রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না-করায় ভারতের উপর শুল্ক-জরিমানা চাপিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বার ভারতের কাছে তাঁর প্রশাসনের নতুন দাবি মার্কিন ভুট্টা কেনার! মার্কিন বিদেশসচিব হাওয়ার্ড লুটনিক ভারতকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, যদি আমেরিকায় উৎপাদিত ভুট্টা কিনতে রাজি না হয় তবে আমেরিকার বাজারে ব্যবসা করার সুযোগ হারাতে পারে নয়াদিল্লি! ‘অ্যাক্সিওস’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের শুল্ক-হুমকিও দিয়েছেন লুটনিক।
গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পরই ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিল ভারতও। তাঁর অভিযোগ ছিল, মার্কিন পণ্যে অনেক বেশি আমদানি শুল্ক নেয় ভারত। তারা যদি শুল্কের পরিমাণ না-কমায় তবে, ভারতীয় পণ্যের উপরও পারস্পরিক শুল্ক চাপানো হবে। সেই বিষয়টা মনে করিয়ে দিয়ে লুটনিক জানান, নয়াদিল্লি যদি তার শুল্ক না-কমায় তবে তাদের কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে।
লুটনিক আরও দাবি করেন, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক একমুখী। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত আমাদের কাছে জিনিস বিক্রি করে এবং আমাদের সুবিধা নেয়। কিন্তু ওরা তাদের অর্থনীতি থেকে আমাদের বিরত রাখে।’’ তার পরেই মার্কিন বিদেশসচিব বলেন, ‘‘ভারত তাদের ১৪০ কোটি নাগরিককে নিয়ে গর্ব করে। তা হলে কেন ১৪০ কোটি মানুষ এক বুশেল (৩৫.২ লিটার ধারণক্ষমতার একটি পরিমাপ) মার্কিন ভুট্টা কিনবে না? ওরা আমাদের কাছে সব কিছু বিক্রি করে, তবে কেন আমাদের ভুট্টা কিনবে না?’’ লুটনিকের দাবি, এত দিনে আমেরিকা তাদের দীর্ঘ দিন ধরে করা ভুল শুধরানোর কাজ শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:
ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে একটি বাণিজ্যচুক্তি হওয়ার কথা। বছরের প্রথম দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের সময় থেকেই এই বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনও কোনও পক্ষই বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারেনি। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে জটের মধ্যেই ভারতীয় পণ্যের উপর দু’দফায় ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ, ভারত তেল কেনায় যা লাভ করে, সেই টাকাই ইউক্রেন যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া। শুধু তা-ই নয়, নয়াদিল্লিকে রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করতেও বলে ওয়াশিংটন। কিন্তু ভারত সরকার তাতে রাজি হয়নি। তার পরেই ‘জরিমানা’ হিসাবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আমেরিকা। এই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে।
কয়েক দিনের কূটনৈতিক টানাপড়েনের পর ট্রাম্প গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন, তাঁর প্রশাসন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। এই নিয়ে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও কথা বলতে চান। মোদীও একই কথা জানান। সেই আবহে সোমবার রাতেই ভারতে আসছেন বাণিজ্যচুক্তি সংক্রান্ত মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রধান ব্রেন্ডন লিঞ্চ। মঙ্গলবার থেকেই বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা শুরু হবে দু’দেশের।