Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Uttarakhand

‘হুইস্‌লে মনে হল, আগুন’

সাত ঘণ্টা ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে কোনও মতে গভীর সুড়ঙ্গ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁচড়ে মুখ অবধি এসেছিলেন রাজেশ কুমারেরা। কিন্তু সেই মুখ কোথায়? শুধু পাথর আর কাদা। বন্ধ সব রাস্তা!

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:৫৫
Share: Save:

বাইরের গুমগুম আওয়াজটা থেমেছে অনেক ক্ষণ। পাথর গড়ানোর শব্দও বন্ধ। কিন্তু তপোবন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের গভীর, আলোহীন সুড়ঙ্গের মধ্যে তত ক্ষণে রাজেশ-সন্তোষের মতো ডজন খানেক শ্রমিক দিশাহীন। সুড়ঙ্গে জল ঢোকার পর কেটে গিয়েছে প্রায় সাত ঘণ্টা। একে প্রচণ্ড ঠান্ডা, তায় সকাল থেকেই জল-কাদায় মাখামাখি শরীর। হাঁটু ভর্তি কাদায় আটকে শরীরগুলি কাঁপছে থরথরিয়ে। জবাব দিতে চাইছে শরীর। মানসিক ভাবে তত ক্ষণে ভেঙে পড়েছেন দলের কম-বেশি সকলেই। কারণ সবার একটাই প্রশ্ন “সুড়ঙ্গের মুখটা কোথায় গেল?” সাত ঘণ্টা ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে কোনও মতে গভীর সুড়ঙ্গ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁচড়ে মুখ অবধি এসেছিলেন রাজেশ কুমারেরা। কিন্তু সেই মুখ কোথায়? শুধু পাথর আর কাদা। বন্ধ সব রাস্তা!

নির্মাণস্থলের পরিযায়ী শ্রমিকদের রবিবার থাকে না। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতোই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সুড়ঙ্গে কাজ করতে ঢুকেছিলেন রাজেশেরা। সকাল দশটা, ভিন্ন মতে সাড়ে দশটায় আপৎকালীন হুইস্ল গমগম করে ওঠে অর্ধনির্মিত সুড়ঙ্গের দেওয়াল বেয়ে। জোশীমঠের বাসিন্দা রাজেশের কথায়, “সুড়ঙ্গের মুখ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো মিটার ভিতরে কাজ করছিলাম। হুইস্ল শুনে ভাবলাম আগুন লেগেছে। শুনলাম কেউ চেঁচাচ্ছে, বাহার নিকলো, বাহার নিকলো! দৌড় দিলাম সুড়ঙ্গের মুখের দিকে। দেখি জল ঢুকছে হু-হু করে। এগোনো অসম্ভব।”

রাজেশের মতো নেপালের লাল বাহাদুর, বসন্ত বাহাদুর, বিনোদ সিংহও জল ঢুকছে দেখে আর এগোনোর চেষ্টা করেননি। সুড়ঙ্গের দেওয়ালের গা বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা শুরু করেন। বিনোদের কথায়, লোহার খাঁচা ছিল দেওয়ালে। তাই ধরে প্রাণ বাঁচাতে যতটা সম্ভব উপরে উঠতে শুরু করি।” রাজেশদের কপাল ভাল যে জল অতটা ওঠেনি। সে ভাবেই বাদুড় ঝোলা হয়ে কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। এক সময়ে কমে আসে প্রকৃতির রোষ। নামতে শুরু করে জল। তত ক্ষণে মেঝে ভরে গিয়েছে থকথকে কাদা আর বোল্ডারে। তার মধ্যেই দেওয়াল ধরে ধরে সুড়ঙ্গের আন্দাজেই এগোতে থাকেন রাজেশ-চিত্র বাহাদুরেরা। এক সময়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়। চারপাশে অন্ধকার। সুড়ঙ্গ জুড়ে আর্তনাদ, সাত ঘণ্টায় মোবাইলের ব্যাটারিও জবাব দিতে শুরু করেছে।

রাজেশ বলেন, “এক সময়ে আর এগোনোর জায়গা নেই। সামনে পাথরের দেওয়াল। হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।” ইতিমধ্যে সুড়ঙ্গ মুখে খোঁজাখুজি শুরু করেন জওয়ানেরা। তাঁদের চেষ্টায় পাথরের দেওয়ালে চিড় ধরে। সামান্য হলেও বিকেলের আলো ঢোকে সুড়ঙ্গে। রাজেশ বলেন, “আলো দেখে নিশ্চিত হই, অন্তত বাতাসের অভাবে মরব না।” ততক্ষণে বিনোদ কুমারের মোবাইলে ফিরেছে বিএসএনএলের টাওয়ার। তাই দিয়েই খবর পাঠানো হয় সংস্থায়। সোমবার জোশীমঠে আইটিবিপি-র হাসপাতালে বসে বিনোদ বলেন, “ধীরে ধীরে কাদা-মাটি খুঁড়ে একে একে উদ্ধার করেন জওয়ানেরা। যখন সুড়ঙ্গে ঢুকেছিলাম তখন ছিল দিনের আলো, যখন বের হলাম তখন সন্ধ্যার অন্ধকার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarakhand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE