অহমদাবাদে আছড়ে পড়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের জ্বালানির সুইচ ‘কাট অফ’ (বন্ধ) হল কী ভাবে? দুর্ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার দায় কার, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে এই বিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে নারাজ কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী কে রামমোহন নায়ডু। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে আরও পোক্ত প্রমাণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
বিমান দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্তকারী সংস্থা ‘এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’ (এএআইবি) শনিবার তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে জ্বালানি সুইচ বন্ধ হওয়া নিয়ে দুই পাইলটের মধ্যে শেষ মুহূর্তের কথোপকথনও প্রকাশ্যে এসেছে। আচমকাই ওই সুইচটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন এক পাইলট অপরকে প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন তুমি বন্ধ করে দিলে (জ্বালানি)?’’ অন্য জন উত্তর দেন, ‘‘আমি করিনি।’’ তবে কোন পাইলট কী বলেছিলেন, তা প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্ট নয়।
এএআইবি-র ওই রিপোর্ট প্রসঙ্গে শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নাইডু বলেন, “আমাদের এই বিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছোনো উচিত বলে আমি মনে করছি না। আমার বিশ্বাস, গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভাল পাইলট এবং বিমানকর্মীরা আমাদের (ভারতের) কাছে রয়েছেন। তাঁরা হলেন অসামরিক বিমান পরিবহণের মেরুদণ্ড। তাঁরা অসামরিক বিমান পরিবহণের প্রাথমিক সম্পদ। পাইলটেরা যাতে ভাল থাকেন, সুস্থ থাকেন, সেটাও আমরা দেখি। তাই এখনই কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করুন।”
কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রীর কথায়, “এটির মধ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। তাই এই রিপোর্টটি সম্পর্কে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। প্রাথমিক রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। কিন্তু পোক্ত কিছু আসার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”
গত ১২ জুন গুজরাতের অহমদাবাদ থেকে লন্ডনের কাছে গ্যাটউইক বিমানবন্দরের দিকে রওনা দিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমান। অহমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড়ানের কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে সেটি। দুর্ঘটনায় ২৬০ জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী। তিনিও ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানেই সওয়ার ছিলেন। গত মাসে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মুরলীধর মোহোল জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনার নেপথ্যে কোনও নাশকতার ছক রয়েছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মোহোল ওই সময় বলেছিলেন, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এএআইবি তদন্ত শুরু করেছে। সব দিক তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এমনকি, নেপথ্যে নাশকতার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি সংস্থা এই নিয়ে কাজ করছে।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই দুর্ঘটনাকে ‘বিরল’ বলেও বর্ণনা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘একসঙ্গে দু’টো ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা আগে কখনও হয়নি।’’ শনিবার প্রকাশ্যে আসা এএআইবি-র প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে, দুই পাইলটই শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের শারীরিক দিক থেকে কোনও ত্রুটি ছিল না।
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইঞ্জিন-১ এবং ইঞ্জিন-২ রানওয়ে ছাড়ার পরেই বন্ধ হয়ে যায়। বিমানটি যখন গতি নিয়ে নিয়েছে, ঠিক সেই সময়ে দু’টি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইঞ্জিনে জ্বালানি পৌঁছোচ্ছিল না। মুহূর্তের মধ্যে বিমানের গতি এবং উচ্চতা কমতে থাকে। পাইলটেরা সেই মুহূর্তে দু’টি জ্বালানির সুইচই আবার ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’-এ নিয়ে এসেছিলেন। ইঞ্জিন চালু করার মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। ইঞ্জিন-২ সাময়িক ভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেওছিল। কিন্তু ইঞ্জিন-১ আর চালু করা যায়নি। পাওয়া যায়নি ‘থ্রাস্ট’। পরিণতি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা।