ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতি নিয়ে ফের মন্তব্য করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর দাবি, এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ বেধে যেতে পারত! কিন্তু তিনি পরিস্থিতি সে দিকে গড়াতে দেননি। ব্যবসার কথা বলেই তিনি সংঘর্ষ থামিয়েছেন বলেও ফের দাবি ট্রাম্পের।
আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোর মহাসচিব মার্ক রাটের সঙ্গে সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকের সময়েই বিভিন্ন সামরিক সংঘাত থামাতে আমেরিকার সাফল্যের কথা ব্যাখ্যা করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, “যুদ্ধ বন্ধ করতে আমরা খুবই সফল হয়েছি। এই যেমন ভারত এবং পাকিস্তান। যে ভাবে বিষয়টি এগোচ্ছিল, আরও এক সপ্তাহ (সংঘর্ষ চললে) ভারত এবং পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারত। পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল।”
এর পরেই ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি বাণিজ্যের কথা বলে দু’দেশের সংঘর্ষ থামিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম, আপনারা এ সব বন্ধ না করলে আপনাদের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কোনও কথা বলব না। তারা সে কথা শোনে। দু’দেশেই খুব ভাল নেতা রয়েছেন।”
বস্তুত, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। সোমবার রাতে নেটোর মহাসচিবকে তিনি যে কথাগুলি বলেছেন, সেগুলিও নতুন কোনও দাবি নয়। এই দাবি তিনি আগেও করেছেন। তবে নয়াদিল্লি বরাবরই ট্রাম্পের এই দাবি খণ্ডন করে এসেছে। ভারত বরাবরই জানিয়ে এসেছে ‘অপারেশন সিঁদুর’ বা তার পরবর্তী সংঘর্ষের সময়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বাণিজ্যের প্রসঙ্গ ওঠেনি।
গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও ফোনে কথা হয় ট্রাম্পের। প্রায় ৩৫ মিনিট কথা হয় দুই রাষ্ট্রনেতার। ওই ফোনালাপের পরে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জানান, ট্রাম্পকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত কারও মধ্যস্থতা মেনে নেবে না। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আলোচনাও যে ইসলামাবাদের অনুরোধেই হয়েছে, সে কথাও ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদী।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। প্রত্যাঘাতের অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ গত ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। এর পর পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায়। দুই দেশের মধ্যে টানা চার দিন সংঘর্ষ চলে। গত ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও) স্তরে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে এই সংঘর্ষবিরতি হয়।
কিন্তু, ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতির কথা প্রথম জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর পর একাধিক বার তিনি দাবি করেছেন, তাঁর মধ্যস্থতাতেই ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতি হয়েছে। তবে ভারত সরকার এই দাবি মেনে নেয়নি। বরং নয়াদিল্লি স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইসলামাবাদের অনুরোধেই পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ভারতের।