Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরপ্রদেশ জয়ে দলের মুখ তিনিই, বুঝিয়ে দিলেন মোদী

গোধূলির মায়াবী রঙের খেলায় তখন মেতেছে ত্রিবেণী সঙ্গম। আর তার সামনে হাজার হাজার লোকের হাতে হাতে জ্বলছে আলো। এ আলো মোবাইল ফোনের। প্রয়াগ শহরে অসমের জয় পালন করছেন উত্তরপ্রদেশবাসী। সঙ্গম তীরে ‘ইউপিওয়ালা’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আবেদনে।

উত্তরপ্রদেশে প্রধানমন্ত্রী। ছবি : এএফপি।

উত্তরপ্রদেশে প্রধানমন্ত্রী। ছবি : এএফপি।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
ইলাহাবাদ শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০২:৪১
Share: Save:

গোধূলির মায়াবী রঙের খেলায় তখন মেতেছে ত্রিবেণী সঙ্গম। আর তার সামনে হাজার হাজার লোকের হাতে হাতে জ্বলছে আলো।

এ আলো মোবাইল ফোনের। প্রয়াগ শহরে অসমের জয় পালন করছেন উত্তরপ্রদেশবাসী। সঙ্গম তীরে ‘ইউপিওয়ালা’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আবেদনে।

নিজের ঘরে কোন্দল। নেতায় নেতায় মারামারি মুখ্যমন্ত্রী মুখ হওয়ার। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের শেষ দিনে সদ্য তা নিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ এখন তাঁর পাখির চোখ। ঘরের দুর্দিনে গোবলয়ের সবথেকে বড় রাজ্যের ভোটের শঙ্খনাদ করতে গিয়ে নিজের হাতেই তাই রাশ তুলে নিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই মুখ। দু’বছর আগের নিজের সেই জাদুর মায়াজাল তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা করে ফিরিয়ে আনলেন সেই ঝাঁঝটি। কালের নিয়মে যা অনেকটাই ফিকে।

নিজের পুরনো ছন্দেই বললেন, “এক বার উত্তরপ্রদেশে পাঁচ বছরের জন্য সুযোগ দিন। নিজের স্বার্থে আপনাদের যদি কোনও লোকসান করি, তা হলে লাথি মেরে বের করে দিন।” প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ ভাষা শুনে অনেকেই হতচকিত হতে পারেন। কিন্তু এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদী আপাদমস্তক ইউপিওয়ালা। মাটির মানুষের সঙ্গে সুর মেলানোর ভাষা বিলক্ষণ জানেন। কোন সময় কোন অঙ্কে ঘুঁটি সাজাবেন, তাতেও পটু তিনি।

তাই মোদীর মুখে এই কথা শুনে বেশ কয়েক মিনিট ধরে ত্রিবেণীর তীরে গর্জে উঠল হাততালি।

তাই লালকৃষ্ণ আডবাণী আর মুরলীমনোহর জোশীকে দু’পাশে নিয়ে মঞ্চে বসলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রশংসায় ভরালেন উভয়কে। কে বলবে, বিহার হারের পর এই প্রবীণ মার্গদর্শক ব্রিগেডই বিদ্রোহে ফেটে পড়েছিলেন?

তাই বার বার তুলে ধরলেন কল্যাণ সিংহ আর রাজনাথ সিংহের মুখ্যমন্ত্রিত্বের কাল।

আরও পড়ুন: কালো টাকা নিয়ে শান্তিতে ঘুমোতে দেব না, দলীয় নেতাদের হুঁশিয়ারি মোদীর

তাই মুখে শুধু উন্নয়ন-উন্নয়ন করে গেলেও মঞ্চে বসালেন এমন সব নেতাকে, জাত-পাতের অঙ্ক যেখানে পুরোদস্তুর খাপ খায়।

মোদী করবেন উন্নয়ন, আর অমিত শাহ নরম হিন্দুত্ব। উত্তরপ্রদেশে বাজি মারার জন্য সেই পুরনো কৌশলই ফিরিয়ে আনছে মোদী-শাহ জুটি। তাই আগাগোড়া মোদী আজ উন্নয়নের নামে ভোট চেয়ে গেলেও অমিত শাহ তার আগেই টেনে এনেছেন এ রাজ্যের কায়রানায় হিন্দুদের পলায়নের প্রসঙ্গ। পরিবর্তনের আক্রোশ পুরে বলেছেন, এই কারণেই ‘উখড়ে ফেলতে হবে অখিলেশ সরকারকে’। আর মায়াবতী আর কংগ্রেসের মধ্যে যে ‘ইলু-ইলু’ চলছে, তাদের একমাত্র বিকল্প বিজেপিই। যে কারণে মোদীও বলেছেন, “দুনিয়ায় ভারতকে নাম্বার ওয়ান করতে হলে উত্তরপ্রদেশকেও নাম্বার ওয়ান হতে হবে। বিজেপিই তা পারে।”

কিন্তু এ সব ঝাঁঝ তো মঞ্চের চিত্রনাট্য। নরেন্দ্র মোদীকে এখন সবথেকে বেশি যেটি ভাবাচ্ছে, সেটি হল দলের ফাঁকফোকর, দুর্বলতাগুলি। সে কারণে আজ প্রকাশ্য জনসভার আগে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে একেবারে অন্য মোদীকে দেখেছেন দলের নেতারা। ভাষণ দিতে গিয়ে কখনও আবেগে জড়িয়ে এসেছে গলাও। বলেছেন, কোনও পদ বা ক্ষমতার জন্য কাজ করেন না তিনি। দল ও দেশের জন্যই সঁপে দিয়েছেন নিজেকে। ত্রিবেণীর তীরে যে ঝাঁঝালো স্লোগান দিয়েছেন, তার উল্টো পথেই হেঁটেই দলের বৈঠকে মোদী বলেছেন, “শুধু স্লোগান দিয়ে মানুষ সন্তুষ্ট হন না। দেশকে শক্তিশালী করতে হবে।” তার জন্য সাত দফা দাওয়াইও দিয়েছেন তিনি। সেবাভাব, সন্তুলন (ভারসাম্য), সংযম, সমন্বয়, সাকারাত্মক (ইতিবাচক), সংবেদনা ও সংবাদ।

বিজেপি শীর্ষ সূত্রের মতে, দলের মধ্যে এই সাতটি বিষয়ে খামতি রয়েছে বলেই আজ সেগুলি অবিলম্বে দূর করার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। দল ও কর্মীদের আচরণে শৃঙ্খলা আনতেই এটি প্রয়োজন। স্মরণাতীত কালে দলের কোনও কর্মসমিতির বৈঠকে এত নেতার পোস্টার দেখেননি দলের সিংহভাগ নেতা। সকলেই নেতা, কর্মী কেউ নন। কেউ কারও কথা মানেন না। অনেকেই এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য আকুল (পড়ুন বরুণ গাঁধী)। আজকে মোদীর সভাতেও বার বার ঘোষণা করতে হয়েছে, বিজেপির পতাকা ছাড়া আর কোনও পোস্টার দয়া করে তুলবেন না।

ঘরে আবেগ, বাইরে ঝাঁঝ। আপাতত দিল্লির রাস্তা লখনউ হয়ে নিয়ে যেতে এই মিশেলের কৌশলকেই কাজে লাগাতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে। বাইরের মুখও তিনি, ঘরের রাশও নিতে হচ্ছে নিজেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Uttarpradesh Lalkrishna Advani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE