে?

Union Budget 2025 Budget session Nirmala Sitharaman PM Narendra Modi Economic Survey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy