Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Love Jihad

ঘৃণার রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে উত্তরপ্রদেশ, যোগীকে চিঠি শতাধিক আইএএস-এর

চিঠিতে বলা হয়, ‘যে গঙ্গা-যমুনার তীরে একসময় সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল, সেই উত্তরপ্রদেশ এখন ঘৃণার রাজনীতি, বিভাজন এবং ধর্মান্ধতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে’।

যোগীকে চিঠি আইএএস অফিসারদের। —ফাইল চিত্র।

যোগীকে চিঠি আইএএস অফিসারদের। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:৫০
Share: Save:

নতুন ‘লাভ জিহাদ’ আইন নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটে চলেছে উত্তরপ্রদেশে। তা নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসন মুখে কুলুপ আঁটলেও, যোগীর রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে এ বার সরব হলেন শতাধিক প্রাক্তন আইএএস অফিসার। তাঁদের অভিযোগ, এই মুহূর্তে উত্তরপ্রদেশ ঘৃণার রাজনীতি, বিভাজন এবং ধর্মান্ধতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আর তাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে নতুন এই ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন।

অবিলম্বে ধর্মান্তরণ আইন তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উদ্দেশে একটি চিঠি দেন দেশের ১০৪ জন প্রাক্তন আইএএস অফিসার। এঁদের মধ্যে রয়েছেন দেশের প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রাক্তন বিদেশ সচিব নিরুপমা রাও এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের একসময়ের উপদেষ্টা টিকেএ নায়ার। রীতিমতো কড়া ভাষায় সেখানে বলা হয়, ‘যে সংবিধানে হাত রেখে শপথগ্রহণ করেছিলেন, তার সম্পর্কে নিজেদের জ্ঞান ঝালিয়ে নেওয়া উচিত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-সহ সমস্ত রাজনীতিকদের’।

চিঠিতে বলা হয়, ‘যে গঙ্গা-যমুনার তীরে একসময় সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল, সেই উত্তরপ্রদেশ এখন ঘৃণার রাজনীতি, বিভাজন এবং ধর্মান্ধতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলির গায়ে সাম্প্রদায়িকতার প্রলেপ পড়েছে। যে কারণে এই স্বাধীন দেশে, স্বাধীন নাগরিক হিসেবে যাঁরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন, সেই যুবসমাজের উপর নৃশংস অত্যাচার চালাচ্ছে আপনার প্রশাসন’।

আরও পড়ুন: নিষ্ফলা ছ’বারের পর আজ ফের বৈঠক, আইন রদেই অনড় চাষিরা​

হিন্দু মেয়েদের মুসলিম পরিবারে বিয়ে রুখতে দীর্ঘদিন ধরেই ‘লাভ জিহাদ’ আইনের পক্ষে মঞ্চ তৈরি করে আসছিল যোগী সরকার। শেষমেশ এ বছর নভেম্বরে অর্ডিন্যান্স জারি করে বিয়ের নামে ধর্মান্তরণরোধী আইন কার্যকর করে তাঁর সরকার। তার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুদের হেনস্থার অভিযোগ সামনে এসেছে। পুলিশ এবং প্রশাসন তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে বজরং দলের মতো কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি বিচারকের ভূমিকা পালন করে বসছে বলে অভিযোগ। মোরাদাবাদের ঘটনা যার সাম্প্রতিক উদাহরণ।

ডিসেম্বরের শুরুতে মোরাদাবাদে রশিদ আলি এবং সেলিম নামের দুই সংখ্যালঘু যুবককে বেদম প্রহারের পর থানায় নিয়ে আসেন বজরং দলের কর্মীরা। এক বছর আগে পিঙ্কি নামের একটি মহিলার সঙ্গে বিয়ে হয় রশিদের। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে ওই দিন বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে যাচ্ছিলেন রশিদ ও তাঁর ভাই সেলিম। সেখান থেকে তাঁদের তুলে আনা হয়। অভিযোগ ওঠে, হিন্দু ঘরের মেয়ে পিঙ্কিকে জোর করে বিয়ে করেছেন রশিদ। আগুপিছু না দেখেই সেই সময় রশিদ ও সেলিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পিঙ্কিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সরকারি হোমে। সেই টানাপড়েনে গর্ভপাত হয়ে যায় পিঙ্কির। বিষয়টি আদালতে উঠলে পিঙ্কি জানান, নিজের ইচ্ছেতেই রশিদকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে দু’সপ্তাহ পর জেল থেকে ছাড়া পান রশিদ।

যোগীকে লেখা চিঠিতে সেই ঘটনারও উল্লেখ করেন আইএএস অফিসাররা। একই সঙ্গে বিজনৌরের ঘটনাও উল্লেখ করা হয় যেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকজন জোর করে ধর্মান্তরণের অভিযোগ অস্বীকার করার পরেও, এক তরুণকে গত এক সপ্তাহ ধরে জেলবন্দি করে রাখা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘নিরীহ মানুষকে একদল লোক হেনস্থা করছে এবং সব কিছু দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। এর সপক্ষে কোনও যুক্তিই খাটে না। এক জন মহিলা তাঁর সন্তান হারিয়েছেন। এই ধরনের নৃশংসতা কমার কোনও লক্ষণ আপাতত দেখাই যাচ্ছে না। ধর্মান্তরণ অর্ডিন্যান্সকে ঢাল করে ভারতীয় মুসলিম এবং স্বস্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন মহিলাদের ইচ্ছাকৃত ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে’।

আরও পড়ুন: নতুন স্ট্রেনে আক্রান্ত বেড়ে ২০, তালিকায় ব্রিটেনফেরত ২ বছরের শিশুও​

প্রাক্তন আইএএস অফিসারদের চিঠির জবাবে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং যোগীর তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও সাফাই দেওয়া হয়নি। তবে এর আগে, চলতি সপ্তাহে ইলাহাবাদ হাইকোর্টেও তিরস্কৃত হয় যোগী সরকার। জোর করে ধর্মান্তরণ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে আদালত জানিয়ে দেয়, প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা নিজের পছন্দ মতো জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার এবং নিজেদের মর্জি মতো বাঁচার অধিকার রয়েছে। তাতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপকে দুই প্রাপ্তবয়স্কের মৌলিক অধিকার খর্ব বলেও উল্লেখ করে আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE