মুখে বার বার ভারত এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তা-ই নয়, দু’দেশের বাণিজ্যচুক্তি নিয়েও ইতিবাচক মন্তব্য শোনা গিয়েছে তাঁর কণ্ঠে। কিন্তু আদতে কি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চান ট্রাম্প? সম্প্রতি ‘দ্য ফিনান্সিয়াল টাইম্স’-এর এক প্রতিবেদেনে দাবি করা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) সামনে রেখে ভারতের উপর আরও শুল্ক চাপাতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুধু ভারত নয়, এই তালিকায় চিনকে রেখেছেন তিনি।
রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ‘জরিমানা’ হিসাবে ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ, তেল কিনে রাশিয়ার হাত শক্ত করছে ভারত। তেল বিক্রি করে যা মুনাফা করছে তা ইউক্রেন যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার! তাই রাশিয়াকে যদি যুদ্ধ থেকে বিরত করতে হয় তবে তাদের বন্ধুরাষ্ট্র চিন এবং ভারতের উপর শুল্ক-হামলা করতে হবে, এমনই মনে করছে ট্রাম্প প্রশাসন। দিন দুয়েক আগে মার্কিন অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট দাবি করেছিলেন, রাশিয়া এবং তার থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপর আরও শুল্ক এবং নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলির অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে! এই ধরনের অর্থনৈতিক পতনই কেবল রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পারে। সেই একই পথের কথা বললেন ট্রাম্পও।
‘দ্য ফিনান্সিয়াল টাইম্স’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ভারত এবং চিনের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটনে আমেরিকা এবং ইইউ প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল মঙ্গলবার। সেই বৈঠকেই এমন দাবি করা হয়েছে বলে খবর। বৈঠকে ট্রাম্পের ইচ্ছার কথা ইইউ প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনিক কর্তারা। ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রসঙ্গে এক মার্কিন কর্তার বলেন, ‘‘আমরা প্রস্তুত। এখনই আরোপ করতে পারি। তবে আমরা তখনই এটা করব যদি আমাদের ইউরোপীয় বন্ধুরা এগিয়ে আসেন।’’ ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে মার্কিন প্রতিনিধিদের আহ্বান, ‘‘সকলে মিলে শুল্ক আরোপ করি। যত ক্ষণ পর্যন্ত না ওরা (রাশিয়া, ভারত) রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করে, তত ক্ষণ বর্ধিত শুল্ক আরোপ থাকবে।’’
আরও পড়ুন:
রাশিয়া থেকে তেল কেনার নিরিখে ভারত এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভারত ছাড়াও রাশিয়া থেকে তেল কেনে চিনও। তবে ভারত ও চিনের এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় খুশি নন ট্রাম্প। ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক এবং মোদীর সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্বের কথা বললেও ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনা নিয়ে তিনি হতাশ। সেই হতাশার কথা ভারতকেও জানিয়েছেন। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর থেকেই ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। অনেকেই দাবি করেন, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বন্ধুত্বে ইতি পড়েছে। এমনকি মোদীর চিন সফরের পর ট্রাম্প এক পোস্টে দাবিও করেন, চিনের অন্ধকারে ভারতকে হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। তবে কয়েক ঘণ্টা পর নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে ভারতের দিকে ফের বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন ট্রাম্প। মোদীও জানিয়েছিলেন ট্রাম্পের ইতিবাচক বক্তব্যের প্রতিদান দেবেন তিনি। বুধবারও দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সমাজমাধ্যমের পোস্টে উঠে এসেছে বন্ধুত্ব এবং বাণিজ্যচুক্তির কথা। তবে তার পরে ট্রাম্প প্রশাসনের ১০০ শতাংশ শুল্ক-হুঁশিয়ারি বজায় রয়েছে।