ভারত-আমেরিকা কূটনৈতিক টানাপড়েনের মাঝেই শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক সারলেন ভারতে আমেরিকার হবু রাষ্ট্রদূত সার্জিয়ো গোর। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও পৃথক একটি বৈঠক হয় তাঁর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘিরে সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে চাপানউতর সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে মোদী এবং জয়শঙ্করের সঙ্গে গোরের বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
আমেরিকার ব্যবস্থাপনা ও জনসম্পদ দফতরের উপসচিব মাইকেল জে রিগাসের সঙ্গে ছ’দিনের সফরে ভারতে এসেছেন গোর। সম্প্রতি মার্কিন সেনেট ভারতে সে দেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে তাঁর নিয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও দায়িত্বগ্রহণ করেননি গোর। তার আগেই শনিবার দিল্লিতে এসে বৈঠক সেরে নিলেন আমেরিকার হবু রাষ্ট্রদূত।
গোরের সঙ্গে সাক্ষাতের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হোয়াইট হাউস থেকে মোদী এবং ট্রাম্পের যৌথ বিবৃতির একটি ছবিও প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন গোর। ওই ছবি উপহার পাওয়ার মুহূর্তটি সমাজমাধ্যমে পোস্টে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিত (ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত) হিসাবে গোরের আমলে ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।’
ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে যে কূটনৈতিক জট তৈরি হয়েছে, তার একটি অন্যতম কারণ হল রাশিয়ার সঙ্গে দিল্লির বাণিজ্যিক সম্পর্ক। রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা পছন্দ নয় ট্রাম্পের। তবে সম্প্রতি গোর আভাস দিয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের জট কাটতে পারে। তিনি চান, আমেরিকা থেকেও তেল এবং পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য কিনুক ভারত। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার কথাবার্তা চলছে বলেও সম্প্রতি দাবি করেন তিনি। এ অবস্থায় ভারতে এসে জয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা সেরে নিলেন গোর।
আরও পড়ুন:
দু’জনের মধ্যে বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তবে জয়শঙ্কর ওই বৈঠকের ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘আজ (ভারতে) আমেরিকার হবু রাষ্ট্রদূত সার্জিয়ো গোরের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করলাম। ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক এবং এর বৈশ্বিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’ গোরকে ভারতে তাঁর নতুন দায়িত্বের জন্যও শুভেচ্ছা জানান জয়শঙ্কর।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার মাঝেই ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেন ট্রাম্প। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চেপেছে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে। ট্রাম্প প্রশাসেনর এই সিদ্ধান্তের শুরু থেকেই বিরোধিতা করে এসেছে ভারত। নয়াদিল্লি বার বার স্পষ্ট করে দিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এরই মধ্যে গত সপ্তাহেই দিল্লিতে এক আলোচনাসভায় জয়শঙ্কর জানান, বাণিজ্য নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে সমস্যার সমাধানের জন্য ভারত সক্রিয় ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জয়শঙ্করের মত, ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যে একটি সমঝোতা থাকা প্রয়োজন। তবে ভারতের উপর চাপানো মার্কিন শুল্ক যে অন্যায্য, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।