আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে ভারত সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরতে চাইবে। শুল্ক ঘিরে টানাপড়েনের আবহে এই দাবি করলেন আমেরিকার বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটনিক!
কেন তাঁর এমন ধারণা হল? মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুটনিকের মন্তব্য, ‘‘আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় উপভোক্তা। আর বিশ্ববাণিজ্যে উপভোক্তাই শেষ কথা।’’ সে কারণে ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে চাইবে বলে তাঁর দাবি। গত ২৭ অগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের যুক্তিও দিয়েছেন মার্কিন বাণিজ্যসচিব। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভারত তার বাজার উন্মুক্ত করতে চায় না। রাশিয়ার কাছ থেকে পণ্য কেনা বন্ধ করতেও রাজি নয়। আবার ‘ব্রিকস’ (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চিনের বাণিজ্যিক জোট)-ও ছাড়তে চায় না।’’
আরও পড়ুন:
ভারতের উপর জরিমানা-সহ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরে ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘ভারত এবং রাশিয়া, দুই দেশের অর্থনীতিই মৃত! চাইলে এই দুই দেশ আরও অর্থনৈতিক অধোগতির পথে হাঁটতে পারে।’’ তার পরে আবার নয়াদিল্লি-মস্কো বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া এল ওয়াশিংটন থেকে। গত সপ্তাহে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও)-এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিয়েনজ়িনে গিয়ে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার সকালে ট্রাম্প তিন রাষ্ট্রনেতার এসসিও সম্মেলনের একটি ছবি পোস্ট করেন। তাতে লেখেন শুধু দু’টি লাইন, ‘‘মনে হচ্ছে, আমরা ভারত আর রাশিয়াকে গভীরতম, অন্ধকারতম চিনের কাছে হারিয়ে ফেলেছি। ওদের ভবিষ্যৎ দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ হোক, এই কামনা করি।’’
যদিও সে রাতেই হোয়াইট হাউসে একটি সাংবাদিক বৈঠকে মোদীর সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্প জানান, ভারতকে ‘হারিয়ে ফেলেছেন’ বলে মনে করেন না তিনি। তবে সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত অনেক তেল কিনছে। এতে আমি খুব হতাশ। সেটা ওদের জানিয়েও দিয়েছি।’’ প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে মার্কিন অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট জানিয়েছিলেন, মস্কো থেকে তেল কেনাই নয়াদিল্লির উপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের একমাত্র কারণ নয়! ‘‘দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা ভারতের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপের অন্যতম কারণ।’’ পাঁচ দফা আলোচনার পরেও কোনও রফাসূত্র না মেলায় আপাতত বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান ভারত কৃষিপণ্য, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিক। কিন্তু তাতে নারাজ নয়াদিল্লি। তাড়াহুড়োয় কেবল আমেরিকার সুবিধা হয়, এমন একপাক্ষিক চুক্তি করা হবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীও। এই আবহে মার্কিন বাণিজ্যসচিবের ‘দুঃখপ্রকাশ’-মন্তব্য বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিল বলেই মনে করছেন অনেকে।