Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Love Jihad

লাভ জেহাদের ভুয়ো খবর, বরকে নিগ্রহ পুলিশের

কুশীনগরে ভিন্‌ ধর্মের যুবক-যুবতী বিয়ে করছেন এবং ‘লাভ জেহাদ’-এর ঘটনা ঘটছে বলে পুলিশের কাছে টেলিফোনে কেউ অভিযোগ করেছিলেন। এর পরেই বিয়ের আসর থেকে পাত্রপাত্রীকে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:১৩
Share: Save:

‘লাভ জেহাদ’-এর গুজবের জেরে বিয়ের আসর থেকে এক মুসলিম যুবক ও যুবতীকে থানায় নিয়ে গেল যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ। দু’জনকে আলাদা জায়গায় আটকে রেখে বেল্ট দিয়ে মারা হল যুবককে। ধর্মান্তরণের প্রমাণ না মেলায় পরে অবশ্য দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কুশীনগরে ভিন্‌ ধর্মের যুবক-যুবতী বিয়ে করছেন এবং ‘লাভ জেহাদ’-এর ঘটনা ঘটছে বলে পুলিশের কাছে টেলিফোনে কেউ অভিযোগ করেছিলেন। এর পরেই বিয়ের আসর থেকে পাত্রপাত্রীকে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কুশীনগরের যুবক, ৩৯ বছর বয়সি হায়দার আলি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেলে ২৮ বছর বয়সি শাবিলার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। সন্ধেয় সেই উপলক্ষে প্রীতি সম্মেলন চলছিল। সেই সময়েই সেখানে পুলিশ পৌঁছয়। সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই কাজিকে চলে যেতে বলা হয়। তত ক্ষণে বয়ান বদলে তিনি জানিয়েছিলেন, বিয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি। হায়দার বলেন, ‘‘পুলিশ আমাকে বেল্ট দিয়ে মারার আগে শাবিলাকে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। আমাকে কাঁদতে দেখে শাবিলা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পুলিশকর্মীরা তাঁর পরিবার সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু ভয়ে সে কিছুই বলতে পারেনি। রাত ন’টা নাগাদ আমার কথায় শাবিলা তাঁর ভাইয়ের মোবাইল নম্বর পুলিশকে দেয়।’’ এর পরে পরিবারের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, পাত্রী মুসলিম। তার পরেও পাত্রীর ভাইয়ের আসার অপেক্ষা করে পুলিশ। অভিযোগ, হায়দারকে তখন ঠান্ডার মধ্যে বারান্দায় বসিয়ে রাখা হয়।

স্থানীয় সমাজকর্মী আরমান খান জানিয়েছেন, আজ়মগড়ের বাসিন্দা শাবিলা পরিবারের সম্মতি না নিয়েই হায়দারকে বিয়ে করার জন্য কুশীনগরে পৌঁছেছিলেন। বিয়ের আসরেই হিন্দু যুব বাহিনীর সদস্যরা পাত্রপাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেন। মঙ্গলবারের সারা রাত থানায় কাটানোর পরে পরিবারের সম্মতিতেই বুধবার হায়দার ও শাবিলার বিয়ে হয়েছে।

এমন ঘটনার পরেও অবশ্য নিজেদের দোষ দেখছে না আদিত্যনাথের পুলিশ। হায়দারকে মারধর করার কথাও অস্বীকার করেছে তারা। পুলিশের দাবি, এ ভাবে বিয়ের আসর থেকে পাত্র-পাত্রীকে তুলে আনা হলেও রাজ্যে নতুন চালু হওয়া ধর্মান্তরণ বিরোধী আইনের মোটেই অপব্যবহার হয়নি। লঙ্ঘিত হয়নি মানবাধিকার। কুশীনগরের পুলিশকর্তা বিনোদকুমার সিংহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গ্রামের এক জন আমাদের জানিয়েছিলেন, মুসলিম যুবক এক হিন্দু যুবতীকে জোর করে বিয়ে করছেন। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে আমরা জেনেছি, আ‌জ়মগড়ের ওই যুবতীও মুসলিম। তাঁকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই মহিলার নিখোঁজ হওয়ার একটি রিপোর্ট পুলিশের কাছে ছিল।’’ যারা ‘লাভ জেহাদ’-এর গুজব ছড়িয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Love Jihad Uttar Pradesh Wedding
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE