E-Paper

বুধে পেশ ওয়াকফ বিল, পাশ করানো নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব

আগামী শুক্রবার সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হচ্ছে। তাই আগামী বুধবারই ওই বিলটি লোকসভায় আনার কথা ভাবছে কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩০

— প্রতীকী চিত্র।

আগামী ২ এপ্রিল সংসদে পেশ হতে চলেছে সংশোধিত ওয়াকফ বিল (২০২৫)। আজ এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় তথা সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। এ দিকে যে ভাবে আজ ইদের দিনে ওই বিলের প্রতিবাদে মুসলিম সমাজের একাংশ কালো ব্যান্ড পরে পথে নেমেছিলেন, তাতে অস্বস্তি বেড়েছে শাসক শিবিরে। রিজিজুর মতে, পরিকল্পিত ভাবে ভুল বোঝানো হচ্ছে মুসলিম সমাজকে। তাই তাঁরা পথে নামছেন।

আগামী শুক্রবার সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হচ্ছে। তাই আগামী বুধবারই ওই বিলটি লোকসভায় আনার কথা ভাবছে কেন্দ্র। শাসক শিবিরের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে অধিবেশন মুলতুবি হওয়ার আগে দু’কক্ষে ওই বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়ার জন্য তিন দিন সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু বিলটি নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতো শরিক দলের নেতাও মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে সরব হয়েছেন। একই যুক্তিতে সরব বিরোধীরাও। তৃণমূল এর মধ্যেই হুইপ জারি করে নিজেদের সাংসদদের জানিয়েছে, ভোটাভুটি হলে কক্ষে উপস্থিত থেকে বিলের বিপক্ষে ভোট দিতে হবে।

সামনেই বিহার নির্বাচন। বিহারের প্রায় ১৭ শতাংশ মুসলিম ভোট রয়েছে। এই সময়ে ওয়াকফ বিল পাশ হলে তাঁর নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কে যে ফাটল ধরতে চলেছে, সে বিষয়টি বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন নীতীশ। সে কথা তিনি জানিয়েছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে। তাই এই মুহূর্তে দলের একটি বিকল্প চিন্তা হল, চলতি অধিবেশনে বিলটি পেশ করা হলেও, তা পাশ করানোর পথে না হেঁটে বিলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেলে রাখা। যাতে বিলটি নিয়ে মুসলিম সমাজ বিরোধিতার পথে হেঁটে হইচই বাধাতে না পারে। কিন্তু এতে সমস্যা হল, ওই পথে হাঁটলে তৃতীয় মোদী সরকারের শরিক নির্ভরতা আরও স্পষ্ট হয়ে পড়বে। সংখ্যার অভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে দুর্বল, সেই বার্তা যাবে জনমানসে। বিহার ভোটের আগে ওই বার্তা গেলে ওই রাজ্যে কর্মী-সমর্থকেরা মুষড়ে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাই যাবতীয় বিরোধিতা সত্ত্বেও বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী শাসক শিবিরের বড় অংশ। তাঁরা মনে করছেন, বিলটি নিয়ে সংসদে আলোচনা শুরু হলে এতে যে মেরুকরণের হাওয়া উঠবে, তাতে বিহারের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সুবিধে হবে তাঁদের।

গত বছরের অগস্টে ওই বিলটি লোকসভায় পেশ করেই তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-এর কাছে পাঠিয়ে দেয় সরকার। চলতি
বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বে ওই বিলে বেশ কিছু পরিবর্তনের পরে তা ফের সংসদে জমা দেয় জেপিসি। ফলে নতুন করে বিলটি ইদের পরে সংসদে পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিলটি মুসলিমদের স্বার্থবিরোধী, ওই যুক্তিতে ইতিমধ্যেই বিরোধিতায় এগিয়ে এসেছে মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড-সহ একাধিক সংগঠন। এরই মধ্যে আজ ল’বোর্ডের পরামর্শ মেনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাতে কালো ব্যান্ড পরে ইদের নমাজে অংশ নেন মুসলিমেরা। যা অস্বস্তি বাড়িয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। উস্কে দিয়েছে সিএএ নিয়ে হওয়া বিক্ষোভের স্মৃতিকে।

তবে আজ কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে সরকারকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া। সংগঠনের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলকে ওই বিলটি সমর্থনে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে। সংগঠনের যুক্তি, ওয়াকফ বোর্ড পুরনো নিয়মকে সামনে রেখে কেরলের মুনমবাম এলাকার ৬০০ খ্রিস্টান পরিবারের জমি ওয়াকফ সম্পত্তি বলে দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের দাবি, এই ধরনের সমস্যা চিরতরে সমাধানে সব দলের এগিয়ে আসা উচিত।

সংখ্যালঘু সমাজকে বোঝাতে মাঠে নেমেছে সরকারও। ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে যাঁদের কায়েমি স্বার্থ রয়েছে, তাঁরাই সাধারণ মুসলিমদের ওই বিল সম্পর্কে ভুল বোঝাচ্ছে— দাবি রিজিজুর। তিনি বলেন, ‘‘কিছু ব্যক্তি ও দল পরিকল্পিত ভাবে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। দেশে বাক্‌স্বাধীনতা থাকলেও, এ ভাবে মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা অনুচিত।’’ বরং সংসদে আলোচনায় ‘প্রকৃত সত্য’ তুলে ধরুন, বিরোধীদের পরামর্শও দিয়েছেন রিজিজু।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Waqf Bill Waqf Board Lok Sabha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy