Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Viral

মুম্বইয়ের ‘দবং মহিলা’ বিশ্বের সব নারীর অনুপ্রেরণা হতে পারেন

আমার তৃতীয় সন্তানের জন্মের পর আমার স্বামী আমাদের দেখভাল করতে অস্বীকার করে। সে শুধু আমার সঙ্গে সহবাস করতে চেয়েছিল। যখন তার সেই চাহিদা মিটে যায় সে তিন তালাক দিয়ে দেয় আমাকে

শিরিন। ছবি: হিউম্যানস অফ বম্বে পেজ থেকে নেওয়া।

শিরিন। ছবি: হিউম্যানস অফ বম্বে পেজ থেকে নেওয়া।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ২০:৩৮
Share: Save:

প্রতিটি মানুষের জীবনেই কঠিন সময় আসে। কেউ হেরে যায়, কেউ লড়াই করে এগিয়ে যায়। তবে একের পর এক প্রিয়জনের মৃত্যু, বিবাহ বিচ্ছেদ, তিন সন্তান, যাদের মধ্যে একজনের বয়স মাত্র তিন মাস, তাদের নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসে অটোরিকশা চালিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়, মুখের কথা নয়। এমনই করে দেখিয়েছেন মুম্বইয়ের ‘দবং মহিলা’। হ্যাঁ এক মহিলা!

শিরিন, কোনও পদবি ব্যবহার করেন না, অটোরিকশা চালান মুম্বইয়ের রাস্তায়। মুম্বইয়ের একটি ফেসবুক পেজ ‘হিউম্যানস অফ বম্বে’ তাঁর কাহিনী সকলের কাছে তুলে ধরেছে। সেখানেই শিরিন তাঁর ভাষায় জানিয়েছেন জীবনের, লড়াইয়ের কাহিনী।

শিরিন লিখেছেন-

“আমি রক্ষণশীল এক মুসলিম পরিবারে জন্মাই। নিত্যদিন বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। আমার বয়স যখন ১১ বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচ্ছেদের পর মা আবার বিয়ে করেন। মা যা ঠিক মনে করতেন তাই করতেন। আর মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের জন্য মাকে চারপাশের পুরুষদের তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়তে হত। একবার ভাইকে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছিলেন মা। সেখানে ওদের ঘিরে ধরে আমাদের সম্প্রদায়ের কিছু লোক। তীব্র কটাক্ষ করে তারা। এমনকি মায়ের চরিত্র নিয়ে অপমান করে। ওই লোকগুলি আমার ভাইকেও গালিগালাজ করে, যা আমার মায়ের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। মায়ের মানসিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, সেই রাত্রেই মা গায়ে আগুন দেন। মাকে হারানো জীবনে সব থেকে কঠিন পরিস্থিতি ছিল। তাও আমরা বাঁচার চেষ্টা করি। এক বছরের মধ্যেই আমাদের দুই বোনের বিয়ে দিয়ে দেন বাবা।

আমার বোনের ওপর তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পণের জন্য চাপ দিতে থাকে। বোন যখন গর্ভবতী ছিল তখন তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে বিষ খাইয়ে দেয়। এই ঘটনা পুরোপুরি আমাকে ভেঙে দেয়। আমি আমার জীবনের সব থেকে প্রিয় দু’জনকে হারালাম। আমি তখন গর্ভবতী, কিছুদিন পরই আমার ছেলে জন্মায়। তার জন্যই আমাকে বাঁচতে হত।

আরও পড়ুন : রাম কপূরের নতুন লুক ভাইরাল, আগেই নাকি বেশি ভাল লাগতো!

আরও পড়ুন : ঘরের খাবার খেতে বলছে জোমাটো, কেবল টিভি দেখতে বলছে অ্যামাজন প্রাইম!

স্বামীর সঙ্গে আমার ঝগড়া শুরু হতে লাগল। আমার তৃতীয় সন্তানের জন্মের পর আমার স্বামী আমাদের দেখভাল করতে অস্বীকার করে। সে শুধু আমার সঙ্গে সহবাস করতে চেয়েছিল। যখন তার সেই চাহিদা মিটে যায় সে তিন তালাক দিয়ে দেয় আমাকে। আমাকে তিনটি সন্তান নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হয়।

তিন সন্তান নিয়ে আমি তখন রাস্তায় একা। একটি বিরিয়ানির দোকান তৈরি করি আমি। কিন্তু একদিন পুরসভা সেটাও ভেঙে দেয়। আমার স্বামী অটোরিকশা চালাত। আমিও সিদ্ধান্ত নিই অটোরিকশা চালানোর।

অটোরিকশা থেকে ভালই আয় হতে লাগল, সেই সঙ্গে বহু মানুষের হেনস্থা, নির্যাতন, অপমান সহ্য করতে হত। মহিলা বলে অনেকেই আমাকে ভরসা করতে পারতেন না। অন্য অটোচালকদের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে আমাকে। কিন্তু কোনও কিছুকেই গুরুত্ব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই আমি।

গত একবছর ধরে আমার আয়ে সংসার চলছে। আমার সন্তানদের সব আবদার মেটাই আমি। আমি তাদের একটা গাড়ি কিনে দিতে চাই, হয়তো শীঘ্রই সেটা দিতে পারবো।

আমার অটোরিকশার অনেক যাত্রীর আচরণ আমায় গর্বিত করে, কেউ আমার জন্য করতালি দেন, এমনকি কেউ কেউ বুকে জড়িয়ে ধরেন আমাকে। একবার আমার মনে আছে, এক ব্যক্তি অটোতে উঠে আমাকে মহিলা বলে বুঝতেই পারেননি, ভাই বলে সম্বোধন করেন। কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারেন, আমাকে ‘দবং মহিলা’ বলে সম্মোধন করেন। আমি নিজেও জানি আমি তাই। আমি চাই আমার মতো অন্য নারীরাও এমন দবং হোক।

মহিলারা সব কিছু করতে পারেন- অন্যের তৈরি করা নিয়মে তাঁদের বাঁচার প্রয়োজন নেই। আমি চাই না আমার মা বা বোনের মতো কষ্ট কেউ পাক। তাই যখন কোনও যাত্রী আমার সন্তানদের জন্য আমাকে আশীর্বাদ করেন, আমার প্রশংসা করেন, তখন আমি ভাবি, আমি যা করছি তা আমার জন্য নয়, এটা সেই সব নারীর জন্য যাঁরা মুখ বুঝে সব কিছু সহ্য করছেন।”

শিরিনের এই কাহিনী এখন ইন্টারনেটে ভাইরাল। হাজার হাজার মানুষ তাঁর প্রশংসা করছেন। নেটিজেন তাঁর লড়াইকে করছে কুর্নিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE