বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠকে আমেরিকার উপ-বিদেশসচিব উইন্ডি শেরম্যান। ছবি পিটিআই।
বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠকে আমেরিকার উপ-বিদেশসচিব উইন্ডি শেরম্যান। ছবি পিটিআই।
আফগানিস্তানের প্রশ্নে আমেরিকা ও ভারত ‘এক লক্ষ্য, এক পথে’ চলবে। তিন দিনের ভারত সফরে এসে আজ এ কথা জানিয়েছেন আমেরিকার উপ-বিদেশসচিব উইন্ডি শেরম্যান। ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। সূত্রের বক্তব্য, শেরম্যান জানিয়েছেন, তালিবান আফগানিস্তানে সরকার গড়ার পরে সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের উদ্বেগ ওয়াশিংটন বোঝে। আফগান-নীতির ক্ষেত্রে দু’দেশ যে একসঙ্গেই চলছে— সে কথাও বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, ভারতের মতো আমেরিকাও চায়, আফগানিস্তানের সরকারে যেন সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকে। সে দেশের মাটিকে যেন সন্ত্রাসের স্বর্গোদ্যান না বানানো হয়। আর যাঁরা আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যেতে চান, তাঁদের যেন নিরাপদে সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরে পশ্চিম এশিয়ার কূটনীতিতে আমেরিকার গুরুত্ব অনেকটা কম ভারতের কাছে। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, বর্তমানে ভূকৌশলগত ভারসাম্য যা রয়েছে, আগামী দিনে তা বদলাতেই পারে। পাশাপাশি, পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে আমেরিকাকে প্রয়োজন নয়াদিল্লির। শেরম্যান এ বার ভারত সফর সেরেই যাবেন পাকিস্তানে। ফলে তালিবান সরকারে আইএসআই প্রভাব এবং হক্কানি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আশঙ্কার বিষয়টি যতটা সম্ভব বিস্তারিত ভাবে আমেরিকার কাছে তুলে ধরেছে ভারত।
রাশিয়ার থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সরঞ্জাম এই বছরেই ভারতে পৌঁছনোর কথা। কিন্তু মস্কো থেকে অস্ত্র কেনা নিয়ে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ভারতের সামনে খাঁড়ার মতো ঝুলছে। বৈঠকে শ্রিংলা আজ বিষয়টি নিয়ে ভারতের বাধ্যবাধকতার দিকটি জানিয়েছেন। পরে সাংবাদিকদের শেরম্যান জানান, ভারত ও আমেরিকা এ ব্যাপারে মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলতে পারবে বলেই আশা করেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমরা প্রকাশ্যেই বলেছি, এস ৪০০-র বিষয়টি খুবই বিপদের এবং এ নিয়ে আমাদের সতর্ক হয়ে এগোতে হবে। আশা করছি, আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারব।”
গত মাসেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ওয়াশিংটনে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এই বৈঠকে তালিবান সরকারকে নিয়ে ভারতের নির্দিষ্ট উদ্বেগের দিকটি যৌথ বিবৃতিতে রাখা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ভারত এবং আমেরিকার নতুন সরকারের মধ্যে হাতে কলমে কোনও যৌথ পদক্ষেপ করা হয়নি। আগামী মাসে দু’দেশের মধ্যে ‘টু প্লাস টু’ (বিদেশমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী) পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা। তারই ভিত তৈরি করা শেরম্যানের চলতি সফরের অন্যতম লক্ষ্য।
আফগান পরিস্থিতি ও গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা প্রসঙ্গের পাশাপাশি দু’দেশের কথা হয়েছে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও। ট্রাম্প জমানা থেকেই আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। কিন্তু এখনও আংশিক চুক্তিতে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। তবে শেরম্যান যখন দিল্লিতে, তখন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আমেরিকার শীর্ষ বাণিজ্য কর্তাদের এক প্রতিনিধি দলও ভারত সফর করছে। আগামিকাল ভারত-আমেরিকা বিজ়নেস কাউন্সিলের এক বিশেষ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার কথা শ্রিংলা ও শেরম্যানের। আমেরিকা আরও বেশি করে ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার চাইছে বলে আজ ইঙ্গিত দিয়েছেন শেরম্যান।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী আজ জানিয়েছেন, “দু’টি দেশ নিজেদের আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষ করে কথা হয়েছে আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উন্মুক্ত, উদার ও সবাইকে নিয়ে চলার দায়বদ্ধতার কথা উঠে এসেছে আলোচনায়। কোয়াডভুক্ত দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy