বছর উনিশের রিসেপশনিস্ট অঙ্কিতা ভাণ্ডারীকে খুনের মামলায় রিসর্টের মালিক ও বিজেপি নেতার ছেলে পুলকিত আর্য ও রিসর্টের দুই কর্মী সৌরভ ভাস্কর এবং অঙ্কিত গুপ্তকে দোষী সাব্যস্ত করল উত্তরাখণ্ডের একটি আদালত। সকলেরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, রিসেপশনিস্ট হিসেবে যোগ দিলেও অঙ্কিতাকে নানা সময়ে রিসর্টে আসা অতিথিদের ‘বিশেষ পরিষেবা’ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল পুলকিতরা। সে কথায় রাজি না হওয়ার কারণেই কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় তরুণীকে খুন করে তাঁর দেহ হৃষিকেশের কাছে চিল্লা খালে ফেলে দেয় তারা।
২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বানতারা রিসর্টের রিসেপশনিস্ট অঙ্কিতার নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশে দায়ের করে পুলকিত। তদন্ত শুরু করলে ২৪ সেপ্টেম্বর চিলা খাল থেকে উদ্ধার হয় উত্তরাখণ্ডের পৌড়ির বাসিন্দা অঙ্কিতার দেহ। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়, ডুবে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে তরুণীর। তদন্তে যদিও জানা যায়, খুন করা হয়েছে অঙ্কিতাকে। ময়না তদন্তে ধস্তাধস্তি এবং মাথায় আঘাতের প্রমাণও মেলে। পুলকিত, সৌরভ ও অঙ্কিতকে এর পরে গ্রেফতার করা হয়। পুলকিত যদিও প্রথম দিকে দাবি করে, অঙ্কিতার হত্যার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। তার বাবা, বিজেপি নেতা বিনোদ আর্যও বারবার নিজের ছেলেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করে কটাক্ষের মুখে পড়েন। ২৩ সেপ্টেম্বর যদিও চাপের মুখে খুনের কথা স্বীকার করে নেয় পুলকিতরা।
তদন্ত এগোলে এ-ও জানা যায়, রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজে যোগ দিলেও মাঝেমধ্যেই অঙ্কিতাকে ভিআইপিদের জন্য ‘বিশেষ পরিষেবা’ দিতে বলা হত। কখনও তাঁকে ১০ হাজার টাকার প্রলোভন দেখাত পুলকিতরা। কখনও আবার নানা ধরনের হুমকি দিত। প্রতিবারই তা নাকচ করে দিতেন অঙ্কিতা। ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তেমনই তর্কাতর্কির সময়ে পুলকিতরা তরুণীকে মারধর করে খুন করে। দেহটি চিলা খাল থেকে ফেলে দিয়ে থানায় গিয়ে অঙ্কিতার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জানায় যাতে সন্দেহ তাদের উপরে না এসে পড়ে। তবে অঙ্কিতার এক বন্ধু পুষ্প দাবি সে সময়ে করেন, তরুণীকে হোটেলের মালিক ও কর্মীরা কোনও কারণে হেনস্থা করছিল ও ভয় দেখাচ্ছিল। এ-ও জানান যে ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার পরে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি অঙ্কিতার সঙ্গে। পুলকিতে সে সময় যোগাযোগ করা হলে সে বলে, অঙ্কিতা কাজ শেষ করে নিজের ঘরে চলে গিয়েছে। অন্য কর্মীরা আবার বলে, অঙ্কিতা জিমে শারীরচর্চা করছে। রিসর্টের রাঁধুনী যদিও জানান, অঙ্কিতাকে তিনি দেখেননি। কারও সঙ্গে কারও কথায় মিল না পেয়ে অবশেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন পুষ্প ও অঙ্কিতার পরিবার। ২৩ সেপ্টেম্বর অঙ্কিতাকে খুন করার কথা স্বীকার করে পুলকিতরা। ২৪ তারিখ দেহ উদ্ধার হলে গ্রেফতার করা হয় তাদের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)