Advertisement
০৬ মে ২০২৪
National News

দিল্লিতে পাটের অভিনব মণ্ডপ সংরক্ষণের চেষ্টা

পুজোর মুখে একের পর এক চটকল বন্ধ হয়ে যেতে শুনেছেন প্রবাসীরা। এ বারে একেবারে অষ্টমীর দিন হুগলির গোন্দলপাড়ার চটকল বন্ধের খবরে রীতিমতো আঁতকে উঠেছেন তাঁরা।

অভিনব পাটের মণ্ডপ।—নিজস্ব চিত্র।

অভিনব পাটের মণ্ডপ।—নিজস্ব চিত্র।

অপরাজিতা মৈত্র
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৬ ১৫:৩১
Share: Save:

গঙ্গার বিষাদ একদিন আগেই আছড়ে পড়ল যমুনার তীরে।

রাত পেরোলেই দশমী। মায়ের চলে যাওয়ার পালা। অপেক্ষা আরও একটি বছরের। কিন্তু অষ্টমীর দিন গঙ্গাপারের আর একটি চটকল বন্ধের খবর বিষাদ ছড়াল রাজধানী দিল্লিতেও।

শিয়ালদহ থেকে লালগোলা। এই পথেরই একঝাঁক বাঙালি নানা সময়ে নোঙর বেধে ধীরে ধীরে জড়ো হয়েছে যমুনার তীরে। আজ তাঁরাই একজোট হয়ে দুর্গা আরাধনা করেন আরামবাগের পুজোয়। বাংলায় চটশিল্প ধুকছে। পুজোর কমিটির অধিকাংশেরই পরিবারের কেউ না কেউ জড়িয়ে আছেন এই চটশিল্পের সঙ্গে। আর তাই এ বারে আরামবাগ পুজো সমিতির থিমও করা হয়েছিল পাট দিয়ে। প্রতিমা থেকে মণ্ডপ- গোটাটাই পাটের মোড়ক।

পুজোর মুখে একের পর এক চটকল বন্ধ হয়ে যেতে শুনেছেন প্রবাসীরা। এ বারে একেবারে অষ্টমীর দিন হুগলির গোন্দলপাড়ার চটকল বন্ধের খবরে রীতিমতো আঁতকে উঠেছেন তাঁরা। পুজো কমিটির কর্ণধার অভিজিত বসু বললেন, “কারখানা বন্ধ হলে পরিবারগুবলির কী অবস্থা হয়, আমরা বুঝি। প্রতিবারই বাড়ি গিয়ে দেখি কোনও না কোনও জুটমিল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একসময় বাংলা ও বাঙালির সেরা শিল্প ছিল চট। আর সেটিই এখন ধুঁকছে। সে সব ভেবেই তো এ বারে পুজোয় আমরা সেই শিকড়ের খোঁজে নেমেছিলাম। আপাদমস্তক পাটে মোড়ানো আমাদের মণ্ডপ।”

গঙ্গার জল একে একে দু-পারের সাইরেনগুলি শোনা বন্ধ করেছে। যমুনার তীরে সেই স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতেই বাংলা থেকে শিল্পীদের এনে এ বারে সব কিছু বানানো হয়েছে দিল্লির আরামবাগের পুজোয়। গৌরাঙ্গ কুইলা তৈরি করেছেন ১৩ ফুট লম্বা পাটের দুর্গা প্রতিমা। মণ্ডপের ভিতরে মানানসই গল্পকথা বেছে নেওয়া হয়েছে রামায়ণ থেকে। পাটের থিমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে পুজোর ক’দিন আয়োজন করা হয়েছে পাট শিল্পীদের প্রদর্শনী। মণ্ডপ চত্বরে বসেই তাঁরা বানাচ্ছেন নানান সামগ্রী। এর জন্য সাহায্য নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকেরও।

সংরক্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে এই প্রতিমাটিকেই।—নিজস্ব চিত্র।

তাই বিসর্জন হলেই আরামবাগের এই স্মৃতি মুছে যাক, তা চাইছেন না কর্মকর্তারা। চেষ্টা করা হচ্ছে, দশমীর পরেও বেঁচে থাকুক এই সৃষ্টি। দিল্লির জাতীয় সংগ্রহশালায় তাই অনুরোধ করা হয়েছিল, যাতে তারা এই প্রতিমা তাদের কাছে রেখে দেয়। সদ্য কালই সংগ্রহশালার লোকজন প্রতিমা ঘুরে দেখে গিয়েছেন। বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাষ্ট্রপতি ভবনেই একটি সংগ্রহশালার উদ্বোধন করা হয়েছে সদ্য। চেষ্টা হচ্ছে, সেখানেও যদি রাখা যায় এই প্রতিমা।

উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ বেসরকারি ক্ষেত্রেও এটি বেচে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাতে অন্তত বাড়তি লাখ দু’য়েক টাকা পাওয়া যাবে। দিল্লির ঝা-চকচকে বিমানবন্দরে এমন শিল্পকৃতি অনেক সময়ই ঠাঁই পায়। কিন্তু সেখানে ঝক্কি অনেক। দরপত্র ডেকে সেটি নিতে পেরতে হয় একটি সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া। পুজোর প্রথম তিনদিনে বেশ কিছু শিল্পপতিও দেখে গিয়েছেন প্রতিমা। দিল্লি মেট্রো কর্তৃপক্ষও প্রাথমিক উতসাহ দেখিয়েছে। দিল্লি বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত যে ঝক্কি আছে, সেই সমস্যা নেই দিল্লি মেট্রো রেলের।

লক্ষ্য একটাই, বাংলার মানচিত্র থেকে পাটশিল্প যতই ধীরে ধীরে মুছে যাক, দিল্লির বুকে অন্তত বেঁচে থাকুক এক টুকরো বাংলা। গোটা দুনিয়া দেখুক বাংলার এই স্বর্ণালী ইতিহাস।

আরও পড়ুন: পাঁচ-পাঁচ নয়, দুর্গার হাত এখানে আট-দুই

আরও পড়ুন: দিল্লিতে বাড়ির পুজোতেও থিমের প্রতিমা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Durga Puja Puja Pandal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE